বছর তিনেক আগে খুব কাছে চলে গিয়েও তাকে দেখা হয়নি আমার। ওর আকর্ষণ উপেক্ষা করে বেশিদিন এই শহরে টিকতে পারেনি। এক বছর পর আবার চলে গেছিলাম তার কাছে। দুচোখ ভরে তাকে দেখেছিলাম। সেই শুভক্ষণ আজও ভুলিনি। চিসাং।
আজ থেকে তিন বছর আগে প্যারেন থেকে গাড়িতে তোদে যেতে পারিনি কারণ তখন এই রাস্তায় আমার সুইফ্ট দমে পারেনি। পারতো কিন্তু রাস্তা খুবই খারাপ ছিল । সেদিন দেখেছিলাম চিসাং এর রূপ। তবে দুর থেকে। পাহাড়ী ফুলের নন্দন কানন। জরিবুটি মানে আয়ুর্বেদিক ওষুধের পীঠস্থান। নিস্তব্ধ আর নিঃশব্দ মিলে মিশে একাকার। মাঝে মাঝে অচিন পাখির ডাক। দূরে তৃদেশ মানে ভারত, চিন ও ভুটান, এই তিন দেশের আলিঙ্গন্স্থল ডোকালামের পাহাড়চূড়া যা সবটাই বরফ মোড়া। প্রকৃত প্রকৃতি প্রেমিক হলে চিসাং এর প্রেমে পড়তে এক মুহূর্ত লগবে।
চিসাং থেকে আধ ঘণ্টা দূরত্বে দাবেখোলা নদী এটাই তোদে। এখান থেকে ২০ মিনিটে এলাম তাংতা। বৌদ্ধ গুম্ফা চার্চ, এদের রূপ দেখলেই মন কাড়ে ।
গোরুবাথানের মধ্যে বেশ কয়েকটি অচেনা জায়গা আছে যাদের রূপ যারা একবার দেখেছে তারা জীবনেও তাদের ভুলবে না। যেটা আমার হয়েছিল, তাইতো প্রতি বছর ছুটি সেই সব রূপসী জায়গা গুলোর কাছে। চিসাং, তোদেপালা, তোদে, তানতা,প্যারেন, কুমাই, গৈরীবাস, মণ্ডলগাঁও, তিনকাটারি, দলগাঁও এই সব জায়গায় পর্যটনের আদর্শ ভূমি পর্যটকদের স্বর্গ।
দ্বিতীয় বারেও চিসাং পৌঁছে হতাশ হয়েছিলাম, থাকার জায়গা পাইনি । একটাই থাকার জায়গা, হোমস্টে, ৫ টা ঘর, ১২ জন থাকতে পারে তবে ১৮ জনও হয়ে যায়। এক অসাধারণ এই হোমস্টে। প্রতিদিন প্রতিজন ১২০০ টাকা খরচ। এর রূপ দেখে সোজা তোদে চলে এলাম ।
দাবেখোলা নদীর ও পারে ভুটান, মোবাইল টাওয়ার নেই। চিসাং এর অর্কিড দেখতে দেখতে ফিরে চললাম প্যারেন এর রসৌলি দাদার বাড়ির দিক রাত্রের খাওয়ার ও থাকার উদ্দেশ্যে। হটাৎ করে এলে চিসাং আপনাকে গ্রহণ করবেনা।
বোলপুর থেকে কলকাতা ফিরছিলাম। ইলামবাজার এর পথে ছেলে বৌমা বায়না করলো গাড়ি উত্তরবঙ্গ মুখী ঘুরাতে। ছেলের যুক্তিও তাই, সাথে জুড়ল যে এখান থেকে মাত্র তিনশো কি.মি. শিলিগুড়ি, তাই যেতে কোনো অসুবিধা নেই।
ধরে নিলাম মোরগ্রামের রাস্তা। ফারাক্কা, মালদা কিষান গঞ্জ গজলডোবা হয়ে সোজা মালবাজার টপকে রাত্রি ১১ টায় পৌঁছালাম মূর্তির ধারে আমার পরিচিত রিসর্ট এ। আগে থেকে বলা ছিল তাই ঘর ও খাবার দুটোই পেলাম। চালসা থেকে যখন টিয়াবন হয়ে মূর্তি নদীর দিকে যাচ্ছিলাম তখন রীতিমত ভয় লাগছিল, ভাবছিলাম এই বুঝি হাতির সামনে পড়লাম। চালসা টিয়াবন, বাতাবাড়ি এই জায়গা গুলো সন্ধ্যার পড়ে এনাদের চলাফেরার অঞ্চল। রাত টা রিসোর্টে কাটিয়ে পরদিন ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরলাম। খুনিযা মোড় থেকে বাহাতি রাস্তা ধরে চাপড়ামারি জঙ্গলের গেট বাঁদিকে রেখে মৌরি জঙ্গল,দলগাঁও কে ছুঁয়ে সোজা প্যারেন। এখান থেকে তোদে তানতা যাবার রাস্তা ধরে আরো ১২ কি মি গিয়ে চিসাং পৌঁছেছিলাম।
আবার আসবো চিসাং, থাকতে আসবো। বরফ ঢাকা নাথুলা ও ডোকালাম পাহাড় চূড়া দেখবো। সকালের সূর্যে আলোকের ঝর্না ধারায় স্নান করবো, ভোরের পাখির ডাকে শরীর টা কে কম্বলের নিচ থেকে টেনে তুলবো, রাতে শীতল বাতাসের ফিসফিসয়ানি শুনবো।
(লেখক পরিচিতি: পেশা ভিন্ন হলেই ভ্রমণের টানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বছরভর ভ্রমণেই কেটে যায় তাঁর। ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি প্রায় ১০ বছর।)
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-17 19:09:28
Source link
Leave a Reply