অধ্যাপক ডা· মো· তাহমিনুর রহমান
প্যাথলজি বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
অধ্যাপক ডা· হোসনে আরা তাহমিন
অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা
বংশ ও পরিবেশগত দুটো কারণই মেদস্থূলতার জন্য দায়ী। উন্নত দেশে মেদস্থূলতা একটি প্রধান সমস্যা। এখানে শিশু ও উঠতি বয়সসীমার মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ মেদস্থূল। মেদস্থূলতার জন্য দায়ী জিন শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৭৭ হাজার মেদস্থূল ব্যক্তির ওপর ব্রিটিশ গবেষকদের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় এ জিন শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। এ জিনের নাম গঈ৪জ· এটাই বেশি ক্ষুধা এবং কম ক্যালরি ক্ষয়ের জন্য দায়ী।
ইতিপূর্বেও গবেষণায় দেখা গেছে, গঈ৪জ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। যেসব লোকের ক্রোমোজমে এ জিন জোড়ায় উপস্থিত থাকে, তাদের প্রায় ১ দশমিক ৫ কিলো (৩ দশমিক ৩ পাউন্ড) থেকে ৩ দশমিক ৮ কিলো (৮ দশমিক ৫ পাউন্ড) গড় ওজন বাড়ে, যাদের এ জিন নেই তাদের থেকে। এ ছাড়া ফ্যাট সেল বা এডিপোসাইটসের সংখ্যাও ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুইডেনের ক্যারোলিনিক্স ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা আরও দেখেছেন, শিশু ও উঠতি বয়সের ফ্যাট সেলের সংখ্যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। বয়স্ক ফ্যাট সেল মরে গেলে এগুলো নতুন ফ্যাট সেল দিয়ে প্রতিস্থাপন হয়। বার্ষিক এ নতুন সেলের টার্নওভার সংখ্যা ১০ শতাংশ।
নতুন যে ফ্যাট সেল তৈরি হয়, এরা এদের কোষের মধ্যে লিপিড জমা করার জন্য উদগ্রীব থাকে। ফলে যারা ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমিয়েছে, তাদের আবারও মেদস্থূলতা হয়ে যাবে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফ্যাট সেলের সংখ্যা শিশু ও উঠতি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকে, যদি ওজন কমে, তার পরও। অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য যে তথ্য বের হয়ে এসেছে তা হলো, যারা মেদস্থূল হবে, তারা শিশুবয়স থেকেই মেদস্থূল হওয়া শুরু করে।
স্বাভাবিক ওজনের ১০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে মেদস্থূল হয়। এর বিপরীতে তিন-চতুর্থাংশ মোটা শিশু প্রাপ্তবয়সে আবার মেদস্থূল হয়। এ শিশুদের গড়ে প্রায় দুই বছর বয়সে মেদস্থূলতা শুরু হয়, স্বাভাবিক শিশুদের এটা শুরু হয় পাঁচ-সাত বছর বয়সে।
একবার যখন ফ্যাট সেল বাড়া শুরু করে, তখন ফ্যাট সেলের সংখ্যা মেদস্থূলদের দ্বিগুণ হয় স্বাভাবিক লোকের তুলনায়।
এ জন্য গবেষকেরা এখন মেদস্থূলতার চিকিৎসার জন্য দুটো লক্ষ্য নির্ণয় করার জন্য ব্যস্ত। প্রথমত এমন ওষুধ বের করা, যেটা ফ্যাট সেল তৈরি বন্ধ করবে, আর দ্বিতীয়ত মেদস্থূলতা-সম্পৃক্ত রোগ, যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ ছাড়া বেশি খাওয়া, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, চর্বিযুক্ত ও মিষ্টি খাবার না খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম ছাড়া অলস জীবন যাপন প্রভৃতি বন্ধ করা মেদস্থূলতা কমার জন্য জরুরি।
সূত্রঃ রিচার্ড ইনগহাল
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৯, ২০০৮
Leave a Reply