হাইলাইটস
- বাচ্চাদের বোঝান যে, রাগ নিয়ন্ত্রণে না-রাখার কারণে, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- প্রয়োজন পড়লে বাচ্চাদের সঙ্গে বসে তাঁদের চিন্তা ও রাগ দূর করার পরিকল্পনা করুন।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানান তথ্য লাভ করতে পারছে বাচ্চারা। দৈনিক জীবনে করোনার প্রভাবও তাঁদের জানা। করোনার কারণে এই নতুন জীবনযাপন প্রণালী বাচ্চাদের করে তুলছে রাগী ও খিটখিটে। তবে রাগ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এটি থাকলে এবং মন শান্ত না-হলে গভীর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাচ্চাদের রাগ, খিটখিটে মেজাজ ও আক্রমণাত্মক স্বভাবের নানান কারণ রয়েছে
১. হতাশা এর প্রধান কারণ। বাচ্চারা যা চায়, তা না-পেলে ক্রমশ তাঁদের ব্যবহারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
২. জেনেটিক্স ও অন্যান্য জৈবিক কারণ রাগ ও আক্রামক স্বভাবের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে পরিবেশেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
৩. বাচ্চাদের মধ্যে রাগের সমস্যা সমাধানের জন্য মা-বাবাকে প্রথমে তাদের রাগের কারণ বুঝতে হবে। এর জন্য ধৈর্য সহকারে বাচ্চাদের কথা শুনতে হবে অভিভাবকদের।
বাচ্চারা নিজের রাগ কী ভাবে ব্যক্ত করে?
১. কোনও কিছু এড়িয়ে যাওয়া বা বারণ করা থেকে এর সূচনা হয়। কোনও বিষয় উপেক্ষা করা, ভ্রম, ভয়ের মতো প্রতিক্রিয়া পেলে এটি বোঝা যেতে পারে। স্কুল বন্ধ হওয়ার ফলে অনলাইন ক্লাস বাচ্চাদের সমস্যায় ফেলেছে এবং একটি ভ্রম সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল ডিস্টেনসিংয়ের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশাও বন্ধ। কোথাও ঘুরতে যাওয়াও ঝুঁকি নেওয়ারই সমান। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের স্বভাবও প্রভাবিত হচ্ছে।
২. এ সময় বাচ্চারা রেগে যাচ্ছে। হতাশ ও চিন্তিত হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলি বেরিয়ে আসছে। করোনার কারণে বাচ্চারা নিজের বন্ধু ও শিক্ষকদের থেকে উপেক্ষা অনুভব করতে পারেন। নিজের জীবনে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের অভাব অনুভব করতে পারেন। ঘর ও পরিবারের সমর্থন লাভ না-করার ফলে বাচ্চারা দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ স্কুল ও বন্ধুদের কাছ থেকে অধিক সহযোগিতা পেত তারা। জীবনের কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলার অভিজ্ঞতা বাচ্চাদের মধ্যে থাকে না। এর ফলে তাঁরা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিছানায় প্রস্রাব করা, ভালো ভাবে ঘুমোতে না-পারা, আঙুল চোসা, রাগ দেখানো, ট্যান্ট্রাম দেখানোর মাধ্যমে তাঁরা নিজের মানসিক অবসাদ ব্যক্ত করে থাকে।
৩. করোনার কারণে জীবনে আগত এই নতুন পরিস্থিতির সাহায্যে অভিভাবকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে শিশুরা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, কোনও বাচ্চা হাত স্যানিটাইজ করতে না-চাইতে পারে। তখন তাঁদের বেশি জোর-জবরদস্তি করলে বলেতেই পারে যে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে দিলে তাঁরা হাত স্যানিটাইজ করবে।
৪. হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া একটি গভীর ও চিন্তাজনক পরিস্থিতি। হেল্পলেস অনুভব করলে এমনটি হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। এ সময় বাচ্চারা একা থাকতে পছন্দ করেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে চান না এঁরা। খেলাধুলো না-করা, সকলের সঙ্গে মেলামেশা না-করার চেষ্টা করেন।
৫. এ সময় বাচ্চারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। নতুন জীবনযাপন, সত্যতা, জীবনের পরিস্থিতির গুরুত্বও অনুভব করে তারা।
এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কী করা উচিত
১. বাচ্চাদের বোঝান যে, রাগ নিয়ন্ত্রণে না-রাখার কারণে, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. প্রয়োজন পড়লে বাচ্চাদের সঙ্গে বসে তাঁদের চিন্তা ও রাগ দূর করার পরিকল্পনা করুন।
৩. বাচ্চাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। অভিভাবকদের এ সময় আরও অনুভূতিপ্রবণ হতে হবে।
৪. যুক্তিসঙ্গত চিন্তাভাবনার পাশাপাশি সহানুভূতি, সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য বিকশিত করুন। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রিত করে সংযমী হন এবং স্বীকার করুন যে, তৎক্ষণাৎ সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর ফলে বাচ্চাদের রাগ ও রাগের তীব্রতা কমাতে পারবেন।
৫. যে সমস্ত কারণে বাচ্চারা রেগে যাচ্ছেন, তাঁর একটি তালিকা তৈরি করুন। তার পর প্রতি সপ্তাহে তালিকা মিলিয়ে তাঁদের ব্যবহারের ওপর লক্ষ্য রাখুন।
৬. বাচ্চাদের প্রশংসা করুন, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দিন। এর ফলে তারা উৎসাহিত বোধ করবে।
৭. নানান ভাবে বাচ্চাদের রাগ শান্ত করা যায়। সৃজনশীল কার্যকলাপে মনোনিবেশ, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে রাগ থেকে তাঁদের বিচ্যুত করা যায়। বাচ্চাদের ১-১০০ পর্যন্ত গুণতে বলতে পারেন, এর ফলে রাগ কমানো সহজ হবে।
৮. করোনা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য তাদের দিন। ভুল তথ্যের কারণে চিন্তা বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। তাই সঠিক তথ্য প্রদান করে তাদের দুশ্চিন্তা দূর করুন।
৯. দৈনিক জীবনযাপনে অপ্রত্যাশিত বাধার কারণে বাচ্চারা নিজেদের ঠকে যাওয়া মনে করতে পারেন। এই মানসিকতার কারণে তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে পারে।
১০. বাচ্চাদের নিজের দৈনন্দিন কিছু কাজ নিজেই করতে দিন। এক ফলে অবসাদ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
১১. বাচ্চাদের কাছ থেকে অধিক প্রত্যাশা করবেন না।
১২. বাচ্চাদের মস্তিষ্ক নমনীয়। প্রিয়জনদের সমর্থনে তাঁরা সহজে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে।
১৩. তাদের সঙ্গ দিতে এবং প্রয়োজনের সময় পথ প্রদর্শন করতে প্রস্তুত থাকা উচিত।
১৪. বাচ্চাদের আশপাশে ভালোবাসা, যত্ন ও সুখের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
১৫. তাদের বোঝাতে হবে, যে তারা নিরাপদে আছে।
১৬. নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে তাদের। এর ফলে আপনার সন্তানের অবসাদ, চিন্তা ও রাগ দূর হবে।
১৭. আঁকা, লেখালেখি, ক্রাফ্ট, ফটোগ্রাফি, নাচ, গানের মাধ্যমে নিজের মনের অনুভূতি ব্যক্ত করার সুযোগ ও সুবিধা দিতে হবে তাদের।
১৮. মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনারা হাসলে বাচ্চাও আপনার সঙ্গ সঙ্গে হাসবে। আবার আপনারা সব সময় রাগ দেখালে, এটিও অজান্তে তাদের স্বভাবের অংশ হয়ে উঠবে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-28 17:26:22
Source link
Leave a Reply