হাইলাইটস
- সমীক্ষা বলছে পুরুষদের কোভাড় সিন্ড্রম (Couvade syndrome) বা নকল গর্ভধারণের
- লক্ষণগুলি দেখা দেয় মোটামুটি স্ত্রীর গর্ভধারণের তিন মাসের মধ্যেই
চমকাবার মতোই শিরোনাম বটে। পুরুষের গর্ভধারণ? এতো একেবারে আকাশ কুসুম কথা! এমন কথা কেউ কোনোদিন শুনেছে নাকি? মুখে মুখে বা মনে মনে এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াতেই পারে। কিন্তু পাঠকদের মধ্যেই অনেকে আছেন যাঁরা হয়তো সত্যি সত্যিই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। মানে বাস্তবেই পুরুষের গর্ভধারণের খবর বাতাসে ছড়িয়েছে। ব্যাপারটা আসলে কী?
নিজের শরীরের ভিতর আরেকটা শরীরকে ধারণ করার ক্ষমতা প্রকৃতি দেবী কখনওই পুরুষকে দেননি। এব্যাপারে তিনি মহিলাদের প্রতি পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। মাতৃত্বের যে স্বাদ মহিলারা পান পুরুষরা সেই স্বাদ থেকে বরাবরই বঞ্ছিত। মনোবিদরা বলেন যে, মুখে স্বীকার না করলেও বেশিরভাগ পুরুষই নাকি নিজের উত্তরসূরীর তিল তিল করে গড়ে ওঠার অনুভূতিকে উপভোগ করতে চান। আর তখনই নাকি পুরুষ গর্ভ ধারণ করে ফেলেন। এই বিষয়টি যেমন শারীরিক, তেমনই মানসিক।
কী হয়?
এক্ষেত্রে কী হয়, স্ত্রীর গর্ভধারণের খবর পাওয়ার পর থেকেই স্বামীও আনন্দিত হয়ে ওঠেন। স্ত্রীর শরীরের ভিতরে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা ছোট্টো প্রাণের কথা ভেবে সময় অনেক পুরুষই নিজের শরীরের ভিতরে সেই অনুভূতি পেতে থাকেন। অবস্থা এমন হয় যে স্ত্রীর শারীরিক পরিবর্তনগুলি স্বামীর শরীরেও ফুটে উঠতে থাকে। যেমন ধীরে ধীরে পেটের আকার বৃদ্ধি, পেট এবং পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি, মর্নিং সিকনেস, অতিরিক্ত খিদে পাওয়ার মতো উপসর্গগুলি পুরুষদের মধ্যে দেখা দেয়।
কেন হয়?
এটি আসলে পুরোটাই মানসিক। অথচ সেই মানসিক চিন্তাধারাই শরীরে গর্ভধারণের লক্ষণ তৈরি করে। এর পোশাকী নাম কোভাড় সিন্ড্রম (Couvade syndrome)। মেডিক্যাল সায়েন্স অবশ্য এধরনের উপসর্গকে কোনও সমস্যা বলে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে যে সমস্ত পুরুষ, নিজের গর্ভবতী স্ত্রী এবং গর্ভস্থ্য সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীল তাঁদের মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক।
কিছু গবেষকের আবার দাবি যে, হবু সন্তানের আগমনের খবরে অনেক পুরুষ আবার ঈর্ষা পরায়ন হয়ে ওঠেন। কারণ সঙ্গিনীর সমস্ত মনোযোগ হবু সন্তানের দিকে চলে যায়। তাই নিজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে গিয়ে নিজের অজান্তেই গর্ভবতী স্ত্রী মতো শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করেন।
আরেকটি গবেষণার আবার দাবি, সন্তানের জন্মের খবর পাওয়ার পর থেকেই অনেক পুরুষ মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন। তখন অনেকেই শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করে। আবার হরমোনের পরিবর্তনের ফলেও অনেক পুরুষের দেহে কোভাড় সিন্ড্রম (Couvade syndrome) দেখা দেয়।
কখন হয়?
সমীক্ষা বলছে পুরুষদের কোভাড় সিন্ড্রম (Couvade syndrome) বা নকল গর্ভধারণের লক্ষণগুলি দেখা দেয় মোটামুটি স্ত্রীর গর্ভধারণের তিন মাসের মধ্যেই। লক্ষ্য করে দেখবেন মহিলাদের শারীরিক পরিবর্তনও কিন্তু মাস তিনেক পর থেকেই শুরু হয়। কখনও কখনও নিজে থেকেই পুরুষের শরীরের গর্ভধারণের লক্ষণগুলি চলে যায়, কখনও আবার স্ত্রীর সন্তান প্রসবের পর ওই লক্ষণগুলি দূর হয়। অনেকের অবশ্য সন্তান প্রসবের পরও কিছুদিন পর্যন্ত এই লক্ষণ থেকে যায়।
কাদের হয়?
সাধারণত উন্নত দেশগুলির পুরুষদের মধ্যেই কোভাড সিন্ড্রম (Couvade syndrome) বা নকল গর্ভধারণের সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয়। উন্নত দেশগুলিতে অর্থ, শিক্ষা বা চিকিৎসা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয় না। ফলে মানসিক শান্তি থাকে। এক্ষেত্রে যখনই পুরুষরা স্ত্রী’দের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হয়ে ওঠেন, তখনই স্ত্রীর শারীরিক কষ্ট অনুভব করতে শুরু করেন তাঁরা। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, স্পেন, সুইডেনের মতো দেশের পুরুষদের মধ্যে এধরনের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবকিছুই খুঁত-যুক্ত। শিক্ষার অভাব মানুষের সচেতনতা এবং যত্নশীলতাকে দূরে সরিয়ে রাখে। ফলে পুরুষদের মনেও সচেতনতা থাকে না। সেক্ষেত্রে কোভাড় সিন্ড্রম (Couvade syndrome) তাঁদের কাছে নাকি এক বিলাসিতার নাম।
শিক্ষা-স্বাস্থ্য বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি হলে মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়। মানুষ আরও সচেতন এবং অনুভূতিশীল হন। তখন বিলাসিতাকেই একান্ত প্রয়োজনীয়তা বলে মনে হয়।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-10 14:55:13
Source link
Leave a Reply