হাইলাইটস
- রান্নার রেসিপি হোক কিংবা রাতের খাবারের ফিরিস্তি,
- টাকা পয়সার হিসাব হোক কিংবা বাড়ির আলু, পটল ফুরিয়ে যাওয়ার হিসাব সবই এখন মোবাইল ফোনে আবদ্ধ।
- ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা, ডাক্তার, বিউটিশিয়ান, দর্জি, সবই মোবাইলের খাঁচায় আবদ্ধ
পাঁচ-ছয় বার এক ঘেয়ে সুরে বলতে থাকা শব্দগুলো শুনেই মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল পাপানের। ভোর রাতের দিকে সবে চোখটা লেগেছিল। মোবাইল ফোনের অ্যালার্মে সেটাও মাটি হল।
সারারাত ওয়েব সিরিজ, সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিং আর চ্যাট করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। শরীর আর দেয় না। অথচ অফিস যেতেই হবে। ভোর হতে না হতেই একের পর এক ই-মেইল আর মেসেজ ঢুকছে। আর টুং টাং শব্দে বেজে উঠছে স্মার্ট ফোন। মাঝে মাঝে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু উপায় নেই। এই ফোনের মধ্যেই এখন ওর প্রাণ ভোমরা আটকে। “ফোন বিনে সে যেন মণি হারা ফণি।”
পাপান একা নয়, আধুনিক প্রযুক্তিকে নিজের জীবনের অংশীদার বানাতে গিয়ে এরকম মানসিক যন্ত্রণা আজকাল প্রায় সকলেরই হয়। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত হাতের আঙ্গুলগুলি পাতলা চারকোনা যন্ত্রটার উপর খেলা করে। রান্নার রেসিপি হোক কিংবা রাতের খাবারের ফিরিস্তি, টাকা পয়সার হিসাব হোক কিংবা বাড়ির আলু, পটল ফুরিয়ে যাওয়ার হিসাব সবই এখন মোবাইল ফোনে আবদ্ধ। ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা, ডাক্তার, বিউটিশিয়ান, দর্জি, সবই মোবাইলের খাঁচায় আবদ্ধ। সঙ্গে রয়েছে সামাজিক মাধ্যমের আনাগোনা। অদেখা বন্ধুর সঙ্গে অবান্তর কথা, অন্যের পোস্টে নজর রাখা, নিজের পোস্ট বা ছবিতে কটা লাইক, লাভ কিংবা শেয়ার পড়ল তা নিয়ে উদ্বেগ করা আজকের জীবনের অঙ্গ।
কোনোদিন খেয়াল করে দেখেছেন যে, হাতে ফোনটি না থাকলে নিজেকে কেমন অসহায় বলে মনে হয়?
মনোবিদদের দাবি, এটি একটি মানসিক রোগ। আধুনিক পৃথিবীর বাসিন্দারা এই মহামারীতে আক্রান্ত। এর কোনও টীকা হয় না। কোনও ওষুধ নেই। এর পোশাকী নাম ফোন অ্যাংজাইটি। একটি স্মার্ট ফোন গোটা দুনিয়াকে হাতের মুঠো এনে দিয়েছে। এর জেরে লাভের অঙ্কের শেষ নেই। কিন্তু পাশাপাশি এর জেরে যে ভয়ানক লোকসান হচ্ছে তা অনেকে খেয়াল করেও এড়িয়ে যাচ্ছেন।
স্মার্ট ফোনে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গেম খেলে যে ভয়ানক সময় নষ্ট হচ্ছে তার কুপ্রভাব পড়ছে আপনার দৈনন্দিন জীবনে। কাজে গাফিলতি, অনীহা, আলস্য দেখা দিচ্ছে, বাড়ছে অবসাদ এবং উদ্বেগ। ভার্চুয়াল বন্ধুদের প্রশংসা না পেলে জীবন বৃথা বলে মনে করতে শুরু করেছেন বহু মানুষ। সম্পর্ক ভাঙা গড়ারখেলা চলছে অস্বাস্থ্যকর এবং অনৈতিকভাবে। সংযোগের সুবিধার বদলে স্মার্ট ফোন পরিণত হয়েছে মারাত্মক নেশায়। আর এই নেশা থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে মানসিক রোগ আরও মারাত্মক ভূমিকা নিতে পারেন। বাড়বে আত্মহত্যার প্রবণতাও। সতর্ক করছেন মনোবিদরা।
ধূমপান এবং মদ্যপান যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তেমনই স্মার্ট ফোনের নেশাও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকারক।
নিজে যদি নিজের সমস্যা বুঝতে পারেন তাহলে এখনই সাবধান হন। এই মারাত্মক নেশা থেকে বেরিয়ে আসুন। মেনে চলুন মনোবিদদের কয়েকটি পরামর্শ।
ছুটি নিন
সপ্তাহে অন্তত একদিন মোবাইল ফোন থেকে ছুটি নিন। সোশ্যাল মিডিয়া, নেট সার্ফিং, খবর জানা এমনকি সম্ভব হলে ফোন রিসিভ করাও বন্ধ রাখুন। প্রথম প্রথম অসম্ভব মনে হলেও পরে দেখবেন মনে স্বস্তি পাচ্ছেন।
ঝেঁটিয়ে বিদায়
খেয়াল করে দেখুন তো কোন কোন অকাজের অ্যাপগুলি আপনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন। সেগুলির প্রতি নির্মম হোন। মাঝে মাঝেই কিছুদিনের জন্য সেগুলি আন-ইনস্টল করে ফেলুন। তা সে সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা ডেটিং সাইট কিংবা শপিং অ্যাপ।
শপথ নিন
নিজেই নিজের কাছে ফোন না ছোঁয়ার শপথ নিন। এই যেমন ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে ফোনে হাত দেবেন না। ঘুমোবার সময় মাথার কাছে ফোন রাখবেন না। ঘুম থেকে উঠেই ফোন চেক করবেন না। ফোনে হাত না দিয়েই পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাবার খাবেন, অফিসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে হাত দেবেন না।
‘আন-স্মার্ট’ জীবন বেছে নিন
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও নিজের জন্য আনস্মার্ট জীবন বেছে নিন। ফোনের মধ্যে ভবিষ্যতের কাজের বিবরণ বা প্ল্যান লিখে না রেখে মনের মধ্যে রাখুন। কিংবা ডায়রিতে হাতে লিখে রাখুন। টাকা পয়সা বা অন্য কোনও হিসাব করুন হাতের কড় গুনে। অ্যাপের সাহায্যে যোগাসন বা মেডিটেশন না করে প্রশিক্ষকের সাহায্য নিন। অযথা ভার্চুয়াল বন্ধুদের সঙ্গে খেজুরে আলাপ না করে পরিবার এবং আসল বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমস্ত বন্ধু, ফলোয়ার বা আলোচনার বিষয় ভালো লাগছে না সেগুলি যখন খুশি ব্লক করে দিন। মনে নেতিবাচক চিন্তাকে দূর করুন। পৃথিবীটা বড় সুন্দর। তাকে ছয় বাই আড়াইয়ের পাতলা বাক্সে বেঁধে ফেলবেন না।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-28 18:42:45
Source link
Leave a Reply