ছিমছাম বসার আয়োজন আর চা—আড্ডা জমতে দেরি হবে না মোটেও ব্যস্ততা আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে দু দণ্ড অবসর চাই। চাই মন খুলে কথা বলা আর ভাবের আদান-প্রদান। চাই আড্ডা। তবে ব্যস্ত নাগরিক জীবনে আড্ডার সময় বা কোথায়, আর জায়গাই বা কোথায়। আপনি চাইলে ঘরের মধ্যেই আয়োজন করে ফেলতে পারেন আড্ডার আসর। আড্ডা দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে আগে।
ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ ডিজাইনের পরিচালক, স্থপতি সাইদা ফজিলাতুননাজ বলেন, শুধু বসার একটা জায়গা হলেই হলো না। আড্ডার জায়গায় থাকা চাই ঘরোয়া ও আন্তরিক আবহ। যেখানে বসে আরাম করে মনের কথা বলা যাবে। সারা সপ্তাহের কর্মযজ্ঞের শেষে ছুটির দিনের আড্ডাটা দিতে চাই পারিবারিক পরিমণ্ডলে। আর বসার ঘরে বসে তো আরামের আড্ডা হয় না। বাড়ির কোনো কোণে ছিমছাম বসার আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে আরামে পা-মুড়ে বসে, চায়ের কাপ হাতে মেতে ওঠা যাবে আড্ডায়। আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফার বাড়িতে সে রকম একটি জায়গার নকশা করে দিয়েছেন স্থপতি সাইদা ফজিলাতুননাজ। ছবিগুলো তোলা হয়েছে এ বাড়ি থেকেই।
আজকালকার ফ্ল্যাট বাড়িতে জায়গা কম থাকায় আড্ডার জন্য আলাদা করে কোনো ঘর রাখা হয় না । তবে কোনো একটা ঘরের বিশেষ অংশজুড়ে আড্ডার আসর পাতা যেতে পারে। খাবার ঘর আর শোয়ার ঘরের মাঝে কিংবা ছোট পরিসরের বারান্দা হলেও চলবে। বসার ঘরের উঁচু বা ভারী সোফার পরিবর্তে আড্ডার আসরে বসার জায়গা অপেক্ষাকৃত নিচু হলে ভালো হয়। মেঝেতে শতরঞ্জি পেতে তার ওপর ফ্লোর সেটিং কুশন দেওয়া যেতে পারে। বড় কুশনে বসার ব্যবস্থা, আর ছোট কুশনের পেছনে হেলান দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চাইলে কুশনের পরিবর্তে ফোম দিয়েও কাজ চালানো যায়। অনেকে আবার নিচু জায়গায় বসতে পারেন না। তাঁদের জন্য দড়ি দিয়ে তৈরি ও জালের বুননে অপেক্ষাকৃত কম উঁচু মোড়া বা টুল রাখা যেতে পারে। অনেকে আবার বেতের মোড়া কিংবা কাপড়ের চেয়ার রাখতে পছন্দ করেন। তবে আসবাব যেমনই হোক না কেন, তা যেন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে যায়। আর প্রতিটি আসবাবের অবস্থান এমন হবে, যাতে করে আড্ডার সময় একজন অন্যজনের মুখ দেখতে পারেন। বসার জায়গার পাশেই রাখা যেতে পারে নান্দনিক কোনো বুকশেলফ। যা দেখতে ভালো লাগে, আবার আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে কেউ চাইলে বইয়ের দু-একটি পাতা উল্টে দেখতে পারেন। আড্ডা মানে চা-নাশতার আয়োজন থাকবেই। তাই বসার জায়গার পাশে কম উচ্চতার কোনো টেবিল রাখা যেতে পারে। বা কোনো একটা কোণ নির্বাচন করে সেখানে দুই বা তিন তাকের ছোট কোনো টেবিল রাখা যেতে পারে। টেবিলের কোনো অংশে খাবার পরিবেশন করলে ভালো দেখায়। আর তৈজসপত্রের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় উজ্জ্বল বর্ণের মগ বা বেতের ট্রে।
আড্ডার জায়গা খোলামেলা হলে ভালো হয়, এমনটি মনে করেন ক্রিয়েটোরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রাশিদ খান। তিনি বলেন, আড্ডার জন্য আলো-বাতাস পূর্ণ পরিবেশ হলে ভালো হয়। তবে আড্ডা যদি রাতে হয় সে ক্ষেত্রে আলো-আঁধারি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে। মোমবাতি বা নানা রঙের ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে যদি হালকা গানের ব্যবস্থা থাকে, আড্ডা জমে জম্পেশ। তাই পাশে গান শোনার সরঞ্জাম বা বাদ্যযন্ত্র রাখা যেতে পারে। সর্বোপরি আরামদায়ক, খোলামেলা আর মনোরম পরিবেশ আড্ডার আবেশটাকে ঘনিভূত করে তোলে।
শারমিন নাহার
কৃতজ্ঞতা: শিমুল মুস্তাফা এবং সাইদা ফজিলাতুননাজ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০
Leave a Reply