হাইলাইটস
- মুখ আ করে উঠলেই যেন আম আম করে ওঠে।
- হবে নাই বা কেন বস্, ওই হলদে, সবুজ, কমলা রঙের ফলের রসের একটি ছোটো বিন্দু জিভ দিয়ে সুরুৎ করে চেটে নিলেই যে পেটটা খালি খালি লাগে।
- গলা শুকিয়ে আসে। মনে হয় এই আমসূত্রের রহস্য ভেদ করতে না পারলে জীবনটাই বৃথা।
- পা ছড়িয়ে কামড়ে-কুমড়ে, চেটে বা চুষে আম চাখার আনন্দ চোখে দেখা যায় না। অনুভব করা যায়।
আমের আগে অজগর আছে। পরে আছে ইঁদুর ছানা। কোনোটিই খাদ্যের উপযোগী নয়। অবশ্যে ‘অ’-এ অনাদির মোগলাই বা ‘ই’-তে ইন্দুবালার হোটেল থাকলেও বিশেষ কোনও চাপ হত না। আম আদমির আম-রাজ্যে আম সর্বদাই রাজা।
মুখ আ করে উঠলেই যেন আম আম করে ওঠে। হবে নাই বা কেন বস্, ওই হলদে, সবুজ, কমলা রঙের ফলের রসের একটি ছোটো বিন্দু জিভ দিয়ে সুরুৎ করে চেটে নিলেই যে পেটটা খালি খালি লাগে। গলা শুকিয়ে আসে। মনে হয় এই আমসূত্রের রহস্য ভেদ করতে না পারলে জীবনটাই বৃথা। পা ছড়িয়ে কামড়ে-কুমড়ে, চেটে বা চুষে আম চাখার আনন্দ চোখে দেখা যায় না। অনুভব করা যায়।
আম দেখলে তো লোভের চোটে জিভের জল বাঁধ মানতে চায় না, বলি আমাদের দেশে কত রকম আম আছে জানেন? তাঁদের নামকরণের স্বার্থকতা তো দূর কোনটা কী আম তা মনে হয় কেউ বলতেও পারবেন। ফলওয়ালা যা দিচ্ছে তাকেই অমৃত কুম্ভের সন্ধান বলে জিভ ছুঁইয়ে পেটে চালান দিয়ে দিচ্ছেন। তাহলে আম খেতে খেতেই একটু জেনারেল নলেজ বাড়িয়ে নেওয়া যাক। ঘরবন্দি অবস্থায় মন্দ কী?
আম উৎপাদনে আমাদের দেশ বিশ্ব সেরা। কম করে দেড় হাজার রকমের আম এদেশে জন্মায়। তারমধ্যে কিছু আমের স্বাদ এবং গন্ধের তুলনা হয় না। আমের নামটি মালদা নামে মালদা হলে কী হবে এই আমটি প্রধানত বিহারিনী। মানে এর জন্মস্থান বিহার রাজ্যে। এ আমটি সম্পূর্ণ আঁশবিহীন। মুখে দিলেই যেন মাখন। এ আমের চাটনির স্বাদও অসাধারণ। অন্যান্য আমের চেয়ে এই আমের খোসা অনেকটাই পাতলা। আর গন্ধটাও বেশ মিষ্টি।
প্রতিবন্ধি আম ল্যাঙড়া
নামটা একটু কেমন কেমন। তাতে কিছু এসে যায় না। সবুজ খোসা ছাড়িয়ে একটা ছোট্টো কামড় দিলে ল্যাঙড়া নামটাও কানে বাজনার মতো রিনঝিন করে। আমরা বাঙালিরা ল্যাঙড়া নিয়ে অনেক অহঙ্কার করতেও এর জন্মস্থান কিন্তু উত্তরপ্রদেশে। লোকে বলে যিনি এই আম প্রথম ফলিয়েছিলেন তাঁর নাকি একটা পা ছিল না। তাই আমের নামও দেওয়া হযেছে ল্যাংড়া। এই আমটি ডিম্বাকৃতির। পেকে গেলেও এর গায়ের রং সবুজই থাকে।
হিম-সাগরে ডুব দিল মন
হিমসাগর আমের দশা অনেকটা রসগোল্লার মতো। বাংলার একেবারে নিজস্ব আম এটি। কিন্তু ওড়িশার মাটিতেও এই আম ভালোমতো ফলে। তাই সেরাজ্যের সঙ্গে যাবতীয় প্রশংসা ভাগ করে নিতে হয় বাংলাকে। হিমসাগর আম মাঝারি মাপের হয়। এদের গায়ের রং সবুজ আর ভিতরটা একদম হলুদ।
রত্নগিরির সন্ধানে
মহারাষ্ট্রের নামজাদা আম রত্নগিরি। অবশ্য আলফোনসো নামে এর নামডাক বেশি। নামে যেমন রত্নগিরি তেমনই গামেও এটি সেরা। ভারতে এই আমের দাম সবচেয়ে বেশি। রত্নগিরি আম চেনা খুব সহজ। সবুজ আমের মাথার দিকে লালচে আভা থাকলেই বুঝে নেবেন যে এটি রত্নগিরি বা আলফোনসো আম।
শের শাহের চৌশা
চৌশা। নামটা যতই অসভ্য শোনাক না কেন এই আমের স্বাদ কিন্তু অসাধারণ মিষ্টি। উত্তর ভার এবং বিহারে এই আমের বেজায় কদর। কথিত আছে শের শাহ সুরি নাকি সপ্তদশ শতকে এই আমের সঙ্গে ভারতবাসীর পরিচয় করিয়ে দেন। এই আমের গায়ের রং উজ্জ্বল হলুদ।
তোতামুখী তোতাপুরি
সোবজেটে রঙের এই আমটি দেখতে তোতা পাখির ঠোঁটের মতো। কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলাঙ্গানায় তোতাপুরি আম বিখ্যাত। এই আমের স্বাদ খানিকটা টক টকে। কাঁচামিঠা অবস্থায় এই আম খেতে দারুণ লাগে। এই আমের আচার খেতেও সুস্বাদু।
হাপুস আমে
মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটকে হাপুস আম বেশ বিখ্যাত। এই আমের যা দাম তা দেখে হাপুস নয়নে কাঁদতে ইচ্ছে হয় বটে, তবে আমটি কাছে পেলে হাপুশ হুপুশ করে খাওয়া হয়ে যায়। বিদেশের বাজারে এই আম বেশি দামে রফতানি হয়। দেশের বাজারেও এর দাম অনেক। আমটির গন্ধ অন্য সব আমের থেকে একদম আলাদা। গায়ের রং কমলা। ভিতরে এতটুকু আঁশ মিলবে না।
সিন্ধুরার বন্ধুরা
চুরি করে সিন্ধুরা আম খেতে গেলে কিন্তু বিপদে পড়বেন। বিপদ মানে হাতে নাতে ধরা পড়ে যেতে পারেন। আসলে সিন্ধুরা আমের গন্ধ অনেক্ষণ মুখের মধ্যে থেকে যায়। স্বাদে মিষ্টি হলেও হালকা টকের ভাবটাও এই আম থেকে সহজে দূর হয় না। এই আমের শরবত খেতে দারুণ লাগে। আমের রং একপিঠ সবুজ আরেক পিছ লাল। তাই চেনা খুব সহজ।
লাল রঙের পৈরি
গায়ে হালকা সবুজ বা হলুদের ছিদে ফোঁটা থাকলেও পৈরি মূলত লাল রঙের আম। এর স্বাদ টক। গুজরাটে এর জনপ্রিয়তা বেশি। এই আম দিয়ে খুব ভালো আমরস তৈরি হয়।
লোক ঠকানো বঙ্গিনাপল্লি
রত্নগিরি বা আলফোনসোর মতো বঙ্গিনাপল্লি আমও আকারে বেশ বড়। সুস্বাদু হলেও আলফোনসোর ধারে কাছে অবশ্য আসে না। এই আমের গন্ধটি বেশ মনোরম।ডিম্বাকৃতি এই আমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় অন্ধ্রপ্রদেশে। হলদে রঙের রঙ্গিনাপল্লির গায়ে হালকা দাগ থাকে। দক্ষিণ ভারতের অনেক ফল বিক্রেতা বাজারে অনভ্যস্ত ক্রেতাকে আলফোনসো বলে এই আম চালিয়ে দেন। আম কেনা এবং চেনার অভিজ্ঞতা না থাকলে ঠকে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
রসালো রসপুরি
রসপুরিকে বলা হয় ভারতীয় আমের রানি। কর্ণাটকে মহীশূরে এই আমের ফলন ভালো হয়। এই আম থেকে আমদই এবং জ্যাম তৈরি হয়। ডিম্বাকৃতির এই আমের আকারে চার থেকে ছয় ইঞ্চি হয়ে থাকে।
কমলা নীলম
নামে নীলম হলেও এর রং কিন্তু কমলা। আকারে চোটো এবং স্বাদেও অপূর্ব এই আমটি। জুন মাসে এই আমের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।
গোলাকার মালগোয়া
মালগোয়া আম অনেকটা গোলাকৃতি। গায়ের রং সবুজ হলেও তাতে হলদেটে আভা স্পষ্ট। খেতেও সুস্বাদু।
কেশরী কেশর
কেশর নামটা শুনলেই যেন কেমন একটা আভিজাত্য ধাক্কা দেয়। কেশর আমের দামটিও বেজায় আভিজাত্যে মোড়া। দেশের দামি আমগুলির মধ্যে এটি প্রথমসারিতে। আমের ভিতরটি একেবারে কমলা রঙের। শোনা যায় ১৯৩১ সাল সাল নাগাদ নাকি জুনাগড়ের নবাবের উদ্যোগেই এই আমের উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে এই আমের নাম রাখা হয় কেশর। এই আমের গন্ধটিও কেশরের মতোই। গুজরাটের আহমেদাবাদ সংলগ্ন অঞ্চলে এই আমের ফলন বেশি।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-19 16:13:32
Source link
Leave a Reply