সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি সংস্থা জানিয়েছে যে, মহামারীর সময় বিমানে ওঠার আগে এক নতুন প্রযুক্তি যাত্রীদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার প্রক্রিয়াকে অনেক দ্রুত করবে এবং সমগ্র ভ্রমণ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ করে তুলবে।
সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রথম একটি প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে যা বিমানযাত্রীদের এবং এজেন্টদের মধ্যে ন্যূনতম যোগাযোগের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম করবে। এই সমীক্ষায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন যে, এই প্রযুক্তি মহামারী চলাকালীন ভ্রমণ পরিষেবাকে আরও নিরাপদ করে তুলতে পারে। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা মারিয়ামা ডায়ালো তার এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, এজেন্টদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ সীমাবদ্ধ করতে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিমান যাত্রীদের প্রথমে তাদের ড্রাইভার লাইসেন্সটি ফেসিয়াল স্ক্যানের অর্থাৎ মুখের আকৃতির সাথে যুক্ত করতে হবে।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সিটা আমেরিকা সংস্থার প্রযুক্তিগত কৌশল বিভাগের প্রধান শেরি স্টেইন বলেন, “প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি এই পদ্ধতিটিতে এখন চেক-ইন, ব্যাগ ড্রপ এবং বোর্ডিংয়ে নিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে, টিএসএ অর্থাৎ ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের চেকপয়েন্টটিও যুক্ত করতে সক্ষম হব। আপনি আপনার ড্রাইভার লাইসেন্সটি স্ক্যান করে, একটি ফটো তুলবেন এবং তারপরে আপনা্র কাজ শেষ। এর পর আপনি যে সমস্ত প্রবেশদ্বার গুলো অতিক্রম করবেন সেখানে এই পদ্ধতি কেবল দ্রুত আপনার একটি ছবি তুলে নেবে। এইভাবে আপনার পরিচয়পত্র যাচাই করে, আপনার বোর্ডিং পাস আছে কিনা তা নির্ধারণ করে ফেলবে প্রযুক্তির পদ্ধতি।
এটি বিমানবন্দরে কর্মরত এজেন্ট এবং বিমানভ্রমণকারীদের মধ্যে সংযোগের প্রয়োজন অনেক কমিয়ে দেবার বিশেষ একটি উপায় এবং তিনি বলেন, কিছু মানুষ যারা প্রায়শই বিমানে যাতায়াত করে থাকেন, তারা এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন।বিমান যাত্রী টম পিলসবারি বলেন, “আমি ব্যবসার কাজে অনেক ভ্রমণ করি, এক বছরে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মাইল ভ্রমণ করি এবং আমি নিয়মিত এটা করে থাকি। সুতরাং, যা কিছু আমাকে ভ্রমণ সম্পর্কিত কোনপ্রকার ঝামেলা থেকে বাঁচাবে, সেটি আমার ব্যবসা সংক্রান্ত এই যাতায়াত প্রক্রিয়াটিকে আরও অনেক বেশি সহজ করে তুলবে।” বিমান যাত্রী মিনাল দেশাই বলেন, “যদি এটি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে এটি একটি দুর্দান্ত প্রক্রিয়া হবে এবং প্রতিটি মানুষের জীবনে ভ্রমণ ব্যাপারটা আরও অনেক সহজ হয়ে উঠবে।”
সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক সিটা আমেরিকা দ্বারা নির্মিত এই প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যে অ্যাথেন্স, বেইজিং এবং দোহাসহ বিশ্বের অন্যান্য বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বিমানের জন্য চালু আছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবার জন্য এই প্রথম এই ব্যবস্থা কার্যকরী করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সিটা আমেরিকা প্রযুক্তি কৌশল বিভাগের প্রধান শেরি স্টেইন বলেন, “আমরা এখনও অবধি যা করতে পেরেছি তা হ’ল আমরা কীভাবে এটি দেশের অভ্যন্তরে যে উড়ান ব্যবস্থা চালু রয়েছে সেই সমস্ত যাত্রীদের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারি তার ব্যবস্থা করা, যা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিষেবার ৮০ শতাংশ অধিকার করে আছে।”
সংস্থাটি জানিয়েছে যে, মহামারী চলাকালীন নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি বিমানবন্দরে দীর্ঘ লাইন বন্ধ করতেও এটি যথেষ্ট সাহায্য করবে।“প্রযুক্তিটির অবশ্যই অনেক ভাল দিক আছে। মানুষের মধ্যে সংযোগ কম হওয়ার কারণে এটি অবশ্যই সবার পক্ষে আরও সুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে”।
তবে কনজিউমার রিপোর্টস সংস্থার প্রযুক্তি নীতি পরিচালক জাস্টিন ব্রুকম্যান বলেছেন যে উদ্বেগও রয়েছে।তিনি বলেন, “সুরক্ষা সম্পর্কিত তথ্য লঙ্ঘনের একটি উদ্বেগও রয়েছে। আমরা প্রচুর খবর পেয়েছি এবং দেখেছি যে কম্পিউটার হ্যাক করে অর্থাৎ অননুমোদিত প্রবেশ করার ফলে অনেক তথ্য চুরি যায়। সমস্যাটি গুরুতর আকার নিচ্ছে যখন বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য চুরি হচ্ছে, বায়োমেট্রিকের তথ্য চুরি করে তা নকল করা, উদাহরণস্বরূপ হাতের আঙুলের ছাপগুলিকে অনুকরণ করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ এবং মুখের আকৃতির নকল করাও সম্ভব”। মানুষের জীবনে বায়োমেট্রিক ট্র্যাকিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে, গোপনীয়তার উদ্বেগ মোকাবিলায় এই সংস্থাটি জানিয়েছে যে, যাত্রীদের তথ্য বিমানবন্দরে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয় না এবং বিমানযাত্রা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্বয়ংক্রিয়ভাব সেই তথ্য মুছে যায়।
স্বাস্থ্য – ভয়েস অব আমেরিকা
2021-05-01 22:32:57
Source link
Leave a Reply