দুষ্টু গোপাল ৫৬ ভোগ কেন খান বা কীভাবে খান এসবের ব্যাখ্যা হিন্দু পুরাণে অনেক আছে। সে সব কঠিন কঠিন ব্যাপারে গেলাম না। তার চেয়ে বরং যাঁরা নিজের বাড়িতেই কৃষ্ণ ঠাকুরকে অল্প প্রসাদ দিয়ে তুষ্ট করতে চান তাঁদের জন্য দেওয়া হল কয়েকটি রেসিপি। এই পদ গোপালের যেমন প্রিয় তেমনই বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম আধার। তাহলে শুরু করা যাক।
তালের বড়া
গোপাল ঠাকুরের থেকেও এটা পেটুক বাঙালির বেশি প্রিয় পদ। তৈরি করা যে খুব ঝামেলার তা নয়। তবে তাল ছাড়িয়ে তা থেকে কাথ বের করাটা সামান্য সময় সাপেক্ষ।
উপকরণ
তালের কাথ- এক কাপ, চিনি- এক কাপ, কলা- ৩টি, ময়দা- এক কাপ, সুজি- অর্ধেক কাপ, নারকেল কোরা- এক কাপ
প্রণালী
- প্রথমে তালের কাথ বের করে নিতে হবে। একটি বড় পাত্রে জল নিন। তালের খোসা ছাড়িয়ে নিন। তাল সেই জলের দিয়ে দিন। এবার পরিষ্কার হাতে জলের মধ্যে তাল কচলাতে থাকুন।
- সমস্ত রস নিঙড়ে বের করেন আঁটিগুলি ফেলে দিন। এবার পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে সেই রস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখুন। তার নীচে একটি পাত্র রেখে দেবেন। এভাবে সারা রাত রেখে দিলে সকালে উঠে দেখবেন সমস্ত জল নীচের পাত্রে জমা হয়েছে এবং পাতলা কাপড়ে তালের কাথ পড়ে রয়েছে।
- এভাবে জল ছেঁকে নিলে তাতের তেতো ভাব একেবারে চলে যায়।
- তালের প্রকৃত স্বাদ জিভে লাগে। আর তালের যে কোনও পদের ক্ষেত্রেই এই ভাবে তালের কাথ বের করা যায়। সারা রাত তালের কাথ বের করে নেওয়ার পর একটি পাত্রে তা রেখে দিন।
- চিনি মিক্সিতে মিহি করে গুঁড়ো করে নিন। কলার ছোটো টুকরো করে মিক্সিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এবার একটি বড় কানা উঁচু পাত্রে ময়দা, সুজি, চিনির গুঁড়ো, নারকেল কোরা, তালের কাথ এবং কলার কাথ দিয়ে হাতে করে ফেটাতে থাকুন।
- ফেটাতে ফেটাতে দেখবেন সব মিহি হয়ে স্মুদ ব্যাটারে পরিণত হয়েছে।
- মিশ্রণটি আধঘণ্টা মতো ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। ততক্ষণে সুজি মিশে ফুলে উঠবে। ব্যাটারটিও পারফেক্ট হয়ে যাবে। আধ ঘণ্টা পরে কড়াইয়ে তেল গরম করুন।
- তেল গরম হতে হতে ব্যাটারটি ফের একবার পরিষ্কার হাতে ফেটিয়ে নিন।
- এবার বড়ার আকারে ছোটো ছোটো করে তেলে ব্যাটার ছাড়তে শুরু করুন।
- বড়া ভাজবেন মিডিয়াম আঁচে। বড়াগুলি বাদামি হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে নামিয়ে নিন।
মোহনভোগ
উপকরণ
সুজি- ১ কাপ, চিনি- ১/২ কাপ, দুধ- ১ কাপ,ঘি, কিসমিস, কাজু, আমন্ড, শুকনো নারকেল, পেস্তা বাদাম, কেশর, তেজপাতা- ২, এলাচ গুঁড়ো- এক চিমটি
প্রণালী
- দুধ গরম করে ঘন করে নেবেন। কড়াইতে ঘি দিয়ে গরম করে তাতে সুজি দিয়ে দিন।
- খুন্তি দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
- সুজি ভাজার রং সোনালি হয়ে গেলে তাতে দুধ, চিনি, কাজু, কিসমিস, আমন্ড, পেস্তা, শুকনো নারকেল, তেজপাতা এবং এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- সমস্ত জিনিসটি ঘন হয়ে এলে তা থেকে দেখবেন ঘি বের হতে শুরু করেছে।
- হয়ে গেল কৃষ্ণের প্রিয় মোহনভোগ।
নারকেল নাড়ু
উপকরণ
নারকেল কোরা, চিনি কিংবা গুড়,এলাচ
প্রণালী
- গুড়ের নাড়ু বানাতে গেলে দুই কাপ নারকেল কোরার সঙ্গে এক কাপের একটু কম পরিমাণ গুড় নিয়ে সেটি একটি থালায় হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।
- এবার কড়া গরম করে মিডিয়াম আঁচে গুড় দেওয়া নারকেল পাকাতে থাকুন।
- চার পাঁচ মিনিট পর দেখবেন নীরকেলে পাক এসেছে।
- অল্প নারকেল হাতে নিয়ে দেখুন নাড়ুর মতো এঁটে যাচ্ছে কিনা।
- যদি হয়ে যায় তাহলে আভেন বন্ধ করে গরম গরম অবস্থাতেই নাড়ু গড়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে নাড়ু গড়া যাবে না।
চিনির নাড়ু করতে গেলে দেড় কাপ নারকেল কোরায় এক কাপ চিনি লাগবে। দুটি উপকরণ ভালো করে মেখে নিন। কড়াই গরম করে একইভাবে পাক দিয়ে নাড়ু গড়ে নিন।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
মালপোয়া
উপকরণ
ময়দা- ১৫০ গ্রাম,সুজি- ১০০ গ্রাম,মৌরি- ১ চামচ, দুধ- ২৫০ গ্রাম,ঘি বা সাদা তেল, চিনি- ২৫০ গ্রাম, খোয়া ক্ষীর- ৫০, বেকিং সোডা ১ চিমটি, জল
প্রণালী
- একটি পাত্রে ময়দা, সুজি, মৌরি, বেকিং সোডা, খোয়া ক্ষীর এবং দুই টেবিল স্পুন চিনি নিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে অল্প অল্প করে দুধ ঢেলে ব্যাটারটি ফেটাতে থাকুন। ব্যাটারটি একদম স্মুদ হবে। ট্যাল ট্যালে বা বেশি গাঢ় হবে না।এটি আলাদা করে রেখে দিন।
- অনেকে মালপোয়া শিরা দিয়ে খেতে ভালো বাসেন। তাঁদের আলাদা কর রস তৈরি করতে হবে।শিরার জন্য এক কাপ জল এবং এক কাপ চিনি মিশিয়ে গরম করে নিলেই শিরা তৈরি।
- এবার কড়াইয়ে ঘি বা সাদা তেল গরম করে ডুবো তেলে মালপোয়া ভাজতে হবে। ছোটো হাতায় করে মালপোয়ার ব্যাটার নিয়ে গরম তেল বা ঘিতে দিতে হবে।
- লুচির মতো আপনা থেকেই ভাজা হয়ে যাবে। মালপোয়া তৈরি করতে হবে অল্প আঁচে।
- সোনালি করে ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে মালপোয়া তুলে নিন।
- এমনিও খাওয়া যায় আবার চিনির রসে ডুবিয়ে দিয়েও খাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভাজার সঙ্গে সঙ্গে চিনির রসে মালপোয়া ডুবিয়ে দিতে হবে।
তালের লুচি
উপকরণ
ময়দা- দেড় কাপ, নুন- এক চামচ, চিনি- এক চামচ, তেল, তালের কাথ
প্রণালী
- একটি পাত্রে ময়দা, নুন, চিনি এবং এক চামচ তেল নিয়ে ময়দা ভালো করে ময়ান দিন।
- ময়ান হয়ে গেলে তাতে অল্প অল্প করে তালের কাথ দিয়ে মাখতে থাকুন।
- একবারে সমস্ত কাথ দিয়ে দেবেন না। জলের কোনও প্রয়োজন নেই।
- তালের কাথ দিয়েই সমস্ত ময়দা মাখা হযে যাবে।
- ময়দা মাখার পর অল্প তেল নিয়ে তার সারা গায়ে মেখে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে দিন।
- এবার লেচি কেটে পাতলা পাতলা করে লুচি বেলে ভেজে নিন।
- যত পাতলা করে বেলবেন লুচি তত ভালো ফুলবে।
ছবি সৌজন্য: নবভারত টাইমস
তালের ক্ষীর
উপকরণ
তালের কাথ, চিনি, দুধ, নারকেল কোরা
প্রণালী
- তালের কাথ ভালো করে বের করে একটি পাত্রে রেখে সেটি অল্প আঁচে গ্যাসে বসান।
- তালের কাথ হালকা ফুটতে শুরু করলেই তাতে পরিমাণ মতো চিনি দিন।
- ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে তাতে দিয়ে দিন নারকেল কোরা। ফের নাড়তে থাকুন।
- এবার ধীরে ধীরে এতে ঘন দুধ মেশাতে থাকুন। অল্প আঁচে ক্রমাগত নাড়তে হবে।
- না হলে পুড়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে সমস্ত জিনিসটি ঘন হয়ে যাবে।
- দেখেই বুঝতে পারবেন যে তালের ক্ষীর তৈরি
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-26 14:03:26
Source link
Leave a Reply