- ১৬–২০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জটিল খাদ্যাভ্যাসের কারণে বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে জেনারেল চেকআপ করানো উচিত।
- এই বয়সী ছেলেমেয়েদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না, সেগুলো জানা জরুরি।
- এ বয়সে অনেকেরই অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন দেখা দেয়।
১৬ থেকে ২০ বছর। এই বয়সটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য কৈশোর থেকে যৌবনের শুরুর এই সময়ে প্রত্যেক ছেলেমেয়েরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। প্রতিবছর নিয়ম করে ছেলেমেয়ের হেলথ স্ক্রিনিং করানো উচিত। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, অনেকেই এ বয়সে খাবারদাবার কিংবা যাপনে নানা অনিয়ম তারা করে।
অনেকেই সুষম খাবারের বদলে ফাস্ট ফুড বা রিচ তৈলাক্ত খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ে। ঠিকঠাক ঘুমায় না। এর প্রভাব তাদের শরীরে পড়ে। স্বাস্থ্যের অবনতি হয়, যা খোলা চোখে দেখা যায় না। ভবিষ্যতে নানা জটিলতার সৃষ্টি করে।
এ জন্য এই বয়সী ছেলেমেয়েদের বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে জেনারেল চেকআপ করানো উচিত।
আমাদের দেশে হেলথ স্ক্রিনিং নিয়ে অতটা কেউ ভাবে না। অথচ ডাক্তারের কাছে গেলে বুঝতে পারবেন আপনার হার্টের কোনো সমস্যা বা সাধারণ কোনো সমস্যা আছে কি না।
১৬–২০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা আছে কি না, সেটা জানা জরুরি। সঙ্গে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না, সেগুলোও জানা জরুরি।
এই বয়সী ছেলেমেয়েদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা আছে কি না, সেটা জানা জরুরি! সঙ্গে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না, সেগুলোও জানা জরুরি। অনেকের পারিবারিক কারণে বা খাদ্যাভ্যাসের অনিয়মের কারণে উচ্চরক্তচাপও হতে পারে। এ বয়সটিই উপযুক্ত সময় জানার যে কীভাবে সুষম খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। না করলে কী হতে পারে বা কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে সমাধানের জন্য কী করা উচিত।
সমস্যা পাওয়া গেলে সেগুলো পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে হলে সেটা করতে হবে। আর এ জন্য আপনাকে কোনো স্পেশালিস্টের কাছে শুরুতেই যেতে হবে না। জেনারেল ডাক্তার দেখানোর পর তিনি বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দিলে তখন স্পেশালিস্টের কাছে যেতে হবে।
সাধারণ চেকআপ আর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা আপনার পাড়ার ডাক্তাররাই করতে পারেন কম খরচে।
যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেগুলোও পুষে রাখবেন না। আমাদের অনেকেরই অ্যালার্জি, অ্যাজমা ইত্যাদি সমস্যা আছে। সাইনাসের ইনফেকশন, কান পাকা, সর্দি, কাশিতেও মোড়ের ডাক্তারকে দেখান প্রথমেই। যথাযথ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাবেন। যদি ঠিক না হয়, তখন স্পেশালিস্ট দেখাবেন। তবে রোগ পুষে রাখা যাবে না।
এ বয়সে অনেকেরই অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশনও দেখা দেয়। যদি মন খারাপ লাগে বা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকে বা কোনো কাজে মন বসাতে না পারে, পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়, কিছুই ভালো না লাগে, জীবনের ওপর বীতশ্রদ্ধ লাগে, মনে হয় জীবনের কোনো মানে নেই! মনে হয় জীবন রেখে কী লাভ? কারও ওপর প্রতিহিংসা চাপে মনে—এসবই ডাক্তারকে জানাতে হবে। তাঁরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। না পারলে জেনে নিতে হবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে কি না।
অনেকের ভুল ধারণা সাইকিয়াট্রিস্ট মানে পাগলের ডাক্তার। আসলে তা নয়। পাগল বলতে আমরা যা বুঝি, তাদের বেশির ভাগই সিজোফ্রেনিক। তারাও আসলে পাগল নয়। এটাও একটা রোগ এবং তার চিকিৎসা আছে। তবে সাইকিয়াট্রিস্টদের কাজ অনেক বিস্তৃত। তাঁরা শুচিবায়ু থেকে শুরু করে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন এবং আরও অনেক রোগের চিকিৎসা করেন। অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন মানে পাগল নয়। অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশনের অনেক চিকিৎসা আছে; আর এগুলোও হাই ব্লাড প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের মতো একেকটি রোগ এবং এসবের চিকিৎসায় শতভাগ রোগীই সুস্থ থাকে। তাই এসবকে অবহেলা করবেন না। ভাববেন না শুধু মন খারাপ-সুখের অসুখ বা তেমন কিছু। এরাও অন্য সব রোগের মতোই সাফার করে। আর এদেরও অধিকার মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করা। সেটা করলে এরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে, সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারে, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
কৈশোর আর যৌবনের এই বয়সে সবাইকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা উচিত। বিশেষত ব্যায়াম করা উচিত। নিদেনপক্ষে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাসটা জরুরি। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, সঙ্গে ব্লাড প্রেশার আর সুগার। উপরি হিসেবে মন ভালো রাখে। পানি বেশি করে খেতে হবে। দিনে কম করে ছয় গ্লাস, সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি। কিছু ফল। অবশ্যই প্রোটিন—তা হতে পারে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল।
ফল বলতে আমরা বুঝি আপেল, কমলা, আঙুর ইত্যাদি। তবে ফল মানে দেশি ফলেও চলবে। বরই, কলা, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, যেটা যখন পাওয়া যায়। কামরাঙা কম খেতে হবে। অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে টক ফল কম খেতে হবে। ভাজাপোড়াও কম খেতে হবে।
নরমাল তেল–মসলা ছাড়া খাবারেই জীবনে সুস্থ থাকা যায়। ভাত, আলু, রুটি কম খেতে হবে, যা আমরা বেশি বেশি খাই। আর লবণ খাওয়া কমাতে হবে।
আমি একটা সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি ১৬ থেকে ২০ বছরে কী করা উচিত সেটি নিয়ে। সুস্থ স্বাস্থ্যাবস্থা গড়ার সময় এটি। চলো সুস্থ হওয়ার পথে হাঁটি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।
শারমীন বানু আনাম / ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
দৈনিক প্রথম আলো
১১ ডিসেম্বর ২০২০
Leave a Reply