হাইলাইটস
- সমীক্ষা বলছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ শিশু বুদ্ধিমান হলেও তাদের মধ্যে লার্নিং ডিজএবিলিটি থাকে।
- এর থেকে নানা মানসিক সমস্যা হতেও দেরি লাগে না।
- তাই সন্তানের মধ্যে এরকম কোনও সমস্যা দেখলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
মা-বাব অবশ্য ইশানের ছবি আঁকাকে খুব একটা গ্রাহ্য করেননি। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় তাকে বোর্ডিং-এ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেখানেই হয়তো তার জীবনটা আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। ইশানের পাশে এসে আলো দেখালেন নিকুম্ভ স্যার। মনমড়া ইশানকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলেন যে ইশান বাধ্য ছেলে হলেও সে সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিখতে পারে না। অথচ তাঁর বুদ্ধি এবং কল্পনা শক্তি প্রবল। একটু বেশি যত্ন পেলে সেও সকলের সেরা হতে পারে।
নিকুম্ভ স্যারের চেষ্টায় ইশান স্বাভাবিক হতে পেরেছিল। কিন্তু জীবনটা সিনেমা নয়। তবে সিনেমা থেকে চাইলে অনেককিছু শেখা যায়। ‘তারে জমিন পর’ ছবি দেখে অনেকেই ছোটোদের লার্নিং ডিজঅর্ডারের কথা জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু নিজের সন্তান যদি এই অসুখের শিকার হয় তাহলে কি বাবা-মা বুঝতে পারেন?
অনেক সময়ই পারেন না। মনে করেন যে সন্তান হয়তো পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে চাইছে। কিন্তু না।সব সময় কিন্তু তা হয় না। বাচ্চাদের মধ্যে অনেক সময়ই এমন অসুখ বাসা বাঁধে যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এই অসুখের লক্ষণ হল কোনও কিছু শিখতে না পারা। সহজ কথায় লার্নিং ডিসওর্ডার। অটিজস, ডিজলেক্সিয়া, ডিসক্যালকুলিয়া, এডিডি এমনকি ডিসগ্র্যাফিয়াও পড়ে এর আওতায়।
প্রত্যেক শিশু নিজস্ব পরিবেশে বড় হয়। সাধারণত জন্মের প্রথম এক বছরে মধ্যেই তার কথা বলা, শোনা, শেখা, স্পর্শকাতরতা, বেড়ে ওঠার ধরণ ইত্যাদি স্পষ্ট হতে থাকে। অতিরিক্ত মাথা নাড়ানো, নিজেকে কামড়ে দেওয়ার প্রবণতা, যে কোনও কিছুতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া কিংবা অন্য কোনও অস্বাভাকি কাজ যদি শিশু বেশি করে তাহলে তাকে নজরে রাখা ভালো।
– সমীক্ষা বলছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ শিশু বুদ্ধিমান হলেও তাদের মধ্যে লার্নিং ডিজএবিলিটি থাকে। এর থেকে নানা মানসিক সমস্যা হতেও দেরি লাগে না। তাই সন্তানের মধ্যে এরকম কোনও সমস্যা দেখলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
– স্পেশাল চাইল্ডদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে হয়। এক্ষেত্রে ধৈর্য্য হারালে চলে না। তারা একবারে কিছু শিখতে পারে না। এতে ভয়ের বা চিন্তার কিছু নেই। অভ্যাস করতে করতে তারাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে জন্ম থেকে স্পেশাল চাইল্ডদের পরিবর্তে পরিবেশের চাপে যে সমস্ত শিশুর মধ্যে মানসিক পরিবর্তন আসে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ হয়।
– পরিবেশের চাপ যেমন যৌনহেনস্থা, অবহেলা, হয়রানি, দমন করে রাখা সহ একাধিক কারণে শিশুর মনে ট্রমা তৈরি হয়। এই ট্রমা কাটাতে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মা এবং পরিবারের যত্ন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শে শিশু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে।
– স্পেশাল চাইল্ডদের প্যানিক অ্যাটাক, অমনোযোগিতা, ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা সাধারণ সমস্যা। এগুলিও কাটিয়ে ওঠা যায়।
শিশুর কোনও অসুখ আছে কিনা কীভাবে বুঝবেন?
অটিজম
– এক দেড় বছরের মধ্যে শিশু কথা বলতে পারছে কিনা খেয়াল করুন
– চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না
– নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না
– তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে কোনও সাড়া দেয় না
– একটা কাজ শুরু করলে ক্রমাগত সেটাই করতে থাকে
ডিসলেক্সিয়া
– মুখে মুখে ছড়া বা গান করলে বুঝতে পারে না
– একই ধরনের শব্দ বা বর্ণ চয়ণ করতে ভুল করে ফেলে
– অ, আ, ক, খ কিংবা এ, বি, সি, ডি সহজে শিখতে পারছে না
– বানান ভুল হচ্ছে এবং উচ্চারণ করে পড়তে অসুবিধা হচ্ছে
এডিডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজওর্ডার)
অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজওর্ডার বা এডিডি হল সাদা বাংলায় অমনোযোগিতা। এটি ছোটোবেলায় কম বেশি সব ছেলেমেয়ের মধ্যেই থাকে। তবে এটি বেশিমাত্রায় হলেও বিপদ। যদি সন্তান কোনও বিষয় নিয়ে টানা আলোচনা বা কথোপোকথন বুঝতে না পারে, কিংবা একবারের বদলে একাধিকবার বোঝাতে হয় তাহলে তার প্রতি নজর দিতে হবে। বেশিরভাগ অভিভাবকরাই মারধর করে সন্তানকে শেখাতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এটি ভুল।
অনেক সময় ছোটোরা কোনও প্রতিযোগিতা বা আলোচনায় অংশ নিতে অপছন্দ করে।কী কারণে এটা হচ্ছে তা মা-বাবকেই একটু মন দিয়ে দেখতে হবে। হয়তো সন্তানের বিশেষজ্ঞের সাহায্য় দরকার।
সমস্যা সমাধানে সন্তানকে কাউন্সেলিং করানো বুদ্ধিমানের কাজ। তবে এক্ষেত্রে অভিভাবক বিশেষ করে মা-কে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। কাউন্সেলর অভিভাবককে যা যা পরামর্শ দেবেন সেগুলি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।
শরীরের রোগ সারানো অনেক সহজ। মানসিকব্যাধি সারতে সময় লাগে। সেই সময়টুকু সন্তানকে দিতে হবে। সঠিক চিকিৎসা পেলে যে কেউ সুস্থ হযে উঠতে পারে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-02 13:50:39
Source link
Leave a Reply