ডা· মিজানুর রহমান কল্লোল
মূত্রাশয়ের প্রদাহকে সিস্টাইটিস বলে। যদিও মেয়েদের এটা বেশি হয়, তবে পুরুষেরাও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং সব বয়সের পুরুষই আক্রান্ত হতে পারে। মূত্রাশয়ের প্রদাহের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন-
ব্যাকটেরিয়াজনিত মূত্রাশয়ের প্রদাহঃ এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন। পায়খানার পথ থেকে ব্যাকটেরিয়া এসে মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়।
ইন্টারসটিশিয়াল সিস্টাইটিসঃ সাধারণত মূত্রাশয়ে আঘাতের কারণে এটি হয় এবং এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের উপস্থিতি খুব কম থাকে। এ ধরনের রোগীর রোগ নির্ণয়ে সচরাচর অনেকেই ভুল করেন। এ রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। তবে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে।
ইয়োসিনোফিলিক সিস্টাইটিসঃ এটি সিস্টাইটিসের একটি বিরল ধরন। বায়োপসির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। এসব ক্ষেত্রে মূত্রাশয়ের দেয়াল অসংখ্য ইয়োসিনোফিলে পূর্ণ থাকে। যদিও এ ধরনের রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ এ রোগ বাড়িয়ে দেয়।
রেডিয়েশন সিস্টাইটিসঃ যেসব রোগী ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন নিচ্ছে, তাদের সচরাচর এ সমস্যা দেখা দেয়।
হেমোরেজিক সিস্টাইটিসঃ এ ধরনের মূত্রাশয়ের প্রদাহে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ে।
রোগের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত নি্নমূত্রপথ (মূত্রনালি ও মূত্রাশয়) ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে সিস্টাইটিস হয়। এ ক্ষেত্রে নি্নমূত্রপথ জ্বালা করে ও প্রদাহ হয়। এটা খুবই সাধারণ।
বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে সিস্টাইটিসের কারণ হলো ই· কলাই নামক ব্যাকটেরিয়া।
এ ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী-অন্ত্রপথের নিচের অংশে দেখা যায়। যৌন মিলন সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ মিলনের সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকতে পারে। একবার ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু এর আগেই যদি ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার শুরু করে, তাহলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটে।
সিস্টাইটিসের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূত্রাশয় বা মূত্রনালিতে প্রতিবন্ধকতা, মূত্রপথে কোনো যন্ত্র প্রয়োগ (যেমন ক্যাথেটার বা সিস্টোস্কপ), ডায়াবেটিস, এইচআইভি, ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার কারণে কিডনির ক্ষতি প্রভৃতি।
বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ কিছু অবস্থা, যেমন-প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি, প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ ও মূত্রনালির সংকীর্ণতার জন্য মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না। ফলে মূত্রথলিতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। আরও কিছু অবস্থা সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-
— পর্যাপ্ত তরল না খাওয়া
— যত্রতত্র পায়খানা করে ফেলা, অর্থাৎ পায়খানা ধরে রাখতে না পারা
— হাঁটা-চলা কম করা অথবা না করা
— দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা
উপসর্গ
— তলপেটে চাপ অনুভব করা
— প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা কষ্ট হওয়া
— ঘন ঘন প্রস্রাব করা বা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছে জাগা
— রাতের বেলা প্রস্রাবের ইচ্ছে জাগা
— প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া
— প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
— প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
— প্রস্রাবের সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকা অথবা লোহিত রক্তকণিকা যাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য প্রস্রাব বিশ্লেষণ
— ব্যাকটেরিয়ার ধরন নিরূপণ ও চিকিৎসাক্ষেত্রে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য প্রস্রাবের কালচার পরীক্ষা
চিকিৎসা
যেহেতু ইনফেকশন কিডনিতে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে এবং বয়স্ক লোকদের জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই সর্বদা দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাবের কালচারের ফলাফল দেখে অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী অথবা বারবার মূত্রপথের সংক্রমণের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে হবে। তা না হলে আরো বেশি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
তীব্র উপসর্গ চলে যাওয়ার পর কখনো কখনো স্বল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
সিস্টাইটিসের রোগীর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছে থাকলে পাইরিডিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব কমানোর জন্য প্রস্রাবে অ্লের পরিমাণ বাড়ায়, এমন বস্তু, যেমন অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা ক্যানবেরি জুস খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া একটা পুরোনো পন্থা, যেমন লবণপানির ডুশ বেশ কার্যকর। কুসুম গরমপানিতে প্রচুর লবণ মিশিয়ে গোসল করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। চিকিৎসা শেষে কিংবা চিকিৎসার মধ্যে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আছে কি না তা জানার জন্য। এ ক্ষেত্রে আবারও প্রস্রাবের কালচার করার প্রয়োজন হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিস্টাইটিস অস্বস্তিকর।
তবে চিকিৎসার পর কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না করেই ভালো হয়ে যেতে পারে।
সম্ভাব্য জটিলতা
— দীর্ঘস্থায়ী কিংবা বারবার মূত্রপথে সংক্রমণ
— জটিল মূত্রপথের সংক্রমণ বা পাইলো নেফ্রাইটিস
— কিডনির কার্যকারিতা তীব্রভাবে লোপ পাওয়া
প্রতিরোধ
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। মলত্যাগের পর পায়ু এলাকা সামনে থেকে পেছন দিকে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে পায়ু এলাকা থেকে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি কমবে।
— প্রচুর তরল পান করতে হবে, যাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের থলি থেকে বের হয়ে যেতে পারে। মিলনের পরপরই প্রস্রাব করতে হবে। মিলনের সময় জড়ানো ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করে। তাই ঘন ঘন প্রস্রাব করলে সিস্টাইটিসের ঝুঁকি কম থাকে।
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
রমজান মারুফ
আমি বেশ কিছু দিন হলো প্রস্রাব এর সমোসয়ায় ভুগছি আমি ডা· মিজানুর রহমান কল্লোল এর সাহাযো চাই
Bangla Health
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
এখানে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।