কোরবানির ঈদে ঘরে ঘরে মাংস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু কিছু বিষয়ে সচেতন না হলে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। বিশেষ করে আপনি স্বাস্থ্য সচেতন হলে মাংস খাওয়াতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে।অত্যধিক মাংস খেলে কেবল কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সাময়িক সমস্যা নয়, কিডনিতে পাথরও হতে পারে। এখানে উচ্চ পরিমাণে মাংস খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
* ওজন বেড়ে যায়: গরুর মাংস খেতে বেশ সুস্বাদু, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২, জিংক, সেলেনিয়াম, আয়রন, নিয়াচিন বা ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬ ও ফসফরাস রয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব পুষ্টি স্বাস্থ্যের জন্য দরকারী, কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে গরুর মাংসে প্রচুর ক্যালরিও রয়েছে। শরীরে প্রয়োজনাতিরিক্ত ক্যালরি থাকলে ওজন বেড়ে যায়। অন্যকথায়, শরীর যতটুকু ক্যালরি পোড়ায় তার চেয়ে বেশি ক্যালরি খেলে ওজন বাড়ে বা স্থূলতা হয়। স্থূল শরীর নানা রোগের ঝুঁকিতে থাকে, যেমন- ক্যানসার।
* মুখে দুর্গন্ধ ছড়ায়: বেশি পরিমাণে লাল মাংস খেলে মুখ থেকে বাজে গন্ধ ছড়ায়। আমাদের শরীর মাংস হজমের সময় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে। অ্যামোনিয়ার গন্ধই মুখকে দুর্গন্ধময় করে ফেলে। যারা যত বেশি লাল মাংস খাবেন, তাদের মুখ থেকে তত বেশি দুর্গন্ধ ছড়াবে। উচ্চ পরিমাণে লাল মাংস খেলে শরীর থেকেও বাজে গন্ধ ছড়াতে পারে। কেমিক্যাল সেনসেসে প্রকাশিত গবেষণায় যারা দুই সপ্তাহ লাল মাংস খাননি তাদের শরীরের গন্ধ যারা এসময়টাতে লাল মাংস খেয়েছেন তাদের তুলনায় আকর্ষণীয় ছিল।
* কোলেস্টেরল বেড়ে যায়: লাল মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এই অস্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। তাই গরুর মাংস আপনার খুব পছন্দের খাবার হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো।এলডিএল কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি উচ্চ হয়। উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রবণতা থাকলে যথাসম্ভব গরুর চর্বিহীন মাংস খান। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১৭০ গ্রাম পর্যন্ত চর্বিহীন গরুর মাংস কোলেস্টেরলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
* কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে: আমাদের দেশে যারা কোরবানি করেন তাদের অধিকাংশ ঘরেই এই উৎসবে মাংস ব্যতীত অন্যান্য তরকারি রান্না হয় না বললেই চলে। এমনকি টানা কয়েকদিন মাংসের ওপরই চলে। কেবল মাংস খাওয়া হয় বলে শরীরে আঁশের অভাব হয়। খাদ্যতালিকায় আঁশের উপস্থিতি যত কমে, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সীমিত পরিমাণে মাংস খেয়ে শাকসবজি ও ফলমূলও খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানিও পান করতে হবে।
* বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে: গবেষণা বলছে, যারা গর্ভধারণ করতে চাচ্ছেন তাদের উচ্চ পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া উচিত হবে না। ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটিতে প্রকাশিত গবেষণায় যারা খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কমিয়েছেন এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছেন তাদের মধ্যে গর্ভধারণের হার বেড়েছে। গবেষণার উপাত্তে ধারণা পাওয়া গেছে, অত্যধিক পরিমাণে লাল মাংস খেলে পুরুষদের শুক্রাণুও কমতে পারে।
* পানিশূন্যতা হতে পারে: উচ্চ পরিমাণে মাংস খাওয়ার আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, শরীর পানিশূন্য (ডিহাইড্রেটেড) হতে পারে। এর কারণ হলো, মাংসের প্রোটিন হজম হতে প্রচুর পানি লাগে। নিঃসন্দেহে মাংসের প্রোটিন স্বাস্থ্যের জন্য দরকারী, অর্থাৎ পেশি গঠন ও মেরামতে এটার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা তেমন শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাদের প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য ০.৩৬ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট। এমনকি অ্যাথলেটদেরও প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য এক গ্রামের বেশি প্রোটিনের প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে বেশি প্রোটিন খেলে শরীর অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করে দিতে প্রচুর পানি ব্যবহার করে।
* কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ে: অত্যধিক প্রোটিন কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে প্রাণীজ প্রোটিন।প্রাণীজ প্রোটিনে প্রচুর পিউরিন থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। আমেরিকান একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র ও পুষ্টিবিদ ক্যারোলিন পাসেরেলো বলেন, ‘অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।’ আপনার পরিবারের কারো কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকলে সীমিত পরিমাণে মাংস খাওয়া উচিত।তবে কিডনি পাথরের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলে অত দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।
এম ইউ/২৩ জুলাই ২০২১
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-07-23 15:09:04
Source link
Leave a Reply