এবার তাহলে আসল কথায় আসা যাক। ভারতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। গোটা দেশ আতঙ্কিত। রোগের হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে মৃত্যুর হারও। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝাপটায় যখন দেশবাসীর নাভিঃশ্বাস উঠেছে ঠিক তখনই তৃতীয় ঢেউয়ের আগাম খবর দিয়ে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের আগাম সতর্কতা, এবছরের শেষের দিকেই হয়তো ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আক্রমণ শুরু হবে। আর সেই আক্রমণের প্রধান শিকার হতে পারে শিশুরা।
এসবিআই রিপোর্টের সাম্প্রতিক দাবি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই করোনার তৃতীয় ঢেউও মারাত্মক আকার নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে রোগভোগের দিন সংখ্যা ১০৮ থেকে কমে হতে পারে ৯৮। আর এই তৃতীয় ঢেউয়ের প্রধান শিকার হতে পারে শিশুরা। ফলে এখন থেকেই অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সহজে এড়ানো না গেলেও টীকাকরণ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির ফলে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ছোটোদের আক্রান্তের হার বেশি হতে পারে বটে, তবে এখনও পর্যন্ত দেশে কিন্তু ছোটোদের টীকারণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। আর এই চিন্তাতেই এখন থেকেই ছোটোদের ওষুধ খাওয়াতে শুরু করে দিয়েছেন মা-বাবারা। বলছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা।
সন্তানের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মা-বাবারা। যদিও শিশু চিকিৎসকদের পরামর্শ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান। আগ বাড়িয়ে আন্দাজমতো ওষুধ খাওয়াতে শুরু করলে ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। আর টিভির বিজ্ঞাপন থেকে দিনরাত হেল্থ ড্রিঙ্ক খাওযানোরও কোনও দরকার নেই। হেল্থ ড্রিঙ্কে স্টেরয়েড থাকে। অতিরিক্ত স্টেরয়েড শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত
লকডাউনের কারণে ছোটোদের রোজদিনকার রুটিনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। ভোরে ওঠার অভ্যাস চলে গেছে। এখন ঘুম হয় অনেকটা বেলা পর্যন্ত। বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়। খেলাধুলোও একরকম বন্ধ। খাওয়া ঘুম নিয়ম মেনে হচ্ছে না। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই অনিয়মের ফলেই শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। তাই তাঁদের পরামর্শ যে, ছোটোদের দিনের রুটিন বেঁধে দিন। ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলো, ঘুমিয়ে পড়া সবকিছু হবে নিয়ম করে ঘড়ির কাঁটা ধরে। ঠিক আগে স্কুল থাকাকালীন যেমন হত। এই নিয়ম ছোটোদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।
ওষুধ নয়, খাবার খাওয়ান
তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রমণের কথা শুনেই সন্তানকে ইমিউনিটি বাড়ানোর ওষুধ খাওয়াতে শুরু করছেন অভিভাবকরা। এই অভ্যাস আগে ত্যাগ করুন। তার চেয়ে পুষ্টিকর খাবার, দুধ, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম খাওয়ান। নিয়মিত খেলাধুলো করান। জাঙ্কফুড একেবারে বন্ধ করে দিন। মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছে হলে বাড়িতেই তৈরি করুন।
ফোন নয়, ঘুম দরকার
সন্তানের মোবাইল ফোন নিয়ে খেলার অভ্যাসটি আগে বন্ধ করুন। মোবাইল ঘেটে সময় নষ্ট না করে ঘুম এবং খেলাধুলোয় সময় কাটাতে উৎসাহ দিন। ওদের প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম ছোটোদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একই কাজ করে খেলাধুলো এবং শারীরিক কার্যকলাপ।
ঘরোয়া টোটকার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘরোয়া টোটকা যেমন হলুদ দেওয়া গরম দুধ, লেবু-পাতিলেবুর জল, চ্যবনপ্রাশ ইত্যাদি খাওয়ান। তবে কোনোটাই মাত্রা ছাড়াবেন না। এসবে শরীর গরম হয়ে যায়। পেটেল গোলোযোগও দেখা দেয়।
দুধ-দই-ছানা
নিয়মিত দুধ-দই-ছানা খাওয়া অভ্যাস করান। এতে এনার্জি বাড়ে। শরীর শক্ত হয়।
খেলাধুলো মাস্ট
নিয়ম করে খেলাধুলো করতেই হবে। বাইরে বেরোনোর দরকার নেই, বাড়ির ছাদে, ড্রইংরুমে, উঠোনে বা বাগানে খেলার ব্যবস্থা করে দিন। বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে এখন দেখা করতে পারছে না, তাই নিজেরাই ওর খেলার সঙ্গী হন। এতে আপনারও শরীর চর্চা হযে যাবে।
বড়রা সচেতন হোন
বাড়িতে ছোটো সদস্য থাকলে বড়রা আগে সচেতন হন। ছোটোরা কথা শোনে। কান্নাকাটি, জেদ করার পরও বাইরে বেরোয় না। কিন্তু বড়রা কিন্তু সে সবের ধার ধারে। দোকান, বাজারের ছুতোয় বাইরে থেকে ঘুরে আসেন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ও যদি এসব চালিয়ে যান তাহলে বাড়ির ছোটো সদস্যটিকে আর রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারবেন না। ছোটো সদস্যকে রোগের হাত থেকে বাঁচাতে হাত ধোওয়া, স্যানিজাইজারের ব্যবহার, নিয়মিত জামাকাপড় কাচা, মাস্ক পরে থাকার মতো নিয়মগুলি মানতেই হবে।
রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে ছোটোদের ওদের মতো করে বোঝান। এভাবেই রোগকে আটকে রাখা যাবে। তাই আগে থেকে আন্দাজে ওষুধ খাইয়ে ছোটোদের ক্ষতি করবেন না।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-07 16:41:19
Source link
Leave a Reply