হাইলাইটস
- আপনি গর্ভধারণ করছেন না ঠিকই, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আপনি প্রেগনেন্সি ও সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতার কোনও অংশই নন।
- এমনকি যাঁরা স্যারোগেসির সাহায্য বা সন্তান দত্তক নিচ্ছেন, তাঁরাও নিজেকে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার অংশ করে তুলতে পারেন।
রিসার্চ শুরু করুন
আপনি গর্ভধারণ করছেন না ঠিকই, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আপনি প্রেগনেন্সি ও সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতার কোনও অংশই নন। এমনকি যাঁরা স্যারোগেসির সাহায্য বা সন্তান দত্তক নিচ্ছেন, তাঁরাও নিজেকে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার অংশ করে তুলতে পারেন।
প্রত্যাশিত বাবাদের জন্য একাধিক বই রয়েছে। আবার অনলাইনেও এ ব্যাপারে নানান তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা যায়। আপনার সঙ্গীর প্রেগনেন্সির লক্ষণ দেখা দিলেই রিসার্চের কাজে লেগে পড়ুন। তাঁরা কী অনুভব করছেন, তা বুঝতে পারলে নিজের সন্তানের মা-কে আরও ভালো ভাবে সাহায্য করতে পারবেন।
প্রসব যন্ত্রণা থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম এবং সেই নবজাতকের যত্ন নেওয়ার জন্য কী কী করণীয় সে বিষয় আগে থেকে ধারণা করা থাকলে, সুবিধাই হবে। শুধু তাই নয় স্বাভাবিক (ভাজাইনাল ডেলিভারি) এবং সিজেরিয়ান প্রসব, ব্রেস্টফিডিং, শিশুর ডায়পার পাল্টানো, বাচ্চাদের কী ভাবে কোলে নেবেন, ঘুম পাড়াবেন ইত্যাদি সমস্ত বিষয় আগেভাগে জেনে রাখুন।
সুস্থ থাকুন
সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে নিজেকে সুস্থ রাখুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, তা ত্যাগ করুন। দেখা গিয়েছে, প্রেগনেন্সির সময় ধূমপানের ধোঁয়া নবজাতকদের মধ্যে কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
স্বাস্থ্য সম্মত খাবার দাবার খান। এটি আপনাকে সারাদিন ও রাতের পরিশ্রমের শক্তি জোগাবে। ফাইবার সমৃদ্ধ ও ইমিউনিটি বুস্টার খাবার দাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করুন।
নিজের হেল্থ চেকআপ করান। প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রতিষেধক আপনার নেওয়া আছে, কী না, তা একবার মনে করে নিন।
নিজের সঙ্গীর সঙ্গে পেরেন্টিংয়ের বিষয় আলোচনা করুন
কেমন অভিভাবক হতে চাইছেন, সে বিষয় পরিকল্পনা করার সময় এটি। শিশুর জন্য কী কী কিনবেন, দোলনা না বিছানা— কোথায় ঘুম পাড়াবেন? দুজনেই চাকরি করবেন না একজন? সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য কী করবেন? এ সমস্ত বিষয় সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন।
এমন কিছু আলোচনা আছে, যা সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে করার কোনও মানে হয় না। তবে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এর গুরুত্ব বিচার করতে ভুলবেন না। যেমন সন্তানকে কখন, কোন বিষয় বাধা দেবেন বা বকবেন। এ সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট আলোচনা করে রাখুন নিজের সঙ্গীর সঙ্গে।
টিম ওয়ার্ক করুন
নিজেকে একটি টিম মনে করার সময় এটি। আপনি, আপনার সন্তানের মা ও সন্তান সারাজীবনের জন্য একই বন্ধনে বাঁধা পড়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না-থাকলেও আপনারই সন্তানের মা-বাবা এবং এই সত্যটি কখনও পাল্টাবে না। তাই মনে করুন যে আপনি ভালো বাবা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এবং এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে জিততেই হবে।
আপনার সঙ্গী যদি মর্নিং সিকনেসের মতো কোনও সমস্যায় ভুগছেন, তা হলে তাঁকে সাহায্য করুন। তাঁকে সাহায্য করার অর্থ নিজেকে ও নিজের সন্তানকে সাহায্য করা। সঙ্গীকে স্বস্তি দিতে তাঁর জন্য খাবার বানিয়ে দিন, বাড়ির কাজ করেও নিজের পরিবারের যত্ন নিতে পারেন।
কেমন বাবা হতে চান সে বিষয় এখনই ভেবে রাখুন
অনেকেই আছেন, যাঁদের সম্পর্ক নিজের বাবার সঙ্গে ভালো নয়। কিন্তু বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভালো হলে নিজেকে তাঁর মতো করে গড়ে তোলার কথা আপনি ভাবতেই পারেন। আপনার বাবা যদি আপনার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন, তা হলে আপনার টেনশন হওয়াই স্বাভাবিক। নিজের বাবার মতো ভালো বাবা হতে পারবেন কী না, সে বিষয় চিন্তা মাথায় খেলবে। তবে কী ভাবে নিজেকে আদর্শ পিতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন বা এ ক্ষেত্রে কাকে অনুসরণ করবেন, তা আপনিই ঠিক করুন।
অভিজ্ঞ বাবাদের সঙ্গে আলোচনা করুন
আপনার এক, দুজন বন্ধু থাকতেই পারে, যাঁরা ইতিমধ্যে বাবা হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। অভিভাবক হওয়ার চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে তাঁদের কাছ থেকে জানুন।
নিজের সঙ্গীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান
প্রেগনেন্সি ও সন্তান লালনপালন সম্পর্কে নিজেকে উৎসাহিত করতে সঙ্গীর সঙ্গে আপনিও চিকিৎসকের কাছে যান। আল্ট্রাসাউন্ডে নিজের সন্তানকে দেখার অভিজ্ঞতা তো হবেই, পাশাপাশি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রেগনেন্সি-সহ আরও নানান বিষয় জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
এমনকি আপনার কোনও প্রশ্ন থাকলে তার উত্তরও চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে পারবেন। তবে কাজের চাপে যদি এই অ্যাপয়ন্টমেন্টগুলিতে যেতে না-পারেন, তা হলে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী অ্যাপয়ন্টমেন্ট ফিক্স করুন।
যৌন জীবন পাল্টে যেতে পারে, তা স্বীকার করতে হবে
অভিভাবক হওয়ার এই প্রক্রিয়া আপনার যৌন জীবনকেও প্রভাবিত করবে। প্রথম যখন সঙ্গীর কাছ থেকে সুখবর পাবেন, তখন তাঁর প্রতি ভালোবাসা থেকে সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে। আবার প্রেগনেন্সিকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কিছু করার ক্ষেত্রে আপনি নার্ভাস হয়ে যেতে পারেন। এমনকি যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত বা অনুচিত— এই দোটানায় পড়ে যেতে পারেন। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা।
বাচ্চা হওয়ার পর যৌন জীবন শেষ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে বন্ধুবান্ধবদের নানা অভিজ্ঞতা শুনেছেন। বাস্তব হল, প্রেগনেন্সি ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরতে সময় লাগে। এখানে মাত্র ৬ সপ্তাহের রিকভারির কথা বলা হচ্ছে না। সন্তান প্রসবের পর শুধু শরীর সুস্থ হওয়াই শেষ কথা নয়। আপনারা দুজনে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সে বিষয়ও সংবেদনশীল হতে হবে। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে বিরক্ত করে তুলতে পারে। শিশু জন্মানোর পর যে আবেগ অনুভূতি কাজ করে এ সব বিষয় সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন। ঘনিষ্ঠ হওয়া বা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে পরস্পরের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়ও আলোচনা করুন। সন্তান হওয়ার পর অনেক অভিভাবকই একে অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হন।
সন্তান আগমনের আগে যা যা প্রস্তুতি নিতে পারেন
শুধু সন্তানধারণই শেষ কথা নয়। সেই শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য এবং তাঁকে বড় করে তোলার জন্যও প্রস্তুতি দরকার। শিশুর ঘুমানোর স্থান নির্বাচন, তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় বা আপনার শখের সামগ্রী এনে রাখা, অর্থ সঞ্চয়, সন্তানের যত্ন নিতে কী কী করতে হয়, এ সমস্ত কিছু আগে থেকেই জেনে নিন। আবার নিজের ছুটির আবেদন জানানো, হাসপাতালের জন্য ব্যাগ তৈরি করে রাখা ইত্যাদি কাজও গুছিয়ে রাখুন।
সন্তানের মায়ের হয়ে কথা বলুন
শুধু পারিবারিক বিষয়েই নয় বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিজের সঙ্গীর হয়ে কথা বলুন। সঙ্গী কবে কাজে ফিরতে পারবে, সে বিষয় বা বাড়িতে তাঁদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন হয়ে থাকে অনেকেরই। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিজের সঙ্গীকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন, দুজন সুস্থ অভিভাবক বাচ্চার জন্য ভালো।
দায়িত্ব ভাগ করে নিন
প্রেগনেন্সির সময় কী কী করতে হবে সে বিষয় তো আলোচনা করা হল। তবে মনে রাখবেন, সন্তান জন্মের পরের প্রক্রিয়ায়ও অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন না। আপনার ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কী ভাবে নবজাতকের যত্ন নেবেন
১. তাঁদের ডায়পার পাল্টান। শুধু দিনের বেলাতেই নয়, বরং রাতেও নিয়মিত এই কাজ করুন।
২. শিশুকে স্নান করান।
৩. সন্তানের সঙ্গ সময় কাটান।
৪. নিজের সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন।
৫. ঘুম পাড়ানোর সময় বিশেষ একটি ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে শোনান।
৬. বোতল দিয়ে দুধ খেলে আপনিই নিজের সন্তানকে দুধ খাওয়ান। আবার সন্তান শুধুমাত্র স্তনদুগ্ধ পান করলে তার ঢেকুর তুলিয়ে দিন। দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে প্রয়োজনীয় যত্ন নিন।
৭. নিজের সন্তানের মায়ের জন্য খাবার ও পানীয় নিয়ে আসুন।
৮. বাড়ির অন্যান্য সমস্ত কাজকর্মে নিজের সঙ্গীকে সাহায্য করুন।
সেন্স অফ হিউমার বজায় রাখুন
সন্তান বড় করা কঠিন এবং জটিল কাজ। তবে অন্য দিকে এটি মজারও বটে। যে কোনও পরিস্থিতিই হোক না-কেন, হাসির রেখা মিলিয়ে যেতে দেবেন না। যে কোনও ছোটখাটো ঘটনার মধ্যে হাসির খোরাক খুঁজে নিন।
ঘুম
শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম খুব জরুরি। তবে সন্তান জন্মের পর রাতের ঘুম উড়ে যায়। তাই সময়, সুযোগ পেলে ঘুম পুরো করুন। সম্ভব হলে শিফ্টে ঘুমান।
সন্তানের জন্য আপনিও জরুরি
কখনও কখনও আপনি নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা বাতিলের খাতায় মনে করতে পারেন। কোনও না-কোনও সময় কাজে ফিরতে হবে আপনাকে। তখন আপনার মনে হতেই পারে যে আপনি নিজের সন্তানের যত্ন নিতে পারছেন না। নিজেকে খারাপ বাবা ভাবতে শুরু করবেন আপনি। কিন্তু পরিবারের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য আপনাকে বাইরে কাজে যেতে হয়, এটি আপনাকে কখনও খারাপ বাবা করে তুলবে না।
বিশ্বাস করুন, কখনও না-কখনও সেই সুযোগ আসবেই, যখন আপনার সন্তান আপনার সঙ্গে নিজের বিশেষ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবে বা নিজের মনের কথা আপনাকে জানাবে।
পিতৃত্ব একটি দীর্ঘকালীন অনুভূতি। সন্তানের জীবনে আপনার উপস্থিতি একটি উপহার, যা আপনি তাকে এবং নিজেকে দিয়েছেন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-27 16:21:17
Source link
Leave a Reply