সঠিক যত্ন নিলে ছোট মেয়ের লম্বা চুল রাখা কোনো ঝামেলাই নয়। মেয়ে ফিজার সঙ্গে মডেল হয়েছেন মা সাজিয়া আ ‘জানো, চুল বড় থাকলে নাকি কেউ তাড়াতাড়ি বড় হয় না। বড় হবে কী করে! তুমি যা খাবে, সব তো চুলই খেয়ে ফেলছে…’ স্কুলে বন্ধুদের এ রকম কথা প্রায়ই শুনতে হয় ফিজার। আনিসা রহমান ফিজার বয়স নয় বছর। বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ছোট্ট ফিজার চুল কিন্তু ছোট নয়। কাঁধ ছাপিয়ে একেবারে কোমর অবধি। স্কুলে বন্ধুদের চুল নিয়ে ভয় ধরানো গল্পে অবশ্য একদম ভয় পায় না ফিজা। কারণ, ও জানে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করলে আর নিয়ম মেনে চললে সবই থাকবে ঠিকঠাক। এ কথা ওকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মা সাজিয়া আনোয়ার। বড় চুলের সঙ্গে শিশুদের বড় হয়ে ওঠার কোনো বিরোধ আছে কি না—এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব মোতানাব্বি।
আমাদের সবার মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে, শিশুর চুল বড় থাকলে তাতে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কারণ, চুল সব পুষ্টি কেড়ে নেয়। এটা একদমই ঠিক নয়। আসলে চুল বড় থাকার কারণে চুল দিয়ে মুখটা ঢেকে থাকে বলে তা শুকনো দেখায়। তবে শিশুর চুল বড় রাখার ক্ষেত্রে চুলের সঠিক পরিচর্যা খুব জরুরি। চাকরিজীবী সাজিয়া আনোয়ারের খুব বেশি সময় হয় না মেয়ের চুলের পরিচর্যার। তবে তিনি বাসায় থাকার সময় ফিজার চুলগুলো বাতাসে খোলা রাখেন।
আর স্কুলে যাওয়ার আগে করে দেন দুটো বেণি। সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় হালকা গরম তেল লাগিয়ে দেন। ছোট মানুষ খেলাধুলা তো করেই, ধুলাবালিও লাগে বেশ, তাই শ্যাম্পুটা করিয়ে দেন নিয়মিত। ছোট্ট ফিজার অবশ্য তেল দেওয়া, চুল বাঁধা নিয়ে প্রায়ই মায়ের সঙ্গে বাধে বিরোধ। ওর পুতুলটার মতো চুল খোলা রাখতেই বেশি ভালো লাগে ফিজার। আর পছন্দ, চুলে পাথর বসানো ক্লিপ পরা।
কীভাবে নেওয়া যাবে ছোট্ট সোনামণির চুলের যত্ন, তা নিয়ে পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
শিশুরা তো খেলাধুলা করবেই। ওদের সঙ্গে ধুলোবালির মিতালিটাও হয় বেশি। তাই মাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে শিশুর চুলের পরিচ্ছন্নতার দিকে।
শিশুর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
দুই দিন পরপর শ্যাম্পু করে দিতে হবে চুল। তবে শিশুর চুলের ক্ষেত্রে কন্ডিশনার ব্যবহার না করাই ভালো।
শ্যাম্পু করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে খুব ভালো করে শ্যাম্পুর ফেনা পরিষ্কার করা হয়।
শিশুর চুল ঘন হলে ভাগ ভাগ করে শ্যাম্পু করতে হবে।
শ্যাম্পুর পর চুলটা খুব ভালোভাবে মুছে দিতে হবে, যেন চুলের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।
শিশুর চুল আঁচড়াতে হবে চুল শুকানোর পর। মোটা দাঁতওয়ালা চিরুণি বেছে নিতে হবে সে ক্ষেত্রে।
শিশুর চুল শুকাতে হবে ঠান্ডা বাতাসে। হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস ব্যবহার করা যাবে না।
চুল সুন্দর একটা ছাঁট দিয়ে রাখতে হবে, যেন সামনের দিকে খুব ছোট না হয়। কপালে চুল থাকলে শিশুর গরম লাগতে পারে।
ঘরে ঠান্ডায় শিশুর চুল খোলা রাখা ভালো। তবে বাইরে বের হওয়ার সময় চুলটা একটু উঁচু করে ঝুঁটি করে দেওয়া যেতে পারে।
গরমে শিশুর চুল ঘাড়ে লেগে থাকলে ওর অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তাই চুলটা দুই ভাগ করে দুটি বেণিও করে দিতে পারেন।
গরমে শিশুর মাথা ঘেমে অনেক সময় চুলের গোড়া ভিজে যায়, সে ক্ষেত্রে শিশুর চুলটা খুলে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
সামনের দিকের কাটা চুলগুলো শিশুর কপালে পড়ে থাকলে ওর গরম লাগতে পারে, তাই ওর পছন্দমতো সুন্দর দুটি ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে দিতে পারেন।
সপ্তাহে একবার ওর ছুটির দিনে গরম তেল চুলে লাগিয়ে দিতে পারেন।
১৫ দিনে একবার টক দই লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
চুল যদি রুক্ষ হয়ে যায়, একটা পাকা কলা পেস্ট করে ওর চুলে লাগিয়ে দিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে দিন।
গরমের সময় এমনিতেই শিশু অস্বস্তিতে থাকে, তাই যে শিশুর চুল বড়, তার মায়ের গরমের উপযোগী হাতকাটা আরামদায়ক পোশাক পরানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পার্টি বা কোনো উৎসবের সাজে অনেক সময়ই শিশুর চুলে স্প্রে ও গ্লিটার ব্যবহার করা হয়।
অনুষ্ঠান থেকে ফিরে শ্যাম্পুটা যেন খুব ভালো করে করা হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক পরিচর্যার পরও দেখা যায়, একটু অসতর্কতার জন্য শিশুর বড় চুল অনেক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে এ গরমের সময়টায়। মাহবুব মোতানাব্বি বলেন,
শিশুর চুলে যেন কোনোভাবেই পানি জমে না থাকে এবং ঘামে যেন ভেজা না থাকে। কারণ, এতে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
এ ছাড়া চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাসের আক্রমণে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। মাথার ত্বকের চামড়া উঠে যেতে পারে খুশকির মতো। এ ক্ষেত্রে কিটোকোলাজেনযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
গ্রীষ্মের সময় শিশুর চুলের গোড়ায় ছোট ছোট গোটাও দেখা যেতে পারে ঘামের কারণে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে শিশুর চুল পরিষ্কার ও চুলের গোড়া শুকনো রাখা—এ দুটি দিক খেয়াল থাকলে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম।
পাশাপাশি শিশুর সুন্দর চুল ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য তাকে ফলমুল, শাকসবজি ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করানোর অভ্যাস করাতে হবে ছোটবেলা থেকেই।
সঠিক যত্ন নিলে ছোট মেয়ের লম্বা চুল রাখা কোনো ঝামেলাই নয়। মেয়ে ফিজার সঙ্গে মডেল হয়েছেন মা সাজিয়া আনোয়ার।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৬, ২০১১
Leave a Reply