সমস্যাঃ আমার বয়স ২২ বছর। আমি দুই বছর ধরে মানসিক সমস্যায় খুবই কষ্ট পাচ্ছি। সমস্যাগুলো হচ্ছে আমি যখন ঘর থেকে কোনো জায়গায় যাই তখন মনে হয় ঘরের দরজা বন্ধ করিনি। চুলায় কিছু রান্না বা গরম করে সুইচ বন্ধ করে আসার পরও মনে হয় সুইচ বন্ধ করা হয়নি। রাস্তায় চলাচলের সময় কোনো জায়গায় টয়লেট বা নোংরা কিছু দেখলে তা আমার চোখে সব সময় ভাসে। সমস্যাগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছি এবং আমার স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারছি না। এ অবস্থায় আমাকে পরামর্শ দিলে খুবই উপকৃত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শঃ আপনি যে সমস্যায় ভুগছেন, তা সম্ভবত কিছুটা আপনার ব্যক্তিত্বের কারণে আর কিছুটা মানসিক অসুস্থতার কারণে হচ্ছে। আপনি নিখুঁত প্রকৃতির মানুষ। সব কাজই আপনি সঠিক ও সুন্দরভাবে করতে চান। না হলে শান্তি পান না। সে জন্যই ওই উপসর্গগুলো আপনার মধ্যে দেখা দিচ্ছে। আপনি নিজেই নিজেকে বোঝান যে আসলে কেউই সব কাজ একদম নিখুঁতভাবে করতে পারে না। কোনো না কোনো ক্ষেত্রে তাকে ছাড় দিতেই হয় বা কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আপনি সেটা পারেন না বলেই এ ধরনের অস্থিরতা আপনার মধ্যে রয়েছে। একে অবসেসিব কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বলে।
আপনি প্রতিদিন স্থির বসে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভাবুন। যে অস্বস্তিগুলো আপনার মধ্যে হচ্ছে সেগুলোকে প্রশ্রয় দিলে তা আরও বাড়বে। আর অহেতুক চিন্তাগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেললে অস্বস্তি আর হবে না। এতে সাময়িকভাবে টেনশন বাড়লেও পরে অবশ্যই তা আস্তে আস্তে কমে আসবে। এভাবে সমস্যা না কমলে আপনি ট্যাবলেট অ্যানাফ্রানিল বা ক্রোফ্রানিল ২৫ মিলিগ্রাম রাতে একটি করে সাত দিন সেবন করুন।
এতেও সমস্যা না কমলে দিনে তিনবার করে দুই সপ্তাহ সেবন করুন। এর পরও অবস্থার উন্নতি না হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন। ওষুধ খাওয়ার আগে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে নিশ্চিত হয়ে নিন। ওষুধ খাওয়ার চেয়ে মানসিকভাবে সমাধান করতে পারলে এ ধরনের সমস্যা নিরসনে ভালো কাজ হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা· হেদায়েতুল ইসলাম
সাবেক পরিচালক
ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা
গেস্ট টিচার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৮, ২০০৮
Leave a Reply