ফলে বাজারে হেল্থ ড্রিঙ্ক কেনার হুজুগও বেড়ে ওঠে। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি স্টেরয়েড দেওয়া হেল্থ ড্রিঙ্ক দুধে গুলে খেতে শুরু করে আট থেকে আশি। গবেষণা বলছে বাজারের হেল্থ ড্রিঙ্কগুলি সাময়িকভাবে শরীরকে সুস্থ রাখে। আদতে শরীরের বিশেষ উপকার এতে হয় না। বরং তার বদলে ভারতীয় ভেষজ হেল্থ ড্রিঙ্কের ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি।
ভারতীয় ভেষজ হেল্থ ড্রিঙ্কটি বাড়িতেই তৈরি করা যায়। এর পোশাকী নাম ‘হলুদ দেওয়া দুধ’। ইংরেজিতে এরই নাম ”। প্রাচীনকালে ভারতীয় মুনি ঋষিরা এই দুধকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতেন। আজকাল ফাস্ট ফুডের বাজারে সেই প্রাচীন হেল্থ ড্রিঙ্ককে আধুনিক প্রজন্ম অবশ্য পাত্তা দিতে নারাজ।
কিন্তু বিজ্ঞানের পূজারীরা এই প্রাচীয় ভারতীয় ভেষজ হেল্থ ড্রিঙ্কের উপর সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন। আধুনিক ডায়টিশিয়ানরা নিয়মিত পান করার পরামর্শ দেন।
কেন খাবেন এই হলুদ-দেওয়া দুধ?
ভারতীয় সংস্কৃতিতে হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। ঈশ্বরের আরাধনা হোক বা কোনও শুভ কাজ হলুদের ব্যবহার আবিশ্যিক। রান্নার মশলা কিংবা ত্বকের যত্নেও হলুদ ব্যবহার করা হয় যথেষ্ট। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রেও হলুদের গুণাগুণ নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হয়। প্রাচীন কালে কাঁচা হলুদের ব্যবহারে চল ছিল বেশি। বর্তমানে হলুদ গুঁড়োকেই নিত্যদিনের সঙ্গী করে নিয়েছেন ভারতবাসী।
হলুদ আদতে অ্যান্টিসেপ্টিক। কেটে ছড়ে গেলে তাতে হলুদের প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে যায়। ত্বকে অ্যালার্জি, চিকেন পক্সেও হলুদের প্রলেপ দারুণ উপকারী। পেট এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিন হলুদ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই সবজি হোক বা মাছ-মাংস-ডিম, পনির হোক বা ডাল ভারতীয় রান্নায় হলুদ মাস্ট। সাধারণত আদার সঙ্গে হলুদের মিশ্রণে উপকারিতা বেশি। হলুদ দিলে রান্নার রং-ও সুন্দর হয়।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও হলুদের ব্যবহার করা হয়। শরীরে আঘাত বা জখম হলে হলুদ দেওয়া দুধ খেলে দ্রুত রোগ নির্মূল হয়।
ত্বকের মেলানিন দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার।
হিন্দিতে বলে ‘হলদিওয়ালা দুধ’। বাংলায় বলে ‘হলুদ দেওয়া দুধ’। আর আধুনিক প্রজন্ম একে চেনে ‘টারমারিক লাতে’ নামে। নামে কিই বা আসে যায়। কর্মফলই আসল। বিদেশি অচেনা নাম শুনে যদি উপকারী হেল্থ ড্রিঙ্কটি আজকের প্রজন্মের শরীরের প্রবেশ করে তাতে কোনও ক্ষতি নেই। বিশ্বজুড়ে এই ‘টারমারিক লাতে’ খুব জনপ্রিয়। এটি বিদেশে অবশ্য ভারতীয় এই ভেষজ পানীয় হিসেবেই খ্যাত। আসলে ভারতীয় আয়ুর্বেদকে আমরা এড়িয়ে চললেও পশ্চিমী দুনিয়া এতে দুহাতে স্বাগত জানিয়েছে।সম্মান দিয়েছে।
আযুর্বেদ শাস্ত্রে বিশ্বাসীরা এখনও নিয়মিত হলুদ দেওয়া দুধ পান করে থাকেন। আধুনিক ডায়েটিশিয়ানরা প্রতিদিনের ডায়েটে এই হদুল দুধ রাখার পরামর্শ দেন। সেলিব্রিটিরা সুস্থ থাকার উদ্দেশ্যে নিয়মিত এই দুধ পান করে থাকেন।
সকালে বা রাতে দুই সময়ই এই দুধ পান করা যায়। তবে রাতে পান করার পক্ষেই ডায়টিশিয়ানরা রায় দেন। আসলে রাতে হলুদ-দুধ পান করার পর কয়েক ঘণ্টার ঘুমের ফলে শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম পায়। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। ভালো ঘুম হয়, সকালে শরীর-মন তরতাজা থাকে। সারাটা দিন কাজে উৎসাহ মেলে। বিশেষ করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁদের রাতেই হলুদ-দুধ পান করা উচিত। সর্দি-কাশি-জ্বরের হাত থেকেও এই হলুদ-দুধ শরীরকে রক্ষা করে। রাতে নিয়মিত এই দুধ খেয়ে ঘুমোলে ওজন কমে।
তবে হ্যাঁ অতিরিক্ত হলুদ খেলে আবার শরীরে অ্যাসিটি বেড়ে যায়। পেট ফাঁপার সমস্যাও দেখা দেয়।
কীভাবে বানাবেন এই হলুদ দেওয়া দুধ?
দুধ ফুটিয়ে নিয়ে তাতে একচিমটে হলুদ গুঁড়ো, এক চিমটে ডারচিনি গুঁড়ো এবং একচিমটে গোলমরিচ গুঁড়ো ভালো করে গুলে নিন। মিনিট দশেক মিশ্রণটি রেখে দিন। উষ্ণ থাকতে থাকতেই চিনি, মধু বা গুড় মিশিয়ে দুধটা খেয়ে নিন। তবে চল্লিশোর্ধদের চিনি বর্জন করার উপদেশ দেশ চিকিৎসকরা।
ছোটোরা খেতে না চাইলে বলুন ‘টারমারিক লাতে’, বিদেশি নাম শুনেই দেখবেন নিমিষে সাবাড় করে দিয়েেছে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-09 14:57:12
Source link
Leave a Reply