প্রতি ডেসিলিটার রক্তে যদি ২ মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে কম ইউরিক অ্যাসিড থাকে, তা হলে ধরা হয় যে, সেই ব্যক্তির রকে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশ কম। এই অবস্থাকে হাইপওরিসেমিয়া বলে হয়। এখনও পর্যন্ত রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম হওয়ার সঙ্গে নানা ধরনের মস্তিষ্কের রোগের প্রমাণ সে ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, রক্তে ইউরিক অ্যাসিড কম থাকলে তা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, অ্যালঝাইমার্স, হাটিংটনস, পারকিনসন্সের মতো নানা রোগের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
কেন রক্তে কমে যায় ইউরিক অ্যাসিড?
কিছু গবেষণা বলছে, কারও যদি উইলসনস ডিজিজ থাকে, তা-ও রক্তে ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ড্রাগকেও এই অ্যাসিডের মাত্রা কমানোর কারণ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা ইতিমধ্যেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন এবং তার জন্য নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতে হয়, তাঁদের রক্তেও কমতে পারে ইউরিক অ্যাসিড, এমনটা মনে করছেন অনেকে। আবার যে সমস্ত মহিলাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম, দেখা গেছে তাঁদের শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় জিঙ্ক প্রবেশ করে না। ফলে জিঙ্কের প্রতুলতাকেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিড কমার কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। যদি কারও পরিবারে ইতিমধ্যে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের অল্প থাকার ইতিহাস থাকে, তা হলে জিনগত ভাবে সেই সমস্যাও দেখা দিতে পারে শরীরে।
কী ভাবে হবে এর চিকিৎসা?
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে তা সাধারণত ধরা পড়ে সহজে। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ যদি নেহাতই কম হয়, সে ক্ষেত্রে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। যাঁদের ইতিমধ্যে উইলসন্স ডিজিজ আছে, ধরে নেওয়া যেতে পারে, তাঁদের শরীরে এই অ্যাসিডের মাত্রা কম হবেই। সেই অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করা যায়। তবে যদি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কম নয়, তা হলে লো-কপার ডায়েটে থাকতে হবে রোগীকে।
কী কী খেতে হবে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বল্পতা থাকলে?
- খাবারে প্রচুর পরিমাণে থাকুক জিঙ্ক। জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার না থাকলে জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।খাবারে বেশি পরিমাণে প্রাণিজাত প্রোটিন থাকলে তা গাউটের সমস্যা ডেকে আনে। গাউট রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। যদিও এ কথা এখনও প্রমাণিত হয়নি যে, অ্যানিম্যাল প্রোটিন খেলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়বেই। কিন্তু বহু গবেষক সাধারণ পদ্ধতিতে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে মাংস খাওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছেন।
- অনেক ক্ষেত্রে ইনোসিন খাওয়ারও চল রয়েছে। তবে ইনোসিন খাওয়া উচিত কি না, খেলেও কী পরিমাণে তা খাওয়া উচিত, সে প্রসঙ্গে সবচেয়ে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন।
অ্যালকোহল পান করা বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে। যদিও বেশ কিছু অ্যালকোহল পান করলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু উইলসন্স ডিজিজ রয়েছে এমন রোগীদের অ্যালকোহল খেতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের সাধারণত রক্তে কপারের মাত্রা বেশি এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যালকোহল পান করলে তা আদতে লিভারের ক্ষতি করে। উইলসন্স ডিজিজের ক্ষেত্রে ত মাতাত্মক আকার ধারণ করে।
ভালো পরিমাণে শারীরচর্চা করলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে। তাই শরীরের ক্ষমতা বুঝে বাড়ানো যেতে পারে এক্সারসাইজও।
এমন নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয় শরীরকে কেন্দ্র করে, যা আগেভাগে নির্ণয় করার উপায়ই থাকে না। তাই সচেতন জীবনযাপনই এ ক্ষেত্রে একমাত্র সুরাহা এনে দিতে পারে। সচেতনতাই সুস্থতার চাবিকাঠি।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-09-03 16:28:23
Source link
Leave a Reply