হাইলাইটস
- ভারতবর্ষ দেবতাদের দেশ৷ দেবতারা এখানে মানুষের রূপে জন্ম নিয়েছেন৷ মিলেমিশে গিয়েছেন আম আদমীর সঙ্গে৷
- তাই এদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে দেবতাদের নানা রহস্যময় নিদর্শন৷
- ধর্মীয় বিশ্বাসীরা এই সমস্ত লোকগাঁথা আজও বিশ্বাস করেন৷
আমাদের দেশের বহু রহস্যময় জিনিস যে আজও বিদ্যমান তা আমরা অনেকেই জানি৷ সেগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও জানি আমরা৷ তারই মধ্যে কয়েকটি রহস্যময় পাথরকে ঘিরে আজও আলোচনা এবং আশ্চর্য হওয়ার কমতি নেই৷ ধর্মবিশ্বাসীরা সেই সব রহস্যময় পাথরগুলিকে স্বর্গের পাথর বলে দাবি করেন৷ এবং মনে করেন যে সেগুলির স্পর্শ বা দেখা পাওয়া পুণ্যের ব্যাপার৷ এবং সেগুলির সঙ্গে জড়িত রয়েছে নানা ধর্মীয় গল্প৷
শ্রীকৃষ্ণের মাখনের গোলা (মহাবলিপুরম)
তামিলনাড়ুর মহাবলিপুরমে রয়েছে এক বিশালাকার পাথর৷ সেটিকে দেখতে অনেকটা বলের মতো৷ আশ্চর্যজনকভাবে সেই পাথরের গোলাটি ৪৫ ডিগ্রি কোণে আটকে রয়েছে৷ সেটি নাড়ানোর কোনও উপায় নেই৷ বিজ্ঞানের মতে আবহবিকারের ফলে এই পাথরের সৃষ্টি৷ যদিও ধর্মপ্রাণরা একে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাখনের গোলা বলে দাবি করেন৷ পাথরের উচ্চতা প্রায় ২০ ফিট, ব্যাস প্রায় ৫ মিটার৷ গোলকের ওজন আনুমানিক ২৫০ টন৷ বহু শতাব্দী ধরেই নাকি এই গোলাটি এভাবে পড়ে রয়েছে৷
মামা ভাগ্নে পাহাড় (বীরভূম)
বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়টি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বেশ বিখ্যাত৷ একটি পাথরের পিঠে আরেকটি পাথর প্রাকৃতিক নিয়মেই আটকে গেছে৷ কোনও রকম ব্যালেন্স ছাড়াই দাঁড়ায়ে আছে এই মামা-ভাগ্নে৷ এটিও আবহবিকারের ফল৷ তবুও এই পাহাড়ের ইতিহাস নিয়েও রয়েছে একাধিক পৌরানিক কাহিনি৷ বলা হয় যে রাম যখন তাঁর সীতাকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে লঙ্কা যাত্রা করেছিলেন তখন হিমালয় থেকে পাথর সেতু বন্ধনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ সেই সময় কিছু পাথর এখানে পরে যায়। আর এইভাবেই সৃষ্টি হয় “মামা ভাগ্নে” পাহাড়। অন্যদিকে বলা হয় যে দেবতা বিশ্বকর্মা, মহাদেবের আদেশে এক রাতের মধ্যে দ্বিতীয় কাশি নির্মাণ করছিলেন। সেসময় কিছু পাথর পরে মামা-ভাগ্নে সৃষ্টি হয়।
আজমেঢ়ের জাদু পাথর
বিশ্বের নানা জায়গা থেকে সর্বধর্মের মানুষ জড়ো হন আজমেঢ়ের হজরত খ্বাজা মৈনুদ্দিন চিশতি বা খ্বাজা গরিব নওয়াজের দরগায়। কথিত আছে এই দরগায় চাদর দিলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। তারাগড় পাহাড়ির নীচে রয়েছে এক আশ্চর্য ঝুলন্ত পাথর। বছরের পর বছর সেখানেই পড়ে রয়েছে সেটি। লোকে বলে, এই পাথরটি নাকি কোনও এক অভিশপ্ত ব্যক্তির উপর পড়ার কথা ছিল। সেই ব্যক্তি খ্বাজা গরিব নওয়াজকে স্মরণ করেন এবং খ্বাজার আশীর্বাদে সেই পাথর আর ওই ব্যক্তির মাথায় পড়ে না। ওভাবেই ঝুলে থাকে।
ব্যালেন্সিং রক (চেরাপুঞ্জি)
চেরাপুঞ্জির ব্যালেন্সিং কর দেখে হাঁ হয়ে যাননি এমন পর্যটক মেলা ভার। এখানকার একটি ছোটো পাথরের উপর একাটি বড় পাথরের চাঁই প্রাকৃতিকভাবে ব্যালেন্স করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোন রহস্য বলে এই দাঁড়িয়ে থাকা তা কেউ জানেন না। বছরের পর বছর ঝড়, ঝাপটা, ভূমিকম্প সহ্য করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ব্যালেন্সিং রক। তার আকারের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। তাকে এক ইঞ্চিও টলানো যায়নি। এ যেন প্রকৃতির এক আশ্চর্য লীলা।
ঠিনঠিনি পাথর (ছত্তিশগড়)
ছত্তিশগড়ের সরগুজাতে রয়েছে আরেকটি রহস্যময় পাথর খণ্ড। পোশাকী নাম ঠিনঠিনি পাথর। এই নামকরণের একটি কারণ আছে। এই পাথরে অন্য কোনও পাথর ধাক্কা খেলে সুন্দর ধ্বনী বেজে ওঠে। ছত্তিশগড়ের সরগুজার ছিন্দকালো গ্রামের এই পাথর নিয়ে হয়েছে বহ বৈজ্ঞানিক গবেষণা। যদিও এখনও পর্যন্ত নাকি কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেলেনি। গ্রামের লোকে একে ঠিনঠিনি পাথর নাম দিলেও এর আসল নাম ফোনোটিক স্টোন। লোকে বলে এটি নাকি দেবতাদের আজব সৃষ্টি।
দরগার চমৎকারী পাথর
পুণে-বেঙ্গালুরু হাইওয়ে থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে শিবপুর গ্রামে অবস্থিত হজরত কমর আলি দরবেশ বাবার দরগা। বলা হয় যে প্রায় সাতশো বছর আগে সুফি দরবেশ হজরত কমর আলিকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল। এই দরগার পরিসরে একটি প্রায় নব্বই কিলো ওজনের পাথর রয়েছে। জনশ্রুতি সুফি দরবেশের নাম নিয়ে মাত্র এগারো জন ভক্ত এই পাথরটিকে নিজেদের তর্জনীতে তুলতে পারেন। কিন্তু দরগার পরিসরের বাইরের নিয়ে গেলে এই পাথর সহজে তোলা যায় না।
সবশেষে বলি বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু তর্কে বহুদূর। প্রকৃতির লীলাকে কেউ বলে দেবতা দান কেউ বলেন বিজ্ঞানের সৃষ্টি। এবার কোন লোকগাঁথা কে কীভাবে নেবেন সেটা নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের উপর।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-10 17:43:05
Source link
Leave a Reply