সমস্যাঃ আমার বয়স ১৯ বছর। ওজন সাড়ে পাঁচ কেজি। উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। ছয় মাস আগে আমার নাক বন্ধ ও হাঁচি হয়েছিল। একজন নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পর সাত দিনের জন্য এলাট্রল ট্যাবলেট দিলেন। যখন কমেনি তখন বিভিন্ন ন্যাজাল, স্প্রে, যেমন অ্যান্টাজল প্লাস, বেকো স্প্রে, সিনোলোন স্প্রে, ট্রাই স্প্রে দেন। এসব যতক্ষণ ব্যবহার করি নাক খোলা থাকে, ব্যবহার ছেড়ে দিলে নাক আবার বন্ধ হয়ে যায়। স্প্রের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিন টেলফাট ডেসলর ট্যাবলেট ব্যবহার করছি। দুই মাস আগে হঠাৎ কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও বুকে চাপ অনুভব করি এবং রাতে কাশি বেশি হয়। মাঝেমধ্যে কাশির জন্য ঘুম থেকে জেগে যাই এবং বুকে বাঁশির মতো শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়।
এ সমস্যার জন্য একজন চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আমাকে কনটিন ৪০০ মিলিগ্রাম অর্ধেক করে খেতে বলেন এবং অ্যাজমাসল এইচএফএ ইনহেলার শ্বাসকষ্ট হলে ব্যবহার করতে বলেন। সাত দিনের জন্য লিভোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট দেন। পরে আরও দুবার সাত দিন করে লিভোফ্লক্সাসিন খাই। কাশি ও শ্বাসকষ্ট ওষুধ ব্যবহারের পরও ভালো হয়নি। অ্যাজমাসল ইনহেলার ব্যবহার করলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট সাময়িকভাবে ভালো হয়। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলে আবার হয়। উল্লেখ্য, আমি তিনবার বুকের এক্স-রে ও কফ পরীক্ষা করিয়েছি। সব স্বাভাবিক।
১০ দিন আগে স্পাইরোমেট্রি করিয়েছি। অবস্ট্রাকটিভ ডিসঅর্ডার বলে রিপোর্ট দিয়েছে। আমার রোগটা কী? আমি কি কখনো ভালো হব না?
মুজিবুল হক
শীলকুপ, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ আপনার চিঠিতে সমস্যার বর্ণনা পড়ে এবং স্পাইরোমেট্রির রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি অ্যাজমা ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সমস্যায় ভুগছেন। অ্যাজমা হলো শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ, যার কারণে শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা এবং কাশির মতো বুকে আওয়াজ হয়। যেগুলোর সবই আপনার আছে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলো নাকের আবরণঝিল্লির প্রদাহজনিত রেশ।
ফলে নাকের আবরণঝিল্লি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও নাক বন্ধ হয়ে যায়। ১০০ অ্যাজমা রোগীর মধ্যে ৮০ জনেরই অ্যাজমার সঙ্গে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকে। কারও অ্যাজমা আগে শুরু হয়, কারও কারও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস আগে শুরু হয়। আবার কারও কারও উভয় রোগ একই সঙ্গে শুরু হতে পারে। তবে উভয় রোগেরই একসঙ্গে চিকিৎসা দরকার।
অ্যাজমা ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস উভয়ই শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। তাই আপনাকে এ রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অবশ্যই প্রদাহ কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টি-ইনফেলামেটরি স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। অ্যাজমার জন্য, যেমন-সেরেটাইড ইভোহেলার, টিকাসেট ইনহেলার, বেক্সিট্রল ইনহেলার যেকোনো একটি নিয়মিত বিরামহীন ব্যবহার করতে হবে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের জন্য আপনি যে ন্যাজাল স্প্রেগুলো ব্যবহার করছেন, তার যেকোনো একটি নিয়মিত ও বিরামহীন ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেট ১০ মিলিগ্রাম নিয়মিত খেতে হবে। সঙ্গে লং অ্যাকটিং থিওফাইলিন ট্যাবলেটও নিয়মিত খেতে হবে, যা আপনি কনটিন ৪০০ মিলি করে খাচ্ছেন।
এ ছাড়া কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব করলে আপনি প্রয়োজনমতো সালবিউটামল ইনহেলার, যেমন-ভেনটোলিন, অ্যাজমাসল এইচএফএ বা সালটুলিন ব্যবহার করতে পারেন। আপনার নাকের সমস্যার জন্য নিয়মিত স্টেরয়েড ন্যাজাল স্প্রের পাশাপাশি অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট ও কিটোরিফেন-জাতীয় ট্যাবলেট সেবন করতে হবে।
নিয়মিত ওষুধ নেওয়ার পাশাপাশি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, কী করলে বা কী কারণে আপনার এ সমস্যাগুলো হচ্ছে। যাকে আমরা বলি ট্রিগার ফ্যাক্টর বা উত্তেজক। সেগুলো চিহ্নিত করে যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।
অবশ্যই আপনি ভালো হবেন এবং আপনার সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে ওষুধের ধরন, সঠিক পরিমাণ ও মাত্রার জন্য অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· মো· দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৪, ২০০৮
Leave a Reply