মাটির প্রদীপের শিখা দুলছিল মৃদু ছন্দে, ছড়াচ্ছিল স্নিগ্ধ আলো। প্রদীপের পাশে পানিভর্তি মাটির সানকিতে রাখা ফুলগুলো ছড়াচ্ছিল সুবাস। এর মধ্যে মাটির ফলকের রাজা, পেয়াদা, হাতি, ঘোড়া—চরিত্রগুলো পরিবেশটাকে করে তুলেছিল রহস্যময়।
৩ থেকে ৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে হয়ে গেল ‘টেরাকোটা’র এই প্রদর্শনী।
প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যগুলো ফুটে উঠেছিল পোড়ামাটির ফলকে। শুকপাখি হাতে রাজা, পাইক-পেয়াদাসহ অশ্বারোহী রাজবহর, কাঠঠোকরা, সজ্জিত কুমারী, দেবী দূর্গার তেজ, বুদ্ধদেবের শান্ত-সৌম্য চেহারা, শিলালিপি, পদ্মাসনে বসা দেবমূর্তি, লজ্জাবনত নারীমুখ, নৌকাবাইচ, ফুল-পাখি—সবই ফুটে উঠেছিল। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ নাদিমুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হলো টেরাকোটা। সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকেই পোড়ামাটির ফলকে সাজিয়েছে মন্দিরের দেয়াল, মসজিদ, ঘর। এখনো মানুষ এ শিল্পটির সৌন্দর্যে অভিভূত। তাই অতীতের কিছু আদিরূপ ও বর্তমানের খোদাইশিল্পের সমন্বয়ে টেরাকোটাকে নতুন রূপ দিয়েছি।’
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আরও ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন রফিকুন নবীসহ খ্যাতিমান শিল্পীরা। চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের তিন শিক্ষক এবং এই বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছয়জন শিক্ষার্থী এ প্রদর্শনীতে অংশ নেন। তাঁরা হলেন মো. রবিউল ইসলাম, স্বপন কুমার শিকদার, আজহারুল ইসলাম শেখ, মোহাম্মদ নাদিমুজ্জামান ভূঁইয়া, সানজিদা মেহেরীন, সুমন কুমার বড়াল, রাজীব কুমার সাহা, মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ও সৌমিত্র বিশ্বাস।
পোড়ামাটির কাজকে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয় এ প্রদর্শনীর।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০১০
Leave a Reply