হাইলাইটস
- করোনা অতিমারীর জেরে বর্তমানে অধিকাংশ ব্যক্তিই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন।
- শুধু তাই নয়, একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের ৯৫ শতাংশ কোম্পানি আগামী ২ বছরের জন্য তার কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করানোর পরিকল্পনা করেছে।
২৩ শতাংশ লোকেরা এই স্ক্রিন টাইম বাড়ার কারণে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, চোখে ছানি এবং চোখের অন্যান্য সমস্যার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছর এই পরিসংখ্যান আরও খারাপের দিকে এগিয়েছে। অতিমারীর কারণে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা হোক বা অফিসের কাজের জন্য অথবা একঘেয়েমি কাটানোর জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আনাগোনা- এ সবই বহুগুণ বেড়েছে। তবে আয়ুর্বেদের সাহায্যে চোখের নানান সমস্যা থেকে স্বস্তি পাওয়া যাবে।
বিপজ্জনক নীল রশ্মি
পড়াশোনা, অফিসের কাজ বা মন মেজাজ ভালো করার জন্য করোনা ও লকডাউনের সময় থেকে টিভি, মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপে সময় কাটানোর প্রবণতা ও সময় বেড়েছে। তবে এই ডিভাইসগুলি থেকে যে নীল রশ্মি নির্গত হয়, তা অনবরত চোখের ক্ষতি করে যায় এবং আমাদের চোখ টানতে থাকে। মানব শরীরের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং সক্রিয় পেশী হল চোখ। যোগাসন, মর্নিং ওয়াক, জিমে গিয়ে ওয়েট লিফ্টিং, এক্সারসাইজ করে আমরা আমাদের পেশী মজবুত করতে পারি, হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল থাকতে সাহায্য করি, রক্ত চলাচলেও উন্নতি ঘটাই। কিন্তু চোখের সুস্থতার জন্য কী করে থাকি আমরা? চোখের সমস্যা যতক্ষণ না-বাড়ছে ততক্ষণ এর প্রতি সতর্কই হই না।
কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোমের সাধারণ লক্ষণ
সমীক্ষা অনুযায়ী যাঁরা কম্পিউটারে কাজ করেন তাঁদের মধ্যে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যক্তির কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোমের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এটি ডিজিটাল আই স্ট্রেন নামেও পরিচিত। কম্পিউটার স্ক্রিন চোখকে ফোকাস ও রিফোকাস করতে বাধ্য করে, যে কারণে মাথাব্যথা, শুকনো লাল চোখ, চুলকানি, জল পড়া, আবছা দেখার সমস্যা হয়ে থাকে। আবার স্ক্রিনের দিকে এক নাগারে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখকে আরও অধিক পরিশ্রম করতে হয়, যার ফলে চোখের পেশীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত আমরা ১৬ থেকে ১৮ বার চোখের পাতা ফেলি। কিন্তু যখন কম্পিউটারে বসে কাজ করি, তখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮ থেকে ১০ বারের মধ্যে। এই ব্লিঙ্কিং বা চোখের পাতা ফেলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? চিকিৎসকদের মতে আমরা যখন ব্লিঙ্ক করি, তখন কর্নিয়ায় অশ্রু ছড়িয়ে পড়ে। এই অশ্রুতে এমন কিছু প্রোটিন থাকে যা চোখকে পুষ্টি জোগানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। আবার মাঝে মাঝে চোখের পলক ফেললে ম্যাকিউলার বিশ্রাম পায়। এই ম্যাকিউলার রেটিনার একটি অংশ, যা আমাদের সেন্ট্রাল ভিশনের জন্য দায়ী।
সুস্থ দৃষ্টিশক্তিকে যে বিষয়গুলি প্রভাবিত করে
বায়ুদূষণ, তাপমাত্রার তারতম্য ও আল্ট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন সুস্থ দৃষ্টিশক্তির জন্য ক্ষতিকর। আবার জাঙ্ক ফুড বা অধিক মেদযুক্ত খাবার দাবার, মদ, তামাক সেবন এবং উজ্জ্বল আলোয় অনেকক্ষণ থাকা চোখের সুস্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। উল্লেখ্য ধূমপানের অভ্যাস নাইট ভিশন কমিয়ে আনতে পারে এবং অল্প বয়সেই চোখের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আপনার চোখ সুস্থ রাখতে আয়ুর্বেদ কী ভাবে সাহায্য করবে জেনে নেওয়া যাক—
পামিং (palming)
এটি আয়ুর্বেদের প্রাচীন পন্থা, যা চোখকে তৎক্ষণাৎ স্বস্তি দেবে। এর জন্য সবার আগে খুব জোরে নিজের হাত ঘষুন। এবার চোখ বন্ধ করে হাতের তালুর গরম অংশ চোখের ওপর রাখুন। হাত এমন ভাবে চোখের ওপর রাখবেন যাতে আইবলটি এতে ভালোভাবে আবৃত হয়ে যায় এবং জোর দিয়ে চেপে ধরতে না-হয়। গভীর শ্বাস নিন এবং নাক দিয়ে ধীরে ধীরে সেই শ্বাস ছাড়ুন। ২-৩ মিনিট এমন করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি করা সবচেয়ে উপযোগী। এর ফলে ঘুমও ভালো আসে।
বরফ লাগানো
আয়ুর্বেদে বরফ লাগানো বা আইসিংকে শীত সাতম্য বলা হয়ে থাকে। চোখের অতিরিক্ত তাপ নির্গত করার জন্য তুলো বা গজের টুকড়োকে দুধ বা গোলাপ জলের মধ্যে ডুবিয়ে ৫ মিনিটের জন্য চোখের পাতার ওপরে রাখুন। চোখ টানতে থাকলে, তা সঙ্গে সঙ্গে কমবে।
লাইট ও ফায়ার
আলো ও অগ্নি তত্বের সঙ্গে আমাদের চোখ সম্পর্কযুক্ত। চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আয়ুর্বেদ অনুযায়ী স্নানের জল ব্যবহার করুন। আয়ুর্বেদ মতে, স্নানের জল অধিক গরম বা ঠান্ডা হবে না। বরং এটি ঈষদুষ্ণ হতে হবে। গরম জলে স্নান করলে অগ্নি তত্বের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।
মুদ্রা
এই মুদ্রাগুলি অভ্যাস করা খুবই সহজ। এর জন্য পদ্মাসনে বসে ও ধ্যানমগ্ন থেকে কোনও কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। যদিও মুদ্রার সময় ধ্যান ও প্রাণায়াম অনেক বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়। ঘুমিয়ে বা বসে অধিকাংশ মুদ্রা করা যেতে পারে। সাধারণ শ্বাস-প্রক্রিয়া চালিয়ে এই মুদ্রা করলে সুফল পাবেন হাতেনাতে। নির্দিষ্ট ধরনে আঙুলের অগ্রভাগ বা টিপকে একে অপরের সংস্পর্শে এনে কাম্য ফলাফল লাব করা যেতে পারে। তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সঙ্গে এই মুদ্রাগুলি করলে শরীরে প্রাণশক্তির সঞ্চার হবে, কয়েক মিনিটের অভ্যাস করলেই স্বস্তি অনুভব করবেন এবং এনার্জি পাবেন।
প্রাণ মুদ্রা
মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। কোলের ওপর হাত রাখুন, হাতের তালু হবে ওপরের দিকে। এর পর চোখ বন্ধ করুন। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সঙ্গে কনিষ্ঠা ও অনামিকার অগ্রভাগ জুড়ে দিন। বাকি আঙুলগুলি সোজা রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি সাধারণ থাকবে। ১৫ মিনিট এই মুদ্রা করুন। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হবে এবং চোখের জ্বালা কমবে।
জলের ঝাপটা দিন
৩ থেকে ৫ বার চোখে জলের ঝাপটা দিন। এর ফলে ফেসিয়াল আর্টারি এবং স্নায়ু সক্রিয় হবে।
লাইফস্টাইল
চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন অভ্যাস ত্যাগ করে নিজের জীবনযাপন শৈলীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন। খাবার সময় চশমা খুলে রাখুন। কোনও বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় চশমা না-পরে থাকাই ভালো। চশমা কোনও চিকিৎসা নয়, এটি চোখকে সাহায্য বা আশ্রয় প্রদান করে মাত্র।
শান্ত থাকুন
আয়ুর্বেদে রাগ ও বিরক্তিকে দৃষ্টি শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হয়। রাগ এক আবেগ, যা রক্তে অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। এটি পিউপিলের বিস্তার ঘটায়। এর ফলে সাধারণের তুলনায় অনেকবেশি রশ্মি চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। অতএব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে চোখের ওপর থেকে চাপ কমবে। রাগের কোনও কারণ দেখা দিলে গভীর শ্বাস নিন বা হাসিঠাট্টার মাধ্যমে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আবার প্রাণায়ামের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে পারেন।
চোখ সুস্থ রাখতে এ ছাড়া আর কী কী করবেন
১. যথাযথ দূরত্ব ও আলোয় পড়াশোনা করুন।
২. অন্ধকার ঘরে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না।
৩. বাইকে যাতায়াতের সময় আইগ্লাস ও হেলমেট পরুন।
৪. কঠিন বা উগ্র কোনও আলোর দিকে তাকাবেন না।
৫. নিয়মিত চোখ ধুতে হবে।
৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতির জন্য প্রকৃতি, সবুজ ঘাস, গাছপালা ইত্যাদির দিকে তাকিয়ে থাকুন।
৭. চোখ ঘষার প্রবণতা ত্যাগ করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-07-29 14:27:04
Source link
Leave a Reply