ওষুধ নিয়ে কথা
সুভাষ সিংহ রায়
ফার্মাসিস্ট
আমাদের দেশে অনেক পেপটিক আলসারের রোগী আছে। পেপটিক আলসার হচ্ছে খাদ্যনালির শেষাংশে, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম ভাগের ক্ষত। এটা হওয়ার কারণ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও প্রোটিন ভাঙার উৎসেচক পেপসিনের মিলিত আক্রমণ। ঘা হওয়ার আগে শুরু হয় প্রদাহ।
এ প্রদাহের কারণ মূলত তিন ধরনেরঃ * হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি জীবাণুর সংক্রমণ। * কিছু নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি) ব্যথার ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার। * অপারেশনের ফলে অথবা পাকস্থলীর বহির্গমনের পথের অস্বাভাবিকতার ফলে পিত্তরস দিয়ে পাকস্থলীর প্রদাহ।
এবার দেখা যাক হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি জীবাণু কীভাবে কাজ করে। এটি প্রথমে পাকস্থলীর আবরণীর তলায় বাসা বাঁধে এবং নিঃসৃত উৎসেচক পাকস্থলীর ইউরিয়াকে অ্যামোনিয়ায় পরিবর্তিত করে। এবার এর থেকে নিঃসৃত একটি বিষাক্ত পদার্থ স্থানীয় প্রদাহ শুরু করে। এ জীবাণু পাকস্থলীর শেষ ভাগে প্রদাহ শুরু করে এবং গ্যাসট্রিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই গ্যাসট্রিন আবার পাকস্থলীর অ্লক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ‘ত্রিপল থেরাপি’ নামে খ্যাত চিকিৎসাপদ্ধতি খুবই জনপ্রিয়। জীবাণুনাশক ওষুধ হিসেবে তিন রকম ওষুধের এক মিশ্রণ ১৪ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়। ১৪ দিন ব্যবহারের পর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পাকস্থলী জীবাণুমুক্ত হয় এবং তারপর ছয় থেকে আট সপ্তাহ অ্ল নিঃসরণ কমানোর ওষুধ খেলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
এ ক্ষত সম্পূর্ণ সেরে গেলেও ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে দুই বছরের মধ্যে আবার ফিরে আসে। অধূমপায়ীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সাত বছরের মধ্যে আবার ফিরে আসবে, যা আগের মতো ‘ত্রিপল থেরাপি’তে ভালো হয়ে যাবে সেবারের মতো।
বারবার ঘা হওয়া নির্ভর করে ওই ব্যক্তির পাকস্থলীর অ্লক্ষরণকারী কোষের মোট সংখ্যার ওপর।
তার ওপর ধূমপান ও অতিরিক্ত মদপান সরাসরি আবরণীর ক্ষতি করে। আর ওই আবরণীতে যদি আগেই প্রদাহ থাকে তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই ঘায়ে পরিণত হয়।
মনে রাখা দরকার, ব্যথা কিংবা জ্বরের ওষুধ পাকস্থলীর আবরণের বাইকার্বোনেট স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে আবরণীর মধ্যে অম্ল ও পেপসিন ঢুকে পড়ে। ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাই ওইসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা বিপজ্জনক।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৮, ২০০৮
Leave a Reply