হন হয়তো। না হলে ঘুমনোর পোজিশন নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত গবেষণা চলে? মানুষ কোন বিছানায়, কীভাবে শুলে কতটা আরাম পাবে তা নিয়ে গোটা বিশ্বে চলছে গবেষণা। সেই গবেষণারই একটা দিক হল সম্পর্ক। মানে গবেষক এবং মনোবিদরা শোওয়ার পোজিশন দেখে আপনার সঙ্গে আপনার সঙ্গীর সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিয়ে দিতে পারবেন। কী ভাবে? তাহলে চলুন আজ এই শয়ণবিলাসিতা নিয়ে একটু আড্ডা দেওয়া যাক।
গবেষক এবং মনোবিদদের মতে ঘমোনোর বা শোওয়ার অবস্থান আপনার সম্পর্কের দৃঢ়তা ব্যাখ্যা করতে পারে। আর প্রত্যেক অবস্থানের রযেছে একটি করে পোশাকী নাম।
শোওয়ার চামচ (স্পুন)
দম্পতি বা প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে এই স্পুন অবস্থানটি খুব জনপ্রিয়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোর অবস্থান। তবে এক্ষেত্রে একজন পাশি ফিরে শোবেন আর অপরজন একই পাশ ফিরে সঙ্গীর স্পর্শকাতর অঙ্গ ছুঁয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে রাখবেন। যাঁরা সম্পর্কে খুব সুখী তাঁদের মধ্যে এই দরনের শোওয়ার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। এতে মানসিক সুখ হয় মাত্রাছাড়া। তাছাড়া পাশ ফিরে ঘুমোনো শরীরের পক্ষেও খুব ভালো। এভাবে শুনে দুজনেরই শ্বাসপ্রশ্বাসে কোনও বাধা হয় না। তবে একটানা অনেক্ষণ এভাবে ঘুমোলে কাঁধে বা হাঁটুতে সামান্য ব্যাথা হতে পারে।
আলগা চামচ (লুজ স্পুন)
স্পুন পোজিশনের মতোই লুজ স্পুন পোজিশন পাশে ফিরে শোওয়ার অবস্থান। তবে এক্ষেত্রে দুজনের শরীর সামান্য আলগা থাকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো ব্যাপারটা থাকে না। সম্পর্ক যদি মাত্র কিছুদিনের হয় তাহলে লুজ স্পুন অবস্থানে ঘুমোনোর প্রবণতা থাকে। এর অর্থ দুজনেই সম্পর্ক আরও গভীর করতে চান তবে সামান্য সময় নিয়ে। শুধু তাই নয় এর আরেকটি ইতিবাচক অর্থ এই যে, দুজনেই দুজনকে স্পেস দিতে চান।
চামচের পিছু-টান (চেজিং স্পুন)
স্পুন পোজিশনের আরেকটি দিক হল চেজ পোজিশন। এক্ষেত্রেই দুই সঙ্গী একপাশে ঘুমোন। আর একজনযদি সামান্য সরে যান তাহলে অপরজনও তাঁর দিকে এগিয়ে যান। একেক সময় এমন হয় যে যিনি ঘুমের মধ্যে ধারের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে তিনি বিছানা থেকে পড়েও যান। আর ঘুমন্ত সঙ্গী সেদিকে কোনঁ হুঁশ থাকে না। তিনিও সঙ্গীকে ধাওয়া করে। শুনতে মজাদার লাগলেও ধপাস করে বিছানা থেকে পড়ে গেলে প্রথমেই রাগটা গিয়ে পড়ে ধাবমান সঙ্গী দিকে। এর অর্থ একজন সঙ্গী সম্পর্কে সামান্য স্পেস চাইলেও অপরজন তাঁকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান।
মুখোমুখি শুইবার (ফেস টু ফেস, টাচিং)
মুখোমুখি ঘুমোচ্ছেন অথচ একে অপরকে ছুঁয়ে নেই। অনেকে বিশ্বাস এমন অবস্থান সামান্য হলেও সম্পর্কে দূরত্বের প্রমাণ। দুজনেই দুজনের মনোযোগ প্রত্যাশা করেন কিন্তু কেউ কারও চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। অথচ দুজনেই দুজনের কাছে সৎ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্স দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছেড়ে একে অপরের সঙ্গে মনের কথা বলুন। মনের চাহিদা শেয়ার করুন। সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
পিঠে পিঠে ঠেকে (ব্যাক টু ব্যাক টাচিং)
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে নয়, এ হল পিঠে পিঠ রেখে। ঠিক যেমন করে প্রিয়জনের ঠোঁটে চুমু খান তেমনই পিঠে পিঠে গভীর স্পর্শ। আর এরকম স্পর্শের ঘুমের অবস্থান দম্পতি বা প্রেমক-প্রেমিকাদের মধ্যে খুব সাধারণ। সাধারণত দুজনের মধ্যে এক বছরেরও কম সম্পর্ক থাকলে এধরনের অবস্থান দেখা যায়। এক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগ থাকে কিন্তু একটু হলেও লজ্জাবোধ কাজ করে। তা শারীরিক সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন।
দুজন দুপিঠে (ব্যাক টু ব্যাক নট টাচিং)
দনজনের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। কিন্তু ঘুমোনোর সময় দুজন দুদিকে মুখ করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা এর পোশাকী নাম দিয়েছেন লিবার্টি লাভার্স। মানে গভীর ভালোবাসা থাকলেও একে অপরকে স্পেস দেন। দুজনেই স্বাধীন। আর সবচেয়ে বড় কথা ঘুমোনোর জন্য এই ব্যাক টু ব্যাক নট টাচিং অবস্থানটি খুবই আরামদায়ক। কোমর এবং শিড়দাঁড়ার পক্ষে ভালো। তবে হ্যাঁ, ঘনিষ্ঠভাবে ঘুমোনোর অভ্যাস থেকে হঠাৎ যদিও এই অবস্থানটি চলে আসে তাহলে বুঝবেন সম্পর্কে ঘাটতি শুরু হয়েছে।
তোমার বুকে মাথা রেখে (ক্র্যাডেল)
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সঙ্গীর বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুম। এরই পোশাকী নাম ক্র্যাডেল একজন চিত হয়ে শোবেন অপরজন তাঁর বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমোবেন। সারারাত আদরের পর এ যেন নিশ্চিন্তে ঘুম। ঘুমের মধ্যেই অবচেতনে সঙ্গীকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসাধারণ ইতিবাচক উদাহরণ। কিন্তু যাই বলুন, এভাবে বুকের উপর সারারাত মাথা রেখে ঘুমোলে দম যে বন্ধ হযয়ে আসবে। তাই প্রথমের কিছু কিছুক্ষণ বুকে মাথা রাখার পর স্বাভাবিকভাবে ঘুমোলে দুজনেরই স্বস্তি।
আমরা দুজন অন্য মেরুর লোক (ক্লিফহ্যাঙ্গার)
ক্লিফহ্যাঙ্গার পোজিশন। অর্থূ একে অপরের থেকে দূরে বিছানার দুই প্রান্তে ঘুমোনো। আজ্ঞে হ্যাঁ, এই দূরত্বই স্পষ্ট করে দেয়ে যে আপনাদের দুজনের মধ্যে মনের দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে গেছে। যদিও স্বাস্থ্যের পক্ষে এভাবে ঘুমোনোটা বেশ ভালো।
কাগজের পুতুল (পেপার ডল)
সঙ্গীর পিঠ জড়িয়ে হাত ধরে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমের নামই পেপার ডল। কখনও গাছে হাত দেওয়া বা পা দিয়ে জড়িয়ে ধরাও এর বৈশিষ্ট্য। মানে ছোটোবেলায় যেমন করে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতেন ঠিক তেমন। এককথায় সুখ এবং শান্তির ঘুম। তবে যাঁদের কমরো ব্যাথা বা রক্তচলাচলে সমস্যা আছে তাঁদের এভাবে না ঘুমোনোই ভালো। পাশাপাশি এতে নাক ডাকার প্রবণতাও বাড়ে।
যে যার মতো (টেথারবল)
এতজন গুশুটি দিয়ে ঘুমোতে ভালোবাসেন, আর আরেকজন ভালোবাসেন সোজাভাবে ঘুমোতে। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যেই একে অপরকে কাছে টেনে নেন। অর্থাৎ সম্পর্কে দৃঢ়তা এবং স্বাধীনতা দুটোই আছে। তবে হ্যাঁ, গুটিশুটি দিয়ে ঘুমোলে গায়ে হাত পায় ব্যথা হয়। আর সোজাভাবে শুলে মেরুদণ্ড আরাম পায়। গায়ে ব্যথাও হয় না।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-23 22:21:41
Source link
Leave a Reply