জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
আমার নানার চার ছেলে দুই মেয়ে। নানা ও নানি মারা গেছেন। নানার সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মধ্যে কী অনুপাতে ভাগ করা হবে? তাঁর ২০ বিঘা জমি আছে। আমার মা সেই সম্পত্তির কতটুকু পাবেন? নানার সম্পত্তি যদি তাঁর মেয়েদের সঠিকভাবে না দেওয়া হয়, তাহলে কী করণীয়? মায়ের সম্পত্তি কি তাঁর ছেলেমেয়েরা পাবে?
নিরব
মানিকগঞ্জ।
মুসলিম শরিয়ত আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকার হিসেবে বোন তার ভাইয়ের অর্ধেক অংশ সমান সম্পত্তির অংশীদার। যেহেতু আপনার নানার চার ছেলে ও দুই মেয়ে, সেহেতু ২০ বিঘা জমিতে আপনার মা দুই বিঘা জমির হকদার। উল্লেখ্য, আপনার চার মামা প্রত্যেকে চার বিঘা করে ১৬ বিঘা জমি পাবেন। সুতরাং দুই বিঘা জমির প্রকৃত মালিক হবেন আপনার মা এবং তাঁর প্রাপ্য অংশ না দেওয়া হলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। আপনার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে জানাচ্ছি, একজন বাবার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়েরা যেভাবে অংশীদার, একজন মায়ের সম্পত্তিতে তারা সেভাবেই অংশীদার।
আমার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তড়িঘড়ি আমাদের দুই বোনকে বিয়ে দিয়ে দেন। বড় বোনের বিয়ে হয় তাঁর পছন্দের ছেলের সঙ্গে। ভালোই আছেন তাঁরা। আমার স্বামী যুক্তরাজ্যে লেখাপড়া করে। ঢাকায় বাড়ি আছে। আমি দেখতে খুব সুশ্রী বলে শ্বশুরবাড়িতে বেশ আদর পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার বাবা জুন মাসে মারা যাওয়ার পরই নির্যাতন শুরু হয় আমার ওপর। ঢাকায় আমার পরিবারের সঙ্গে থেকে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে পড়ছিলাম। আমার শ্বশুর আমাকে দনিয়া কলেজে ভর্তি করিয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্সকরায় বাদ সাধেন। স্বামী এখানে না থাকায় মা চাইছিলেন না আমি শ্বশুরবাড়ি থাকি। কিন্তু শ্বশুরের পীড়াপীড়িতে একসময় যেতে বাধ্য হই। তারপর নানা অজুহাতে শ্বশুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান আমার ওপর। স্বামীর কাছেও আমার সম্পর্কে অবান্তর কথাবার্তা বলেন। আমার বক্তব্য না শুনেই বিদেশ থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে এসএমএস করতে থাকে স্বামী। এসব ঘটনা আমার মাকে জানাইনি। তিনি একদিন আমাকে দেখতে আসেন। তাঁর সঙ্গে আমার শ্বশুর এত নোংরা ব্যবহার করেন, ফলে মা বুঝতে পারেন তাঁর মেয়ে কী অবস্থায় আছে। তাৎক্ষণিকভাবেই মা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আমার স্বামীকে এসব জানানো হলে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় আমাদের ঠিকানায়। আমি জানি সে চরম বিভ্রান্ত, এ কারণে নীরবেই দিনাতিপাত করছি। কিন্তু তার কোনো সুমতি যেমন দেখছি না। তালাকনামা পাঠানোর পরও আমার মোহরানা, খোরপোশ কিছুই পরিশোধ করেনি। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? সে যদি সত্য উদ্ঘাটিত করে আমার সঙ্গে সংসার করতে চায়, তাহলে কীভাবে তা সম্ভব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
আপনার চিঠিতে আপনার স্বামী আপনাকে কবে তালাকনামা পাঠিয়েছেন অথবা তালাক কার্যকর হয়েছে কি না এ ব্যাপারটি পরিষ্কার নয়। আপনাদের তালাক কার্যকর হয়ে থাকলে আপনার স্বামী পুনরায় আপনাকে বিয়ে করতে পারবেন। বর্তমানে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী প্রথম তালাকের পর তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে মধ্যবর্তী বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। দেনমোহর ও খরপোশের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করা সম্ভব। তবে আপাতত আপনার উচিত, তালাকটি কার্যকর হয়েছে কি না এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া।
আমি বর্তমানে একটা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি (সিএ) প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছি। আমরা দুই ভাই ও পাঁচ বোন। আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁর ভাতিজা মানে আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তির এক জটিল হিসাব রেখে যান। চাচাতো ভাইয়ের সম্পত্তির দুই পাশে আমাদের সম্পত্তি ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। ওই ক্রেতা দুই দিকে আমাদের সম্পত্তি থাকায়, তা কিনতে অসম্মতি জানান। আমার বাবা তাঁর ভাতিজাকে ছোটবেলা থেকে খুবই ভালোবাসতেন। তাই তিনি তাঁর ভাতিজাকে নিজের সম্পত্তি অর্থাৎ এক পাশের আড়াই শতাংশ তাঁকে লিখে দেন কিন্তু ভাতিজার কাছ থেকে আড়াই শতাংশ লিখে নেননি। কথা ছিল, সম্পত্তি এজবদল করা হবে। কিন্তু বাবার ভাতিজা আমাদের সম্পত্তি আড়াই শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এজবদলের আড়াই শতাংশ এখনো তিনি দেননি। ওই আড়াই শতাংশ জমি বিক্রির বায়না বাবদ দাম ধরা ছিল ৫০ হাজার টাকা, কিন্তু বর্তমানে জমির মূল্য বেশি হওয়ায় তিনি জমি না দিয়ে বায়না টাকা ফেরত দিতে চান। বিভিন্ন সময় তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং বলেন, তিনি আমাদের সম্পত্তি নেননি। দখল করা জায়গায় তিনি ঘর নির্মাণ করে আছেন। এ ব্যাপারে আমরা আইনের কী সহায়তা পেতে পারি?
শ্যামল
রায়বাজার, ময়মনসিংহ।
চিঠির তথ্য অনুযায়ী আপনারা বাবার সঙ্গে তাঁর ভাতিজার বিনিময় চুক্তিটি বাতিল ও আপনার বাবার আড়াই কাঠা জমির দখল হস্তান্তরের মামলা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার বাবার ওই আড়াই কাঠা জমি তাঁর ভাতিজা অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন, সেহেতু মামলায় ওই আড়াই কাঠা জমির ক্রয়কারীকে প্রতিপক্ষ করা জরুরি। প্রকৃত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে ওই জমি ফেরত পাওয়া সম্ভব।
২০০৭ সালে হঠাৎ আমার বাড়িতে নানা সম্পর্কীয় এক আত্মীয় এলেন। তাঁর একটি মেয়ে ছিল, যাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছিল। তারপর আমার মেজো মামার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিই। মেয়ের পরিবার প্রস্তাব গ্রহণ করল এবং পর দিন মোবাইল ফোনে বিয়ে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। মামা সৌদি আরবে অবস্থানরত। মামাকে মোবাইল ফোনে মেয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত বললাম। মামা আমার ওপর ভার দিল, তোমার পছন্দ আমার পছন্দ। আমার কোনো আপত্তি নেই। একদিন পরই আমি বিয়ের আয়োজন করলাম। পারিবারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে হলো। রেজিস্ট্রি খাতায় বর ব্যতীত সবার স্বাক্ষর হয়েছিল। দুই বছর পর মেয়েটির কিছু আচরণ আমাদের পরিবার মেনে নিতে পারছিল না। আমার পরিবারের সবাই মেয়েটির ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। কিছুদিন পর মেয়েটি তালাকনামা পাঠিয়েছে। আমাদের কাছে কোনো সতর্কমূলক নোটিশ আসেনি। তালাকনামার নোটিশ পেশ করলাম। এটা কি মূল তালাকনামা, না ভুয়া নোটিশ? মামা দেশে আসার পর মেয়ে যাতে মামাকে স্বামীর দাবিদার না করতে পারে, সেটার জন্য কী করতে পারি? তালাকনামা নোটিশের মধ্যে কোনো রেজিস্ট্রি অফিসারের স্বাক্ষর নেই।
আলম
ময়মনসিংহ।
আপনার পাঠানো কাগজটি একটি তালাকের নোটিশ এবং এটি কোনো বৈধ তালাকনামা নয়। মুসলিম আইন অনুযায়ী তালাকে নোটিশ পাঠালেই তালাক কার্যকর হয় না। সাধারণত নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান একটি সমঝোতা কমিটি গঠন করেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে নোটিশ শুনানির মাধ্যমে সমঝোতার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। সুতরাং আপনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমাদের পরিবারে নয়জন সদস্য। নয় বছর আগে আমার বাবা মারা যান। ইতিমধ্যে আমাদের পরিবারের খুবই কষ্টকর অবস্থা, তার মধ্যে আমার ছোট একটি বোন বিয়ে দেওয়া বাকি। আমার নানাবাড়ির অবস্থা ভালো। তবে আমরা কি নানাবাড়ির ওয়ারিশ হতে পারব? আমার মা একটু সহজ-সরল প্রকৃতির, তাই আমার মা কিছুতেই রাজি নয়, মামাদের কাছে ওয়ারিশ চাইতে। আমার অন্য খালাদের ওয়ারিশ আনার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আমার নানি বেঁচে আছেন কিন্তু নানা বেঁচে নেই। মামারাও খুব ভালো মানুষ। এখন আমরা আমাদের মায়ের ইচ্ছা ছাড়া কোনোভাবে কি নানাবাড়ির ওয়ারিশ আনতে পারব?
মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন
গৌরীপুর, ময়মনসিংহ।
আপনার নানির মৃত্যুর পর আপনার মা উত্তরাধিকার হিসেবে নানির সম্পত্তিতে অংশীদার হবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার মা আপনার একজন মামার প্রাপ্য অংশের অর্ধেকের সমান অংশীদার হবেন। আপনার মায়ের মৃত্যুর পর আপনারা মায়ের সম্পত্তির ওয়ারিশ হবেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১০, ২০১০
Leave a Reply