সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে লড়াই, ধনী দরিদ্র সব এই লাড়াই এ সমিল। বাঁচার জন্য লড়াই। একটা অদৃশ্য মরণ বাহক জীবাণুর সাথে লড়াই। কথায় লড়াই, ভাষণে লড়াই, সোশ্যাল মিডিয়াতে যে যা পারছে জ্ঞানের লড়াই, বাজার হাটে গিয়ে মাছের জন্যে লড়াই, ওখানে নেই কোনো দূরত্বের বালাই।
শহরের মানুষ নাকি অনেক সচেতন। কোথায় ?
গত ২৩/০৩/২০ তারিখ বিকেল পাঁচটা থেকে কলকাতায় লক ডাউন শুরু হয় আর সারা রাজ্যে এর চারদিন পর থেকে । আমি প্রয়োজনে গত ১৫ তারিখ বেড়িয়েছিলাম বালিগঞ্জ এর দিকে, নিজ গাড়িতে। গঙ্গুলিবাগান থেকে বালিগঞ্জ, কোথাও কোনো পুলিশ আমায় জানতেও চাইলনা যে আমি কোথায় যাচ্ছি। লক ডাউন মানে শুধু ছাড় আছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য অর্থাৎ পাণীয় জল, টেলিফোন, ইন্টারনেট, খাদ্য, সবজি, মুদিখানা পণ্য, হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টার, ওষুধের দোকান ও বিদ্যুৎ পরিষেবা। খোলা থাকবে রেশন দোকানও।
আমি কিন্তু শহর বাসির মধ্যে তেমন সচেতনতা দেখলাম না। ওদিকে দার্জিলিং পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটা গ্রাম, নামটা তার লামাহাটা বস্তি। দার্জিলিং থেকে ২৪ কিমি আর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ৭৪ কিমি দূরে দার্জিলিং পাহাড়ের কোলে ছোট্ট এই গ্রাম। আমি গত ফেব্রুয়ারী মাসে এই গ্রামের পালজর বাবুর বাড়তে চার দিন ছিলাম। তখন ভারত বর্ষের ভিতর এই COVID-19 এর প্রভাব বা সচেতনতার আভাস পাইনি। গেছিলাম ভারত ভুটান বর্ডার। ভুটানের ভিতর একটা ছোট্ট অথচ সুন্দর স্তূপ দেখতে।
ভুটানে প্রবেশ করবার সাথে সাথে আমাকে পুলিস চেক পোস্টে ডেকে নিয়ে গেলো, আমার হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হলো, মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে আমার কপালে হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার যাকে দেখলে একটা খেলনা বন্দুক মনে হবে, সেটা ধরে আমাকে করোনা মুক্ত ঘোষণা করে তারপর ভুটানের ভিতর প্রবেশ করবার অনুমতি দিলো। আমি অবাক হলাম এটা দেখে যে একটা ছোট্ট দেশ অথচ কতো সচেতন এরা।
আমি সেই সময় থেকেই পাহাড়ের মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা দেখেছিলাম। তখনও সোশ্যাল ডিসটেন্স এর ব্যাপারটা ঘোষণা করা হয়নি কিন্তু মুখে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার এইসব দেখেছি গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই।
আমার স্বপ্নের জায়গা এই লামাহাটা গ্রাম। তাকদা চা বাগানের ভিতর ভিতর লুকিয়ে আছে এই গ্রামটি, দূরে দূরে একেকটা ঘর বাড়ি চারপাশে পাইন গাছ পাহারা দিচ্ছে। দূষণমুক্ত আকাশ, নীল আকাশের সামনে ধপ ধপে সাদা কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফের পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার থেকে ছুটে আসা বাতাস এই লামাহাটা গ্রাম টাকে ঠান্ডা শীতল করে রেখেছে। সাড়ে পাঁচ হাজার উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি। এক মিষ্টি ঠান্ডা সারা শরীরে মেখে রেখেছে আমার এই সবুজ গ্রাম।
এক দিন ঝড় থেমে যাবে
পৃথিবী আবার শান্ত হবে,
নচিকেতা চক্রবর্তীর গান টা যেন আজ আমাদের বিশ্বাস। হ্যাঁ, একদিন এই দুর্যোগ, দুঃসময় কাটিয়ে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো। পথিক সেজে আবার পথে নামব। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ আবার ছুটে যাবে প্রকৃতির কাছে। কিন্তু – একটু সাবধানতা অবশ্যই নিতে হবে। পর্যটন সারা বিশ্বের কাছে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। আর ভারতবর্ষের বহু রাজ্য ও বহু জেলা বেচেঁ আছে এই পর্যটন শিল্পের উপর।
আমার প্রিয় পাহাড়ি গ্রাম লামাহাটা বস্তি কিন্তু এই ব্যাপারে আগে থেকেই এগিয়ে আছে। যেখানে শহরের শিক্ষিত মানুষ আমরা এই রোগের গুরুত্ব টাকে হালকাভাবে নিচ্ছি সেখানে দার্জিলিং পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে থাকা একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষজন গত ১১/০৪/২০ থেকে লোকাল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তাদের এই ছোট্ট গ্রামে ব্যারিকেট করে কোন বহিরাগতকে গ্রামের মধ্যে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই গ্রামে প্রায় সাতটা হোমস্টে আছে। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে জীবাণুমুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যা আমরা শহরবাসি পারি না তা ওই গ্রামের মানুষগুলো করতে পারছে। আমার প্রিয় পাহাড়ি ভাই দেন্দ্রুপ লামা আজ আমাকে তাদের এই লড়াই এর ছবি পাঠিয়ে আমাদেরও সচেতন থাকার উপদেশ দিলো। আমি ওই গ্রামের মানুষ গুলোকে সুদূর কলকাতা থেকে স্যালুট জানালাম। হ্যাঁ পাহাড়ি ভাই, আমি দেখেছি তোমরাই পারো দেশকে বহির শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে, আবার এটাও তোমরা দেখালে আমাদের শরীরের শত্রুর হাত থেকে কি ভাবে নিজেকে বাঁচবো তার সচেতনতা টাকে। তোমাদের কুর্নিশ জানাই।
(লেখক পরিচিতি: পেশা ভিন্ন হলেই ভ্রমণের টানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বছরভর ভ্রমণেই কেটে যায় তাঁর। ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি প্রায় ১০ বছর।)
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-28 17:32:21
Source link
Leave a Reply