ছেলেদের চুল নিয়ে অনেকে নানা সমস্যায় ভোগে। তখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় চুল। কীভাবে চুলের যত্ন নিলে সমস্যা দূর হবে, অনেকেই তা ঠিকমতো জানে না।
এ সময় আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক। বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণও বেশি, তাই চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি চুল পড়া, চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, চুল ভেঙে যাওয়াসহ বিভিন্ন চর্মরোগও দেখা দিতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগায় চুলের খুশকি। এ থেকেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চুলের যত্নের নানা দিক নিয়ে কথা বললেন পারসোনা এডামসের রূপসজ্জাশিল্পী দেলওয়ার হোসেন। চুলের যত্নে তিনি দিলেন নানা টিপস
চুল সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে চুলে খুশকির পরিমাণ কমে আসবে। শুকনো চুল দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার ভালো করে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান। এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন সচল থাকবে। এতে চুল থাকবে সতেজ ও সুন্দর। মাথা ভেজা অবস্থায় চুল না আঁচড়ানোই ভালো।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন তেল গরম করে মাথায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে চেপে মাথায় তিন-চার মিনিট পেঁচিয়ে রাখতে হবে। এরপর অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাথায় খুশকি হলে পেঁয়াজের রস দিয়ে ভালোভাবে মাথা ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে স্থানে খুশকি রয়েছে, সেখানে এ রস লাগাতে হবে। এরপর শ্যাম্পু লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে রাতে রিঠাফল অথবা চায়ের পাতা ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ওই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
হেয়ার স্যালন থেকে ডিপ কন্ডিশনার ট্রিটমেন্ট অথবা হেয়ার শাইনিং ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া চুলের মধ্যে শুষ্ক ভাব বা জটের আধিক্য দেখা দিলে ড্যামেজড হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। সঙ্গে অন্তত দুবার প্রোটিন চিকিত্সা নিতে পারেন।
কলা, ডিমের কুসুম, আপেল, পেঁপে, আঙুর, কমলা ইত্যাদি ব্লেন্ডারে মিশিয়ে ৩০-৪০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে চুলের রেশমি ভাব ফিরে আসবে।
লম্বা বা বড় চুল রাখতে হলে প্রতি মাসে অন্তত ১৫ দিন পরপর চুলের ডগার ফাটা অংশ কেটে ফেলতে হবে। ডগা ফাটা থাকলে চুলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। লম্বা চুলে খুশকির প্রবণতা বেশি হলে টকদই, লেবুর রস ও নিমপাতার রস একত্রে মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন এভাবে করলে ভালো ফল পেতে পারেন।
চুল শুকাতে যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার এড়িয়ে চলুন, এর অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে। চুলের জট ছাড়াতে মোটা দাঁতের চিরুনি কার্যকর। প্রখর রোদেও চুল শুকানো উচিত নয়, এতে চুলের ডগা ফেটে যেতে পারে।
রাস্তায় চলার সময় লম্বা চুল খোলা না রাখাই ভালো। কারণ, ময়লা ও ধুলোবালিতে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা আবার দীর্ঘ সময় ধরেও ব্যবহার করবেন না।
সপ্তাহে অন্তত একবার হারবাল অয়েল ট্রিটমেন্ট নিলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
চুলের সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে অনেক কিছুই। চুলের যত্নে সচেতনতাই আপনার চুল রাখবে সুস্থ ও স্বাভাবিক।
মাথায় ক্যাপ, টুপি বা হেলমেটের ব্যবহার ও সতর্কতা
মাথা ও চুলকে ধুলোবালি থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন টুপি বা ক্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। যাঁরা মোটরসাইকেল চালান, তাঁদের নিয়মিত হেলমেট ব্যবহার করতে হয়। দীর্ঘসময় হেলমেট, টুপি পরে থাকলে চুলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে চুলের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়্য। বৃদ্ধি পেতে পারে খুশকি। এ ছাড়া হেলমেট বা ক্যাপ ব্যবহারে চুলে ঘাম জমে তা নরম হয়ে যায়; ফলে চুল পড়ে যায়। এসব সমস্যা এড়াতে হেলমেট ব্যবহারের আগে মাথায় পাতলা কাপড়ের স্কার্ফজাতীয় কিছু পরে নিতে পারেন। হেলমেট ব্যবহারের আগে প্রতিদিন সকালবেলা তা রোদে শুকাতে দিতে হবে।
হেলমেট ব্যবহার করলে মাঝেমধ্যে কুসুম গরম তেল ২০-২৫ মিনিট মাথায় ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর ক্যাপ বা টুপি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে পারেন। ফলে ক্যাপ, টুপি, হেলমেট ব্যবহারের পরও আপনার চুলের সমস্যা হবে না। চুলে ঠিকমতো আলো-বাতাস লাগতে দিন। ধুলো এড়িয়ে চলুন, এতে ভালো থাকবে আপনার চুল।
মোছাব্বের রিবন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১১, ২০০৯
Leave a Reply