শৌভিক আর মৌমিতার ৭ বছরের প্রেম। কলেজ থেকে ওদের আলাপ। তারপর চাকরিসূত্রে কিছুদিন এক শহরে থাকার পর মৌমিতা চলে যায় জার্মানিতে। শেষ দুবছর ওখানেই ছিল সে। আপাতত ওয়ার্ক ফ্রম হোম নিয়ে দেশেই রয়েছে। শৌভিক চাকরি সূত্রে থাকে বেঙ্গালুরুতে। তবে জানুয়ারিতে বিয়ে, হানিমুন কাটিয়ে দুজনেই এখন কলকাতায়। বিয়ের পর প্রথম তিন মাস তেমন কোনও অসুবিধেই হয়নি। কখনও বাড়ি, কখনও শ্বশুরবাড়ি এই করেই দুজনের সময় কেটেছে। এছাড়াও উইকেন্ডে দুজনেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেত লংড্রাইভে। রেস্তোরাঁ, পাব এসব তো ছিলই। সমস্যার সূত্রপাত হল করোনার সংক্রমণ আর লকডাউন শুরু হওয়ার পর। বাড়ির বাইরে বেরনো বন্ধ।
সারাদিন ঘরে বসে দুজনেই কাজ করে চলেছে। এই ভাব তো এই ঝগড়া। এদিকে বাড়ির দুই সহায়িকা আপাতত আসছে না। ফলে অনেকটাই চাপ পড়েছে মৌমিতার উপর। রান্না, ঘর পরিষ্কার, শাশুড়িকে সাহায্য করতে গিয়ে জেরবার মৌমিতা। শৌভিকের মায়ের আজকাল মনে হয়েছে বৌমা বেশ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। কাজের পর বেশিরভাগ সময় ফোনে ব্যস্ত থাকে। ফলে রান্না, খাওয়া সবেতেই দেরি। এদিকে বরাবর ডায়েট, নিজে রান্না করে খাওয়া মৌমিতা কিছুতেই ভাত-ডাল-মাছ-তরকারি দিয়ে খেতে পারে না। এক একদিন তো বেশ কথা কাটাকাটিই হয়ে যাচ্ছে। এমনকী বাড়ির বৌ বাথরুমে বেশি সময় কাটাচ্ছে এমন খোঁটাও দিয়েছেন শাশুড়ি। মৌমিতা ভাবে লকডাউন শেষ হলেই বাড়ি যাবে। মায়ের এমন মন্তব্যে বিরক্ত শৌভিকও। কিন্তু মাকে তেমন কিছু বলতে পারে না। এদিকে শৌভিক-মৌমিতার ঝামেলাও এখন চরমে। অবশেষে স্কুলের বন্ধুদের গ্রুপ ভিডিয়ো কল থেকে দারুণ একটা আইডিয়া পেল সে। সেই টোটকা প্রয়োগ করতেই সমস্যার সমাধান এক নিমেষে।
শর্টকাটে রান্না- এই সময় সকলেই সহজপাচ্য খাবারের কথা বলা হচ্ছে। তাই প্রতিদিন মুখরোচক রান্নার কোনও প্রয়োজন নেই। পুষ্টিকর খাবার খেলেই হল। বাড়িতে রান্নার লোক না থাকলে সবজি কাটা, মশলা বাটা, বাসন ধোওয়া অনেক সমস্যা। তাই সব থেকে ভালো উপায় হল প্রেসার কুকার। সব কিছু একসঙ্গে দিয়ে সেদ্ধ করে খাও। নইলে সবজি দিয়ে মাছের ঝোল, চিকেন স্ট্যু এসব করে নিলেই সমস্যা অনেক কমে। তাড়াতাড়ি রান্না হয়। বাসন মাজতে কষ্ট হয় না। সেই সঙ্গে পেটও ভরে। শরীর এবং বয়সের কথা মাথায় রেখে সবাইকেই এটা বুঝতে হবে।
ছোট সমস্যাকে অহেতুক বড় করবেন না- এমনিই সব মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ব্যক্তিগত, কর্মজগত, মানসিক দিক সবই আজ বিপর্যস্ত। প্রচুর পরিবারে কোভিড হানা দিয়েছে। তাই নিজেদের ছোট ছোট সমস্যাকে অহেতুক বড় করে তুলবেন না। প্রয়োজনে কিছু জিনিস এড়িয়ে চলুন। গায়েই মাখবেন না। ঘুম থেকে ওঠা, স্নান করা এসব নিয়ে সমস্যা হলে সোজাসুজি বলুন এই সব ইস্যুতে মাথা গলানোর মতো সময় আপনার নেই। আপনি নিজেকে নিয়ে এবং নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পাঁচদিন এড়িয়ে গেলে ৬ দিনের থেকে ঝামেলা এমনিই কমে যাবে।
ভালোর প্রতীক্ষায় থাকুন- এমন খারাপ দিন একদিন শেষ হবেই। প্রতিদিন খারাপ খবর আর মৃত্যুর খবরে আমাদের দিন ভাঙবে না। সবাই সুস্থ হবে। সবাই নিজের মতো করে বাঁচবে। এমন আশা নিজের মধ্যেও রাখুন। কঠিন সময়ে মানুষের পাশে থেকেই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। কাজেই কেজো তর্ক থেকে দূরে থাকুন।
বাড়ির লোকের মানসিক অবস্থাটাও বুঝতে হবে- দীর্ঘদিন ধরে সকলেই গৃহবন্দি। সারাদিন খারাপ খবরে মানসিক অবস্থা সবারই তলানিতে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাজের চাপ। এছাড়াও সবার মনে সব সময় একটা ভয় কাজ করছে। আর তাই সেখান থেকেই বাড়ছে ঝামেলা অশান্তি। প্রত্যেককেই এ ব্যাপারে সহনশীল হতে হবে। একে অপরকে বুঝতে হবে।
একসঙ্গে সময় কাটান- একসঙ্গে ফ্যামিলি টাইম কাটানোর এটাই সেরা সময়। এরকম সুযোগ বার বার আসে না। হতেই পারে শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে আপনার আগে আলাপ ছিল। কিন্তু এক ছাদের তলায় না থাকলে কিছুতেই একে অপরকে চেনা যায় না। তাঁদেরকে চিনুন। বিকেলে ব্যালকনিতে গল্প করুন। তাঁদের পছন্দের বই উপহার দিন। দিনের একটা সময় সবার জন্য চা আপনিই বানান। উইকেন্ডে স্পেশ্যাল কিছু রান্না করতে পারেন। দেখবেন সহজেই সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-31 16:05:19
Source link
Leave a Reply