হাইলাইটস
- আগবাড়িয়ে কাজ করা বা সাহাস্যের অভ্যাসটা ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন।
- এতে স্ট্রেস এবং শারীরিক খাটনি কমে। ‘না’ বলতে শিখুন।
- সবার সব নির্দেশ বা চাহিদা মাথা পেতে না মেনে সাধ্য মতো চেষ্টা করুন
কাঁধ, শিরদাঁড়া, কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা। সারাদিন অন্যের মন জুগিয়ে চলতে চলতে মেজাজ তিরিক্ষি থাকে। তার জন্যও সমালোচনা শুনতে হয় তাকে। সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পু করার সময়ও পায়না বিদিতা। পার্লার তো দূরের কথা। কখনও মনে হয় গা হাত ব্যথা দূর করতে মাসাজ কিংবা স্পা নেবে। কিন্তু খরচের কথা ভেবে চুপ করে থাকে।
টাকা পয়সার হিসেব তো তারই হাতে। সকলের খরচ মিটিয়ে যা বাঁচে তা নিজের জন্য খরচ করলে আবার কৈফিয়ত দিতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয় ও যেন পরিবারের ক্রীতদাস। কর্ম করে যায়। ফলের কোনও আশা নেই।
বিদিতাকে প্রতিযোগিতা দিতে পারে রিচাও। সে আবার কর্মরতা। রোজগার করে বটে তবে পরিবারের মন জুগিয়ে চলার দায়িত্ব তাকে নিতেই হয়। বাইরে কাজে যায় বলে মন জুগিয়ে চলার কাজটা যেন আরও বেশি করে করতে হয় তাকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সেন্টিমেন্টাল থেকে ওদের বাড়ির সদস্যরা আজও বেড়িয়ে আসতে পারেননি। তাই সন্ধ্যার চা-টা রোজগেরে বউমার হাতেই খান। এমনকি তোয়াজের অপেক্ষায় থাকেন রিচার স্বামীও। দিনের শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সময় শিরদাঁড়া টনটন করে ওঠে রিচার। শরীর ক্লান্ত। মন আরও ক্লান্ত। কিন্তু সেই ক্লান্তি দূর করার উপায় নেই। তা দূর করতে গেলেই খরচ বাড়বে।
বিদিতা বা রিচারা আমাদের পরিবার কিংবা আশপাশেরই অঙ্গ। প্রত্যেক ঘরে বিদিতা কিংবা রিচাদের দেখা মেলে। যারা অন্যের তোয়াজ করতে করতে নিজের যত্নের দিকটি এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। পরিবারের লোকদের তো সেদিকে খেয়াল রাখার সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাউকে খেয়াল রাখার দরকার নেই। নিজের খেয়াল নিজে রাখুন। হাবেভাবে পরিবারের মানুষদের বুঝিয়ে দিন যে আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে তবেই পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো থাকবেন।
খরচের বিষয়টা অবশ্য ভাববার। কিন্তু খরচ না করেই যদি নিজেকে ভালো রাখা যায় তাহলে?
প্রথমে নিজের অভ্যাসে কিছুটা বদল আনুন। বদল আনতে হবে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে, প্রতিদিনের রুটিন, নিজের সম্পর্কে ধারণা এবং কর্তব্য-দায়িত্বের বোঝা নিয়ে। আপনার কাজে কেউ বিশেষ সাহায্য় করে না। তাই যতক্ষণ না কেউ সাহায্য চাইছেন ততক্ষণ অপেক্ষা করুন। আগবাড়িয়ে কাজ করা বা সাহাস্যের অভ্যাসটা ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এতে স্ট্রেস এবং শারীরিক খাটনি কমে। ‘না’ বলতে শিখুন। সবার সব নির্দেশ বা চাহিদা মাথা পেতে না মেনে সাধ্য মতো চেষ্টা করুন। যেটা পারবেন না সেটা কথার কায়দায় জানিয়ে দিন। প্রয়োজনে সরাসরি ‘না’ বলুন। প্রথম প্রথম এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হতে পারে। কিন্তু দেখবেন ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যরা তাতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তবে আপনাকেও আবেগপ্রবণতা কমাতে হবে।
নিজের যত্ন নিন
রান্না ঘর দিয়ে শুরু করুন। হিসেব করে দেখুন রান্না ঘরের কোন কোন জিনিসপত্র অকারণে কেনাকাটা হয়। অনেক সময়ই কিছু জিনিস দিনের পর দিন পড়ে থেকে শেষে নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয়। সেসবের একটা লিস্ট তৈরি করুন। ভবিষ্য়তে সেগুলো কিনবেন না। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা বাজার না করে বাড়ির সকলকে একই জিনিস বা খাবারে অভ্যস্ত করার চেষ্টা শুরু করুন। রোজ রোজ কেনাকাটার চেয়ে মাসে একবার প্রয়োজনীয় জিনিস পরিমাণমতো কিনে নিন। এসবে খরচ অনেকটা বাঁচবে।
মন ভালো রাখতে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করুন। প্রতিবেশীদের নিজের পরিবারের ব্যাপারে কথা বলতে দেবেন না।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে অন্তত আধঘণ্টা নিজের সঙ্গে কাটান। যোগব্যায়াম করুন। গান শুনুন। কিংবা নিরিবিলিতে একা বসে থাকুন। আর একদিন দু দিন নয় নিজেকে ভালো রাখতে চাইলে এই অভ্যাসটিকে সারাজীবনের জন্য সঙ্গী করে নিন। আর প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই এক গ্লাস জল খান।
পরিবর্তন আনুন রাতের রুটিনেও। টিভি সিরিয়াল দেখতে গিয়ে বেশি সময় নষ্ট করলে প্রতিদিনই বেশি রাতে ঘুমোতে যেতে হবে। তাই সেগুলি দেখা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিন।
পরের দিনের দুপুরের খাবারের একটা বড় অংশ রাতেই তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে অফিস যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো হবে না। বাড়ির কেউ এ নিয়ে আপত্তি জানালে স্রেফ অসহযোগিতা করুন। কদিনের মধ্যে তিনি নিজেই ঠিক হয়ে যাবেন।
মোটের উপর ঘুমের সময় বাড়ান। তিন-চার ঘণ্টা নয়। দিনে আট থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম ঠিকমতো হয় না বলেই শরীরের ক্লান্তি জুড়ে বসে। গা হাত পা ব্যাথা করে। তাই ভালো করে ঘুমোন।
দুপুরে অবশ্যই বিশ্রাম নিন। বিকেলে অতিথি এলে ঘরে আপ্যায়নের ব্যবস্থা না করে অনলাইনে খাবার অর্ডার করে দিন।
দিনের মধ্যে এক থেকে দু ঘণ্টা শুধু মাত্র নিজের জন্য রাখুন। সেই সময়টা নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করুন। বই পড়ুন, গান শুনুন, লিখুন, ঘুরতে যান বা যা ইচ্ছে করুন। সেই সময় পরিবারের কারও কথা ভাববার দরকার নেই।
গালগপ্প বা শাশুড়ি-বউমার টিভি সিরিয়ালের বদলে হাসির ও মজার সিনেমা দেখুন। আর সকলের মতো আপনিও সংসারে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাই সংসারের খরচে আপনার অধিকার আছে। এব্যাপারে নিজেকে দোষি ভাবলে বোকামি করবেন। নিজে রোজগার করলে তো কথাই নেই। সংসারের খরচ থেকেই নিজের জন্য কিছুটা টাকা তুলে রাখুন। পার্লার কিংবা বডি মাসাজের জন্য সেই টাকা খরচ করুন। এটা বিলাসিতা নয়। প্রয়োজন।
নিজের খেয়াল রাখা মানে স্বার্থপরতা নয়। বরং বলা যায় নিজে ভালো থাকলে অন্যকে ভালো রাখা যায় সহজে। তাই নিজেকে স্বার্থপর ভাববেন না। পরিবারের সদস্য বলে মনে করুন। দেখবেন অন্য সদস্যদের যেমন আপনি খেয়াল রাখেন তেমনই নিজের খেয়ালও রাখতে পারছেন সহজেই।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-05 17:39:37
Source link
Leave a Reply