একটা সময় ছিল, যখন শারীরিক যন্ত্রণাকে গুরুত্ব না দিয়ে রোগ-লক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। পরিস্থিতি বদলাচ্ছে দিন দিন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা উপশম করা হতে পারে আসল দিক। তাই শারীরিক যন্ত্রণা বা ব্যথা কমানো এখন গবেষণার এক মূল লক্ষ্য।
ক্যানসারের মতো ঘাতক ব্যাধিতে মৃত্যুটাই কষ্টের বিষয় নয়, মূল কষ্ট রোগীর দীর্ঘ যন্ত্রণা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এখন প্রতিবছর ১০০ মিলিয়নের চেয়ে বেশি রোগী অ্যাকিউট বা ক্রনিক অর্থাত্ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভোগে। ব্যথানাশক হিসেবে শক্তিশালী নারকোটিক মরফিন বা প্যাথিড্রিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না, বরং যন্ত্রণা হয়ে পড়ছে সর্বগ্রাসী, এ নজির এখন ভূরি ভূরি।
শুধু শারীরিক যন্ত্রণা কমানোর লক্ষ্যে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে, পরিবার হয় সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত। আবার ব্যথানাশক যেকোনো ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিস্তর। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেগুলো ধীরে ধীরে মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতাকে করে তোলে বিকল, স্থবির, নেশাগ্রস্ত।
এসব কিছুর বিকল্প হতে পারে অরাসায়নিক, কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি, যাতে পুরো শারীরিক প্রক্রিয়ায় কোনো অসামঞ্জস্য তৈরি হবে না।
ডেল্টা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইতালির ভারগাতা ইউনিভার্সিটি অব রোমের সঙ্গে মেডিকেল জৈব প্রকৌশল গবেষণার কাজ করে। ডেল্টা আর অ্যান্ড ডির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক গুইসেপে মারিনিও জৈব প্রকৌশল গবেষণা ও পরিকল্পনার একপর্যায়ে ব্যথা নিরসনের এসব সমস্যার একটা সমাধানে আসেন। নাম দেন স্ক্র্যাম্বলার থেরাপি ডিভাইস।
স্ক্র্যাম্বলার থেরাপি পদ্ধতি
অত্যাধুনিক এ যন্ত্রে কোনো ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। নিতে হয় না কোনো ইনজেকশন। যান্ত্রিক পদ্ধতিটি স্বয়ংক্রিয় ও ব্যথাহীন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করার ফলে যেকোনো ধরনের ব্যথা পুরোপুরি উপশম হয়। অনেকগুলো ইলেকট্রোড লাগানো হয় ব্যথাযুক্ত অংশে। এগুলো ব্যথার পরিবর্তে কৃত্রিমভাবে ব্যথা উপশম তথ্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুতে পৌঁছায়। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস যন্ত্রণার বদলে ব্যথাহীনতার তথ্য পেতে থাকে। উত্পত্তি হয় কৃত্রিম স্নায়ুর। স্নায়ুগুলো কাজ করে পেইন স্ক্র্যাম্বলার হিসেবে। স্ক্র্যাম্বলারই ব্যথার বার্তাকে অবেদন করার যান্ত্রিক কৌশল।
এ পদ্ধতিতে লো ব্যাক পেইন, ফেইলড ব্যাক সিনড্রোম, ট্রাজিমিনাল নিউরোপ্যাথি ও ক্যানসারের ভয়ানক যন্ত্রণাসহ অনেক ধরনের ব্যথার উপশম করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চিকিত্সামান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত এ ব্যবস্থাটি পৃথিবীর বহু দেশে প্রচলিত। আশা করছি আমাদের দেশেও শিগগিরই এর প্রচলন হবে।
খোরশেদ আলম
সহকারী অধ্যাপক রেডিয়েশন অনকোলজি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯
Leave a Reply