সম্ভবত অধিকাংশ রোগী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাওয়ার পরই ওষুধ গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু ওষুধ খাবারের আগে, না পরে বা না মাঝখানে-কোন সময় খেতে হবে তা অনেক সময় চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ থাকে না বা থাকলেও আমরা তা খেয়াল করি না। ওষুধ গ্রহণের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক তো রয়েছেই। কারণ খাদ্যদ্রব্যের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে অধিকাংশ ওষুধের আন্তক্রিয়া ঘটে। তাই ওষুধের বিপাকক্রিয়া, এমনকি এর শোষণ, বিস্তৃতি ও নির্গমনে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে ওষুধের কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ জন্য ওষুধ খাবারের আগে, না পরে খেতে হবে, তা ভালোভাবে জানা দরকার। ধরা যাক, বহুল ব্যবহৃত সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেটের কথা, যা খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে গ্রহণ করাই ভালো। আর সিপ্রোফ্লক্সাসিন গ্রহণের দুই ঘণ্টার মধ্যে দুগ্ধজাত খাবার বা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন বা জিংকযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ এসব উপাদানের সঙ্গে আন্তক্রিয়ার কারণে রক্তে ওষুধের মাত্রা কমে যায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। আবার পেনিসিলিন খালিপেটে গ্রহণ করাই ভালো। মনে রাখবেন, ফলের রসের অম্লতা পেনিসিলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। অ্যান্টাসিড প্রিপারেশন খাবারের পরপরই না খেয়ে ৩০ মিনিট পর খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার রক্তে প্রোপ্রানোললের (উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ) শোষণ ও মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে একই সঙ্গে গ্রহণের কারণে প্রোপ্রানোললের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। আবার গ্রাইসিওফালভিন (একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ) উচ্চ চর্বিজাতীয় খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করলে এর শোষণমাত্রা বহুলাংশে বেড়ে যায়। তাই চর্বিজাতীয় খাবারের সঙ্গে এটি গ্রহণ করলে বেশি কাজে আসে।
ঠান্ডা-সর্দি বা অ্যালার্জিজনিত রোগে নির্দেশিত ব্যবস্থাপত্র অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন-লোরাটাডিন, সেটিরিজিন, ফেক্সোফেনাডিন খালিপেটে গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা বেশি হয়। আবার কিছু ওষুধ খালিপেটে গ্রহণ করা উচিত নয়। ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন-ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, ন্যাপ্রোক্সেন, আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন খালিপেটে গ্রহণ করলে পাকস্থলী ও অন্ত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়। তাই এ-জাতীয় ওষুধ খাবারের সঙ্গে বা ভরাপেটে খাওয়া উচিত।
একই রোগী যখন অনেক ওষুধ খাচ্ছে তখন অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোনটা খাওয়ার আগে, কোনটা খাওয়ার মাঝে বা খাওয়ার কতক্ষণ পরে খেতে হবে। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চললে ওষুধের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়া যাবে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকাংশে কম হবে। নিয়মগুলো চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র ছাড়াও ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ও ভেতরের নির্দেশিকা থেকে জানা যাবে।
শামীম আলম খান
ফার্মাসিস্ট
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ১৩, ২০০৮
Leave a Reply