ডা· শামস মোহাম্মদ নোমান
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
ছানি পড়া কী
আমাদের চোখে স্বচ্ছ একটি লেন্স বা দর্পণ রয়েছে। যার ভেতর দিয়ে আলো গিয়ে চোখের পেছনের রেটিনায় বা দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশে গিয়ে পড়ে এবং দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। কাচ যেমন অস্বচ্ছ হয়ে গেলে এর ভেতর দিয়ে কোনো কিছু দেখা যায় না, তেমনি চোখের লেন্স যদি অস্বচ্ছ হয়ে যায়, চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। ছানিরোগ হলো আমাদের দেশের রিভারসিবল বা নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের প্রধান কারণ।
ছানি কেন হয়
বয়সজনিত লেন্সের গঠনগত পরিবর্তন হলো ছানিরোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়া চোখের আঘাত, ঘন ঘন চোখের প্রদাহ, অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন-থেরাপি, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস প্রভৃতি কারণেও ছানিরোগ হতে পারে।
কোন বয়স ছানিরোগ হয়
সাধারণত বয়স্ক লোকের চোখে ছানি পড়ে। তবে উপরোল্লিখিত কারণে যেকোনো বয়সে ছানিরোগ হতে পারে। পারিবারিকভাবে ছানিরোগের ইতিহাস থাকলে এবং গর্ভবস্থায় টর্চ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে জ্নগত ছানি নিয়েও বাচ্চার জন্ম হতে পারে।
ছানির লক্ষণ
ধীরে ধীরে দৃষ্টির ক্ষমতা লোপ পাওয়া, চশমার পাওয়ার পরিবর্তিত হওয়া, আলোর চারদিকে রংধনু দেখা, একটি জিনিসকে দুই বা ততোধিক দেখা, দৃষ্টিসীমানায় কালো দাগ দেখা, আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসা প্রভৃতি ছানিরোগের লক্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া পুরোনো ছানি পেকে চোখে ব্যথা হতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ছানিরোগের কারণে চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে।
ছানি প্রতিরোধ
যেহেতু বয়সজনিত পরিবর্তনের কারণে ছানিরোগ হয়, তাই বয়সজনিত ছানিরোগ প্রতিরোধে তেমন কিছু করার নেই। তবে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, চোখের প্রদাহের ত্বরিত চিকিৎসা, অনিয়ন্ত্রিত হরমোন-জাতীয় ওষুধ ও ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে ছানিরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ছানির চিকিৎসা
মনে রাখতে হবে, কোনো ওষুধসেবনে ছানিরোগের প্রতিকার হয় না। শুধু অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করতে হয়। সবচেয়ে যেটা আশার কথা, ছানি পড়া ছাড়া চোখে যদি আর কোনো সমস্যা না থাকে (বিশেষ করে রেটিনা ও ভিট্রিয়াসে), তাহলে অপারেশনের মাধ্যমে আবার আগের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়।
ছানি অপসারণের পর কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়, যা আগের স্বচ্ছ লেন্সের মতোই কার্যকর। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ছানি অপারেশন এখন অনেক কম সময়ে এবং সেলাই ছাড়াই করা সম্ভব। এর একটি হলো ্নল ইনসিশন ছানি অপারেশন, যা (এসআইসিএস) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মাত্র ৫-৬ মিমি কেটে, তার ভেতর দিয়ে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়।
আর একটি হলো ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন টেকনিক।
এটি আরও আধুনিক প্রক্রিয়া, যাতে আরও অল্প কেটে তার মাধ্যমে ফ্যাকো মেশিন ব্যবহার করে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। ফ্যাকো সার্জারির সুবিধা হলো, তাড়াতাড়ি অপারেশনের পর রোগী তার স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারে এবং অপারেশনের পর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন অনেক কম হয়।
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিএনএসবি) স্বল্প খরচে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সেলাইবিহীন, আধুনিক ছানি অপারেশনের (এসআইসিএস এবং ফ্যাকো) ব্যবস্থা রয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৮
Leave a Reply