সন্তান ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক না কেন, কোনো কারণে যদি অবাধ্য হয়, তাহলে মা-বাবার চিন্তার শেষ থাকে না। বিশেষ করে অবাধ্য সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ভোগেন মা-বাবা। অনেক বাবা তো রীতিমতো কোনো কিছু চিন্তা না করে ত্যাজ্যপুত্রও ঘোষণা দিয়ে ফেলেন। আবার মেয়েসন্তানদের কোনো রকম বিয়ে দিয়ে যেন বিদায় করতে পারলেই হলো। কিন্তু সন্তান অবাধ্য হলেও কি দায়িত্ব পালনে মা-বাবার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা আছে?
আইন কী বলে?
আইন সন্তান বাধ্য না অবাধ্য, এ নিয়ে কোনো শ্রেণিবিভাজন করে না। এর মানে হচ্ছে, সন্তান হিসেবে যতটুকু তার প্রাপ্য, তাকে ততটুকু দিতে হবে। সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম হলে অবশ্য কর্মহীন মা-বাবাই উল্টো দাবি করতে পারেন। সন্তান কোনো কারণে অবাধ্য হলে অনেক সময় দেখা যায় মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের বঞ্চিত করে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। অনেকে হলফনামার মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের সামনে সন্তানকে ত্যাজ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেন। ত্যাজ্য বলে ঘোষণা করলেই পুত্র ত্যাজ্য হয়ে যায় না। আইন একে বৈধতা দেয় না।
অনেক সময় দেখা যায়, বাবা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হলফনামা করে লিখে দেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ওই সন্তান সম্পত্তির কোনো অংশীদার হবে না। এই ধরনের ঘোষণার আদৌ কোনো আইনি ভিত্তি নেই। মুসলিম পারিবারিক আইনে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে কারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে এবং তাদের অংশ কতটুকু হবে। মুসলিম আইন অনুযায়ী জন্মসূত্রেই কোনো সন্তান তার পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করে। তাদের এ অধিকার থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। কোনো মা-বাবা দান বা বিক্রয়ের মাধ্যমে তাঁদের সম্পত্তি যে কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। এখানে মনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এক-তৃতীয়াংশের বেশি হস্তান্তর করা যায় না। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হবে। জীবিতকালে কোনো মা-বাবা তাঁদের সম্পত্তি রেখে গেলে সন্তান বাধ্য বা অবাধ্য যা-ই হোক না কেন, মৃত্যুর পর তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশীদার হবে। সন্তানেরা অবশ্যই মা-বাবার সম্পত্তির অংশীদার হবে। কোনো মা-বাবা যদি তাঁদের অবাধ্য সন্তানকে কোনো সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চান, তাহলে জীবিতাবস্থায় ওই সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করে কিংবা বিক্রয় করে সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেটুকু সম্পত্তিই মা-বাবা নিজের নামে রেখে যান না কেন, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারীরা এ সম্পত্তির অংশীদার হবে। সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং মা-বাবা কর্মহীন হয়ে গেলে মা-বাবা সন্তানের কাছে ভরণপোষণ দাবি করতে পারবেন।
সন্তান জোর করে মা-বাবার কাছ থেকে সম্পত্তি বা কোনো কিছু লিখে নিতে পারবে না। যদি জোর করে লিখে নেওয়া হয়, তাহলে মা-বাবা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। সন্তান জোর করে লিখে দানপত্র করিয়ে নিলেও মা-বাবা এটা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। দান করে দিলেও যাকে দান করা হলো, তাকে সম্পত্তি হস্তান্তর করা না হলে সে দান অপূর্ণ থেকে যায়।
তানজিম আল ইসলাম
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সোর্স – প্রথম আলো।
Leave a Reply