ঘরে ঢুকতে হলে চৌকাঠ মাড়িয়ে যে জিনিসটি প্রথম আপনার পা ছুঁয়ে যায় সেটিই হচ্ছে মেঝে। এই মেঝের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে পুরো বাড়িটি। তাই ঘরের সার্বিক সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ নির্ভর করছে এই মেঝের উপরে। সে দৃষ্টিকোন থেকে আদি অন্ত থেকেই ঘরের মেঝে গৃহকর্তার কাছ থেকে একটু বাড়তি যত্ন পেয়ে এসেছে। আর গৃহিনী সেই মেঝেকে মেজে ঘষে সর্বদা চকচকে রেখেছেন। গ্রাম বাংলার মাটির মেঝেকে প্রতিদিন একবার লেপন দিয়ে সর্বদা মসৃন রাখেন বাড়ির গিন্নি। আর শহুরে মেঝেতে ডেটল ছিটিয়ে হাতে শীর্ষেন্দু পড়তে পড়তে ভ্যাকুয়েম ক্লিনার চালান এযুগের আধুনিক গিন্নি। তাই ঘরে ঢুকতে মনযোগ যদি প্রথমেই পড়ে মেঝেতে তবে তো অবশ্যই মেঝেটি তৈরিতে একটু মনযোগী হতে হয়। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এপক্ষের ইন্টেরিয়র অংশে আমরা নজর দিয়েছি মেঝেতে।
মেঝেকে মাজা-ঘষার আগে তৈরির সময়ই আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
১. ঘরের আয়তন আর বাজেটের উপরেই মূলত মেঝের ধরন নির্ভর করে। উন্নত পৃথিবীর অনেক দেশে আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে এই মেঝের ধরন ঠিক করা হয়। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন নয় বলে যে কোনো ধরনের মেঝেই চলতে পারে।
২. ঘরগুলো ছোট ছোট হলে টাইল ব্যবহার না করে মোজাইক ব্যাবহার করলেই ভাল মানাবে। আর যদি খুব টাইলস ব্যবহার করতে মন চায় তবে ফু-ওয়াং এর একধরনের টাইলস পাওয়া যায় যেটা দেখতে মোজাইকের কাছাকছি সেটাও ব্যবহার করতে পারেন।
৩. রুম ভেদে মেঝের ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার ড্রইং রুমে যদি সাদা টাইলস-এর সাথে কালো টাইলসের কম্বিনেশন থাকে, তাহলে অনায়াসে আপনি ডাইনিংএ সাদার সাথে সবুজ কিংবা আরও কোনো জমকালো রঙ বেছে নিতে পারেন। তেমনি শোবার ঘরের দেয়াল যদি নীল হয় তাহলে এরুমে সাদা টাইলসের মাঝে হালকা কোনো রঙের টাইলস বসাতে পারেন। তবে রকমারি টাইলস বসিয়ে ঘরটাকে জবরজং বানিয়ে ফেলবার কোনো দরকার নেই।
৪. ড্রইং রুমে কালো সাদা টাইলসে দাবার ঘরের আদলে একটা অবহ তৈরি করতে পারেন। দেখতে খারাপ লাগবে না। তবে বেস্ট হচ্ছে এক রঙের মোজাইক।
৫. ডাইনিংএ টেবিল রাখার জায়গাটি যদি আগেই নির্দিষ্ট করতে পারেন তবে ওই অংশে একটু গাঢ় রঙের টাইলস দিতে পারেন কার। জায়গাটি একটু বেশী ময়লা হয়। তেমনি কিচেনেও একটু গাঢ় রঙ ব্যবহার করতে পারেন।
৬. বারান্দা যদি একেবারেই খোলা থাকে তবে লালচে একধরনের কম দামী টাইলস পাওয়া যায় যেটি দেখতে একটু এ্যান্টিকস লুক আর ময়লা হলেও সহজে বোঝা যায় না। এই টাইলসটি ব্যবহার করতে পারেন।
পাথর কাটা ঘর
ঘরের দেয়ালে একটা রাফ লুক এখন খুব পরিচিত ইন্টেরিয়র স্টাইল। তবে মেঝেতে রাফ লুক কিন্তু একটা নতুন স্টাইলের জন্ম দিতে পারে। অতীতে আমরা গুলশানের একটা আলিশান বাড়ির ইন্টেরিয়র তুলে ধরেছিলাম। সেই বাড়িটিতেই আমি প্রথমবারের মতো পাথর কাটা খসখসে একধরনের মেঝে আবিস্কার করি। পাথুরে পাহাড়ের গায়ে যে ধরনের খসখসে ভাব থাকে (রাঙামাটির মিলনছড়িতে এধরনের বেশকিছু পাথর আছে) সে বাড়ির শোবার ঘরের মেঝেতেও হুবহু একই ভাব ছিল। শুধু পার্থক্য ছিল উপরের ছাদ টুকু। বাজার ঘুরে এধরনের টাইলসও ব্যবহার করতে পারেন। উল্লেখ্য এধরনের টাইলসে ঘর একটু বেশী ঠান্ডা থাকে।
টাইলস কিংবা মোজাইক যেটাই কেনেন না কেনো, মনে রাখবেন এর খাতির যত্ন করার দায়িত্ব কিন্তু গিন্নির। তাই কেনার সময় তাকে সঙ্গে নিতে ভুলবেন না যেনো।
কাঠের মেঝে
আমাদের দেশের খুব কম জায়গাতেই ভিন্ন ধরনের মেঝে তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এর কারণ মেঝেতে এক্সপেরিমেন্ট করার মতো মানসিকতা আমাদের খুব কম। এরপরও কিছু এক্সক্লুসিভ কাষ্টমারকে টার্গেট করে এখন এদেশের বেশকিছু জায়গাতে এমন কিছু মেঝে তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায় যা আপনার মেঝেকে করবে অনন্য। এরমধ্যে অন্যতম স্টুডিও ফোর্টি ফাইভ। এখানে এমডিএফ (মিডিয়াম ডেন্সিটি ফাইবার বোর্ড) এর মেঝে তৈরির ম্যাটেরিয়াল মিলবে। এটি মেঝেতে ব্যবহার করলে মনে হবে মেঝেটি কাঠের তৈরি। ফার্নিচারের সাথে মিল রেখে এই মেঝে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে খরচের খতিয়ানটা একটু লম্বা হবে ভেবে অনেকেই এড়িয়ে যায় এই উপাদানটি। এছাড়াও স্টুডিও ফোর্টি ফাইভে মেঝে তৈরির আরও বেশকিছু মজার উপাদান মিলবে। যেমন, ফ্লোরের সাথে দেয়াল ঘেষে একধরনের বর্ডার যা মেঝেকে খুব সুন্দর করবে।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ১০, ২০০৯
Leave a Reply