হাইলাইটস
- বহুদিন পরে দু চাকায় ভরসা রেখে অজানাকে জানার শপথ নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম কালিম্পং জেলার এক ছোট্ট প্রাচীন গ্রাম গুদারে গাঁও।
- কুমাই থেকে গুদারে গাঁও।
- এই রাস্তায় গাড়ি চালানোর মত অবস্থা এখনো হয়নি।
- গুদারে গাঁও অবধি যদিও যাওয়া যায় কিন্তু এই পথের শেষ প্রান্ত চাপলে টি গাঁও যেতে গেলে দু চাকাই ভরসা।
বহুদিন পরে দু চাকায় ভরসা রেখে অজানাকে জানার শপথ নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম কালিম্পং জেলার এক ছোট্ট প্রাচীন গ্রাম গুদারে গাঁও। কুমাই থেকে গুদারে গাঁও। এই রাস্তায় গাড়ি চালানোর মত অবস্থা এখনো হয়নি। গুদারে গাঁও অবধি যদিও যাওয়া যায় কিন্তু এই পথের শেষ প্রান্ত চাপলে টি গাঁও যেতে গেলে দু চাকাই ভরসা।
এক মাথা মেঘ নিয়ে আমার বন্ধু বিজয় ভাইয়ের এনফিল্ড নিয়ে চলেছি কুমাইকে আরো বেশি করে জানতে অার এর গভীরতা টাকে টেনে ওপরে তুলতে। দুপুরের আহার শেষ করে বিজয় ভাইয়ার সাথে বাইক এ করে বেরিয়ে পরলাম। টপকে চলেছি একের পর এক পাহাড়ী গ্রাম, কুমাই গার্ড লাইন, টপ লাইন, গুদারে গাও পেরিয়ে আরো উপরে চপলেটি গ্রামে গিয়ে যাত্রা শেষ করলাম।
কুমাই পাহাড়ে দুটো সানসেট পয়েন্ট আছে। একটা হিল্লি সান সেট পয়েন্ট আর একটা আরো উচুতে গুদারে গাঁও সান সেট পয়েন্ট। কেউ কারো থেকে রূপে কম নয় । পাহাড়গুলোকে কুয়াশা ঢেকে রেখে আরো রহস্যময় করে তুলেছে। মাঝে মাঝে দুএকটা দোকান। গ্রামের সরল মানুষগুলো অবাক নয়নে আমাদের দেখছে। পথহীন এক পথে আমরা মৃত্যুকে হাতে নিয়ে চলেছি চড়াই উৎরাই গুলো পার হচ্ছি শুধু পাথর আর ধুলোর উপর দিয়ে। একদিকে গভীর খাদকে সঙ্গে নিয়ে।
গুদারে গাও। থামলাম একটা ছোট্ট দোকানে একটু চা পাওয়ার আশা নিয়ে। থাপা বললো দাদা এটা তোমার শহর নয় যে পয়সা দিলেই সব পাওয়া যায়, তবে হ্যাঁ চা দিয়েছিল ওই দোকানের মালকিন দিদি। চায়ের অবস্থা খুবই করুন, চা চাওয়াটাই ভুল ছিল। গরম জলে চায়ের ভুষি সাথে ধোঁয়ার গন্ধ, কিন্তু ভালোবাসাতে ভরা। খুব ছোট্ট এই গ্রামটি, দশ বারোটা কাঠের বাড়ি। গ্রাম ছাড়িয়ে গেলে দূরে দূরে দু চারটে করে বাড়ি আর প্রতি বাড়ির সামনে একটা করে ফুলের বাগান।
যত ওপরে উঠছি তত পাহাড়ী এই পথটা সরু হয়ে আসছিল। একটা জায়গায় রাস্তা আর এগোনোর মত ছিলনা। পুরোটাই খাদ। যে জায়গাটায় থামতে হলো তার নাম চপলেটি গ্রাম। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা এর উদ্যোগে একটা রাস্তা বানানো হচ্ছে এই পথ ধরে যে রাস্তাটা যাবে রঙ্গ ,পাতাং গোদে পর্যন্ত। বর্তমানে এই রাস্তাটা এসে শেষ হয়েছে এই গ্রামে। চপলেটি গ্রাম।
ছয় সাত টা বাড়ি নিয়ে এই গ্রামটি। কুয়াশা ঢাকা পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের সব ব্যস্ততা যেন বিশ্রাম নিচ্ছে। কুমাই পাহাড়ের সব মানুষের আয় বলতে চা বাগানের কাজ আর মানুষের অযত্নে কিন্তু ইশ্বরের পরম যত্নে হয়ে থাকা পাহাড়ের গায়ে ফুলঝাড়ু গাছ। এখান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকার ফুল ঝাড়ু সারা ভারত বর্ষ তথা বিদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রাকৃতির দেওয়া এই সম্পদের কিন্তু স্থানীয় মানুষের কোন অধিকার নেই বড়ো বড়ো ব্যবসাদারদের হাতেই এই ফুলঝাড়ু টেন্ডারের মাধ্যমে রয়ে যায়। স্থানীয় মানুষদের সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এই ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে কোটি টাকার ব্যবসা করছে কিছু বহিরাগত।
দার্জিলিং কালিম্পং শহরগুলিতে যেভাবে প্রশাসন উন্নয়নের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছে সে দিক দিয়ে তেমন ভাবে ডুয়ার্স গরুবাথান ও কালিংপং অঞ্চলের অনামী জায়গা গুলোকে নজর দেয়নি। এই কারণেই আমি বলবো ডুয়ার্সের রাজমুকুট কুমাই পাহাড়টির প্রতি সরকার উদাসীন। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনী থেকে সদ্য সদ্য অবসর নিয়ে বিজয় থাপা এই কুমাই পাহাড়ে প্রথম হোমস্টে তৈরি করে এখানে পর্যটন ব্যবসা শুরু করে, তারপর থেকে লোয়ার কুমাই তে চারটি এবং আপার কুমাই তে গোর্খা হোম স্টে ছাড়া সাহিল হোমস্টে নামে আরেকটি হোমস্টে আছে। মাত্র তিন হাজার ফিট উচ্চতায় ডুয়ার্সের মাথায় কালিম্পং জেলার অন্তর্গত কুমাই নামক এই পাহাড়টি একটি সুন্দর হিল স্টেশন হতে পারে সরকার যদি এই ব্যাপারে একটু এগিয়ে আসে। পথঘাট ও যাতায়াতের সুবিধা ছাড়াও যদি ভিউ পয়েন্ট গুলোকে একটু সাজিয়ে দেওয়া যায়, তবে বছরে হাজার হাজার ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এই পাহাড়ে তাদের সাময়িক আস্তানা খুঁজে নেবে। এই পাহাড়ে অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর দেখার জায়গা আছে।
কুমাই পাহাড়ের ঠিক নিচেই আছে চাপড়ামারি জঙ্গল, আমি কুমাই বহুবার এসেছি এবং পয়সা খরচা করে জঙ্গল সাফারিতে গিয়েও মানুষ যা দেখতে পায় না আমি খুনিয়া মোড় থেকে কুমাই যাওয়ার পথে চাপড়ামারি জঙ্গলের গেট পেরোনোর পরে একবার একটা বিশাল হাতির সামনাসামনি পড়েছিলাম আর একবার একটা বিশাল দেহের বাইসানের সাথে দেখা হয়েছিল তিরিশ ফুট দূর থেকে। তবে আমি কখনোই জঙ্গলে জন্তু-জানোয়ারের সম্মুখীন হতে চাই না কারণ এরা যখন তখন মানুষের উপর আক্রমণ করতে পারে। গরুবাথান ব্লকের অধীন এই কুমাই পাহাড়টির প্রতি রাজ্য সরকার ও আঞ্চলিক প্রশাসন যদি একটু নজর দেয় তবে পর্যটন মানচিত্রে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও রূপসী পর্যটন কেন্দ্র রাজ্য উপহার দিতে পারবে।
আর দেরি না করে চলে আসুন পাহাড়, নদী, ঝর্না চা বাগান আর জঙ্গল নিয়ে রূপের ডালি কুমাই পাহাড়ে। কুয়াশা , মেঘ, আর ফুলের দেশ কুমাই পাহাড়ের গুদারে গাঁও। পাহাড়ের মাথায় একটা খুব সুন্দর রিসর্ট তৈরি হচ্ছে। তুলনাহীনা রূপসী কন্যা এই গুদারে গাঁও আপনার আসার অপেক্ষায় বসে থাকলো।।
(লেখক পরিচিতি: পেশা ভিন্ন হলেই ভ্রমণের টানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বছরভর ভ্রমণেই কেটে যায় তাঁর। ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি প্রায় ১০ বছর।)
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-20 18:59:18
Source link
Leave a Reply