মানুষের অনেক রোগের কারণ দুশ্চিন্তা। বলা হয় যেকোনো রোগের সঙ্গেই দুশ্চিন্তা সর্ম্পকিত। বুকজ্বালার সঙ্গে এর সর্ম্পক আরও গভীর। চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি দুষ্ট চক্রের মতো। কারণ, দুশ্চিন্তার কারণেও অনেক সময় অ্যাসিডিটি হয়।
এ ধরনের রোগের উপসর্গ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ইজোরাল মাপস স্বাস্থ্য আলাপন’। অনুষ্ঠানটির এই পর্বে আলোচনা করা হয় দুশ্চিন্তা ও বুকজ্বালা নিয়ে। এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান তামান্না চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাইম
সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাইম বলেন, সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে পেপটিক আলসার। এ সমস্যা অনেকাংশে মানসিক। সাধারণভাবেই মানুষের পেট কিছু পরিমাণ গ্যাস নির্গমণ করে। এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। এ কারণেও কখনো কখনো বুকজ্বালা হতে পারে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেকেই একটু–আধটু বুকজ্বালা বা গ্যাস নির্গমণ হলেই মনে করেন, তিনি পেপটিক আলসারে ভুগছেন।
এর সঙ্গে দুশ্চিন্তা যোগ হলে অ্যাসিডিটি আরও বেড়ে যায়। কারণ, দুশ্চিন্তা থেকে উদ্বেগ তৈরি হয়। এ জন্য প্রথমেই জানতে হবে এই রোগের লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে। যেমন পেটের ওপর ও মাঝামাঝি অংশে ব্যথা হবে। মনে হবে যেন পুড়ে যাচ্ছে। কেবলমাত্র অ্যান্টাসিড খেলেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে। খাওয়ার পর আলসারের ব্যথা নির্ভর করে ঠিক কোন স্থানে রোগ হয়েছে তার ওপর। গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে খাওয়ার পরপরই পেটে ব্যথা বাড়তে পারে। আর ডিওডেনাল আলসার হলে পেটের ব্যথা বাড়ে খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর।
আর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেটে ব্যথা শুরু হলে সেটা আলসারের লক্ষণ। ক্রমাগত ঢেকুর ওঠা ও বমি ভাব আসা। অবসাদ ভাব ঘিরে ধরে। সাধারণত বমির আগে দিয়ে এমনটা মনে হয়। এর থেকে মুক্তি চাইলে অহেতুক ওষুধ না খেয়ে, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। খাওয়ার যে অনিয়ম, সেটিও পরিবর্তন করতে হবে। কোনো দিন দুপুরে খেলো, কোনো দিন খেলো না, কোনো দিন ৯টায় খেলো, কোনো দিন রাত ১২টায় খেলো, কোনো দিন না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো। এসব বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। দ্বিতীয়ত যদি বদঅভ্যাস থাকে সিগারেট খাওয়ার, পান, গুল, পাতা এগুলো খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, এগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাইম কথা বলেন মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন নিয়ে। কারণ, করোনার এই সময়ে ছোট থেকে বড় সবাই মুঠোফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা টিভির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন এবং কাজের জন্যেও তাঁদের গ্যাজেটের সামনে বসে থাকতে হচ্ছে। তাই নতুন করে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাইম বলেন, মাইগ্রেন কেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায়নি। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। মাথার যেকোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে অনেক সময় পুরো মাথায় ব্যথা করে। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করা, মুঠোফোনে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে।
মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়।
মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। শব্দ ও আলো ভালো লাগে না।
কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক ও প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত। বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা। কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে। উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
সূত্র – প্রথম আলো / ১২ ডিসেম্বর ২০২০
জাহিদুল হক
Leave a Reply