মিনি সাক্ষাৎকার
ডেঙ্গুর মৌসুম সাধারণত বর্ষার পরপর শেষ হলেও এবার দেখা যাচ্ছে এখনো লোকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। কিছুটা বিলম্বে হওয়া এই ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা· এ বি এম আবদুল্লাহ
স্বাস্থ্যকুশলঃ ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম নয় এখন, তার পরও কিন্তু অনেকেই এতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
ডা· আবদুল্লাহঃ ক্যালেন্ডারের পাতায় বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও বৃষ্টিপাত কিন্তু থামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে এখনো বৃষ্টি কিন্তু হচ্ছেই। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বেড়েছে। বিশেষ করে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়াটা মশার ডিম পাড়া ও প্রজননের জন্য খুবই উপযুক্ত। এই জ্বরটা আসলে শুরু হয় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল থেকেই। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম এখনও চলছে, শীতকালের আগ পর্যন্ত থাকবে বলে মনে হয়। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর চেয়ে এবার হেমোরেজিক (মারাত্মক) ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে মৃত্যুর হার অন্য বারের চেয়ে কম।
স্বাস্থ্যকুশলঃ ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে?
ডা· আবদুল্লাহঃ ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। শুরুতে শরীরের তাপমাত্রা ১০২০-১০৩০ ডিগ্রি থাকবে। সঙ্গে থাকবে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি হওয়া, খেতে না পারা, ক্লান্তি ভাব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরেও র্যাশ উঠবে, দাঁত মাজার সময় রক্তও পড়তে পারে, কালো পায়খানা হতে পারে। এ বছরই কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হওয়ার মতো উপসর্গ হচ্ছে, এমন রোগী পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু রোগী, কেউ বা হেমোরেজিক। আগেই বলেছি এবার ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুহার কম তা যে ধরনের ডেঙ্গুই হোক না কেন।
স্বাস্থ্যকুশলঃ গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হলে করণীয় কী?
ডা· আবদুল্লাহঃ গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হলেও জ্বরের অন্যান্য রোগীর মতোই যত্ন নিতে হবে। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় বিশেষ যত্ন তো থাকবেই।
স্বাস্থ্যকুশলঃ প্রতিবছরই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর প্রকোপ কমানোর জন্য অর্থাৎ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
ডা· আবদুল্লাহঃ ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কারণ এডিস মশা-এটা সবাই জানে। তাই মশাকে নিয়ন্ত্রই হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ তথা তার প্রকোপ কমানোর প্রধান উপায়। মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা ডিম পাড়ার স্থান যা-ই বলি না কেন, এগুলোকে ধ্বংস করতেই হবে। বড় বড় ভবনের আশপাশে, কোণায় কোণায়, ডাস্টবিন ও এর আশপাশের স্থান; এমনকি ঘরের পাতিল, বদনা এসব স্থানেও যেন চার-পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালতের ভেতর আনাচকানাচে মশার স্প্রে বা ওষুধ ছিটাতে হবে যাতে এসব স্থানে কোনোভাবেই মশা আশ্রয় নিতে না পারে। এডিস মশা সাধারণত দিনেই কামরায়। তাই যেসব এলাকায় মশার প্রকোপ বেশি, সেখানে দিনের বেলায়ও শুয়ে থাকলে বা ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। বাচ্চাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। সবার সচেতনতাই পারে
ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও একে প্রতিরোধ করতে।
স্বাস্থ্যকুশলঃ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে কিছু বলবেন কি?
ডা· আবদুল্লাহঃ ডেঙ্গু জ্বরের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতো এর চিকিৎসা করতে হবে। এমনকি চিকিৎসা না করলেও এমনিতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায়। তবে তার অর্থ এই নয় যে চিকিৎসা করতে হবে না। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণঃ কাজী ফাহিম আহমেদ
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply