শুধু এক ফালি চমৎকার হাসি যেকারো খুশীর বহিঃপ্রকাশে যথেষ্ট। কিন্তু এমন মনভোলানো হাসির জন্য প্রয়োজন দু’পাটি ঝকঝকে দাঁত। ব্যস্ততার অজুহাতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অনেক সময় আমরা দাঁতের যত্নে অবহেলা করি। আর তার খেসারত দিতে হয় শেষ বয়সে। অথচ একটু যত্নবান হলেই আমরা সহজেই শত ব্যস্ততার ভিড়েও দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়া সম্ভব। শরীরের এমন অপরিহার্য অঙ্গ নিয়েই থাকছে আলোচনা, লিখেছেন তাহমিনা শারমিন।
চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো দাঁতে যত্ন সবসময় ঘরেই করতে হয়। দাঁতের যত্নে কোনো অতিরিক্ত কোর্স করার দরকার নাই। কেবল বাড়িতে বসে নিয়ম মাফিক দাঁতের কিছু যত্ন-আত্তি করলেই দাঁত ভাল রাখা যায়। দাঁতের যত্নে প্রধান করণীয় হলো দাঁতের প্লাক পরিষ্কার করে রাখা। প্লাক হলো এক ধরনের স্বচ্ছ ব্যাকটেরিয়া লেয়ার যা দাঁতের উপরে লেগে থেকে দাঁতের ক্ষতি সাধন করে থাকে। এই প্লাক পরিষ্কার করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো দিনে অন্তত দুবার দাঁত মাজা এবং একবার মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা। দাতের সাথে মাড়ির সংযোগস্থলটিকে সচল ও সুস্থ রাখার জন্যও দাঁত মাজা জরুরি। টুথপেস্ট কেনার সময় খেয়াল রাখুন আপনার ব্যবহৃত টুথপেস্টে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্লোরাইড থাকে। কারণ ফ্লোরাইড দাঁতে গর্ত তৈরি রোধে সহায়তা করে। গড়ে প্রায় ১০ জনে ১জন মানুষের দাঁতে টারটার নামে এক ধরনের শক্ত আবরণ তৈরি হতে দেখা যায়। এই আবরণ খুব শক্ত হয়ে উঠতে পারে যা পরিষ্কার করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এটা প্লাকেরই একটা পরিণত অবস্থা। তাই প্রতি নিয়ত দাঁত মেজে রেখে টারটার নামক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যখন টারটার জমে যায় তখন একটু বেশী সময় ধরে প্রতিদিন দাত মেজে, এন্টি টারটার টুথপেস্ট ব্যবহার করেও টারটার থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
ফ্লোরাইড সাপলিমেন্ট
পৃথিবীর অনেক শহরে খাবার পানির সাথে ফ্লোরাইড মিশিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমাদের দেশে খাবার পানি কখনোই ফ্লোরাইড এর জন্য সহায়ক নয়। তাই আমাদের উচিৎ ফ্লোরাইড সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা। বাজারে এধরনের নানান পানীয় ও ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তবে এর জন্য অবশ্যই আগে কোনো দন্ত চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন।
দাঁত মাজার সঠিক উপায়
দাঁতের যত্নে অন্যতম করণীয় দাত মেজে দাত পরিষ্কার রাখা। কিন্তু সঠিক ভাবে দাঁত মাজতে না পারলে এই দাঁত মাজা উপকারের তুলনায় অপকারই বেশী করবে। তাই দাঁত সবসময় সঠিক ভাবে মাজা উচিৎ। ২ মিনিট করে প্রতিদিন ২বার দাত মাজা ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী আদর্শ।
০ সঠিক ভাবে দাত মাজতে ব্রাশটাকে ৪৫ ডিগ্রী এঙ্গেল করে ধরুন। এবার মাড়ির গাম লাইন আর দাতের সংযোগস্থলে ব্রাশ চালাতে শুরু করুন। তাড়াহুড়ো করে এসব জায়গাতে ব্রাশ চালালে মাড়ি সহ মুখের বেশ কিছু জায়গা আঘাত প্রাপ্ত হবে। আর তাই যত্নের সাথে একটু সময় নিয়ে দাঁত মাজুন।
০ মাড়ি অংশকে পরিষ্কার করতে ব্রাশের নরম অংশ একটু ধীর গতিতে মাড়িতে পরিচালনা করুন। খেয়াল রাখুন কিছুতেই যেন ব্রাশের অপেক্ষাকৃত শক্ত প্লাস্টিক অংশ মাড়িতে আঘাত করতে না পারে।
০ দাঁত মাজার পুরো ব্যাপারটাকে উপভোগ করতে চেষ্টা করুন। নইলে ২-৩ মিনিট একটানা দাঁত মাজা আপনার জন্য দু:সাধ্য হয়ে যাবে।
মাউথ ওয়াশের প্রয়োজনীয়তা
প্রতি নিয়ত দাত মাজলেও আমাদের মুখে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে ব্যাকটেরিয়ার স্বচ্ছ আবরণ ও খাদ্য কণা প্রবেশ করে থাকে এবং এসব জায়গাতে সহজে ব্রাশ পৌছায় না। এমন জায়গাগুলোকে পরিষ্কার করতে প্রয়োজন মাউথ ওয়াশ। বাজারে অনেক ধরনের মাউথ ওয়াশ পাওয়া যায়। এসব মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে বিভিন্ন নির্দেশনা বোতলের গায়ে দেয়া থাকে। যদি আপনার দাত খুব বেশী নাজুক হয় সেক্ষেত্রে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
মডেল মোনালিসা
ছবি সাফাওয়াত খান সাফু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ২৩, ২০০৯
Leave a Reply