হাইলাইটস
- অনেকেই আছেন যাঁরা একাকীত্ব পছন্দ করেন।
- একা ঘুরতে যাওয়া, শপিং করা, সিনেমা দেখা, বই পড়া,
- গান শোনা কিংবা সোলো ডেটে যাওয়ার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট।
- এটা একধরনের পছন্দ
শুনতে মজার মনে হলেও পয়লা বৈশাখ আজকাল ১লা বৈশাখে পরিণত হয়েছে। হয়তো মনের অবচেতনের একাকীত্বই পয়লাকে ১লা-তে পরিণত করেছে।
অনেকেই আছেন যাঁরা একাকীত্ব পছন্দ করেন। একা ঘুরতে যাওয়া, শপিং করা, সিনেমা দেখা, বই পড়া, গান শোনা কিংবা সোলো ডেটে যাওয়ার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট। এটা একধরনের পছন্দ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এই একাকীত্ব হাঁফিয়ে ওঠেন। বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন হীন ভাবে থাকতে থাকতে অবসাদে চলে যান। যার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতাও পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এখন আবার জুটেছে করোনা মহামারি। রোগের ভয়ে কিংবা লকডাউনের জেরে একাকীত্বের হাল বেহাল। অফিসে কিংবা মাঝে মধ্যে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যেটুকু দেখা হত সেটাও একরকম বন্ধ।
অবসাদের কারণে জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা এমনিতেই বেশি। আর এই মহামারীর জেরে একাকীত্বের প্রকোপ এতটাই বেড়েছে যে সেদেশে অবসাদে আত্মহত্যার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ভারতে আত্মহত্যার হার খুব বেশি না হলেও মানসিক কষ্ট বেড়ে পাল্লা দিয়ে। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি কিছুই আর একাকীত্বের কষ্ট ভোলাতে পারছে না। ফলস্বরূপ অনেকেই নেশাকে আশ্রয় করছেন। পিছিয়ে নেই মধ্যবিত্তরাও। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে মধ্যবিত্তদের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা মাত্রাধিক বেড়েছে। এর কারণ সেই একাকীত্ব।
একাকীত্বে ভোগার মারাত্মক ফলের কয়েকটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক। সুশান্ত সিং রাজপুত, পারভিন বাবি, ইন্দর কুমারের মতো বলিউড লতারকারা একাকীত্বের শিকার ছিলেন। একেক জনের সমস্যা ছিল একেক রকম। এসব নিয়ে বিতর্ক হযেছে অনেক। কিন্তু আপনি তো আর এঁদের সেলিব্রিটি নন। আপনার সমস্যা আপনাকেই মেটাতে হবে। আমরা বরং একটু সাহায্য করতে পারি।
সুখের সন্ধানে
ছোটোবেলায় বইয়ে পড়েছিলেন “মানুষ সমাজবদ্ধ জীব”। সমাজে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা তাঁর জিনগত। তাই হঠাৎ করে সমাজ থেকে বেরিয়ে গেলে তা মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে বইকি। তাই নিজের অবসাদ এবং জেদকে দূরে সরিয়ে রেখে দিন। পুরোনো বন্ধু এবং আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ শুরু করুন। পারলে সপ্তাহে একবার বা মাসে দুবার করে তাঁদের সঙ্গে দেখা করুন। হলফ করে বলতে পারি সকলের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়ার পর নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখি মানুষ বলে মনে হবে। তবে হ্যাঁ, বাড়ি ফেরার সময় “আবার একা হযে যেতে হবে” এমন চিন্তা না করে পরে আবার কবে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে সেকথা ভাবুন। মন থেকে নেতিবাচক ধারণা ছুঁড়ে ফেলে দিন। দেখবেন ভালো থাকবেন।
ভার্চুয়াল সম্পর্ক
অনেক সময় সকলের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা সম্ভব হয় না। কুছ পরোয়া নেই। ভার্চুয়াল সম্পর্কই পোক্ত করে ফেলুন। গ্রুপ চ্যাট, ভিডিও কতলিং এবং ফোনালাপে ব্যস্ত থাকুন। রোজকার স্বাভাবিক কথাবার্তা বলুন। দেখবেন একাকীত্ব জানালা দিয়ে পালাবে।
গানে বাড়ি ভরিয়ে দিন
বাড়িতে একা লাগছে?
মন খারাপ করবেন না। গান শুনুন। গান যে কোনও মানসিক রোগেরই মোক্ষম উপসম। আজকাল অডিও স্টোরিও বেশ জনপ্রিয়। তাই প্রিয় লেখকের গল্প উপন্যাসের অডিও রিডিং শুনুন। দেখবেন মন ভালো হয়ে গেছে। সিনেমা বা টিভি দেখুন। তবে সমসায়িক টিভি সিরিয়াল না দেখে পুরোনো নস্টালজিক ধারাবাহিক বা অনুষ্ঠানগুলি দেখুন। আধুনিক প্রযুক্তি পুরোনোকে ফের বর্তমানে নিয়ে এসেছে তাই বিবাহ অভিযান বা আবার যকের ধন হোক কিংবা সুরভি-রামায়ণ-মহাভারত ইচ্ছে মতো অনুষ্ঠান দেখুন।
নতুন বন্ধু খুঁজুন
পুরোনো কেউ হাতের নাগালে নেই? তাতে কী হয়েছে? নতুন বন্ধু খুঁজুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিন। পছন্দ হলে দেখাও করতে পারেন। এমনকি যে বয়স যাই হোক না কেন ডেটিং আ্যাপগুলি ব্যবহার করে ডেট-এও যেতে পারেন। পছন্দ না হলে পরের বার আর যাবেন না। ব্যস্, হয়ে গেল। পাড়ার অনুষ্ঠান বা বিল্ডিং কমপ্লেক্সের সমাবেশে সক্রিয়ভাবে যোগ দিন। একাকীত্ব দূর করার এটি কিন্তু ভালো দাওয়াই।
বেড়াতে যান
সঙ্গী নেই বলে বেড়াতে যাওয়া হয় না। এই ধারণাকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিন। মনে আত্মবিশ্বাস আনুন। টিকিট কেটে, হোটেল বুক করে একা একাই বেড়াতে চলে যান। তার জন্য ইন্টারনেটে সড়গড় হলেই হবে। নতুন জায়গায় একা একা ঘুরলে অনেক নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। মনের মিল হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। এঁরা একাকীত্বের সঙ্গী হতে পারেন।
ইন্টারনেটের জালে ধরা দিন
ও হ্যাঁ, এই দরকারি কথাটাই তো বলা হয়নি। একাকীত্ব কাটানোর আরেকটি মোক্ষম ওষুধ হল ইন্টারনেট। একবার এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ুন দেখবেন গোটা বিশ্ব আপনার হাতের মুঠোয়। তবে হ্যাঁ কোনও অভ্যাসই অতিরিক্ত ভালো নয়।
পুরোনো অভ্যাস ঝালিয়ে নিন
মনে করে দেখুন তো একটা সময় আপনার সখ কী কী ছিল? নাচ, গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, গল্প বা কবিতা লেখা, সেলাই করা, হাতের কাজ করা এরকম অনেক কিছুরই হয়তো সখ ছিল আপনার। একাকীত্বে না ভুগে সেই সখগুলিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলুন।
পোষ্যকে সঙ্গী
ইচ্ছে হলে বাড়িতে একটু পোষ্য রাখতে পারেন। দেখবেন ওর পিছনেই সারাদিন কেটে যাচ্ছে। এছাড়াও গাছের নেশা করতে পারেন। নিজের হাতে গাছ লাগিয়ে তার যত্ন নেওয়া কিংবা ফল বা ফুল উৎপন্ন করার আনন্দই আলাদা।
সবথেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, সবসময় মনে রাখবেন কোনও অবস্থাই স্থায়ী নয়। একা আছেন মানে সারাজীবন একাই থাকবেন এমন কোনও মানে নেই। কেউ না থাকলে নিজেই নিজের সঙ্গী হন। দেখবেন আপনার আত্মবিশ্বাস এবং ইউনিকনেস দেখে লোকে আপনাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-20 17:01:18
Source link
Leave a Reply