‘আমার ছেলেটি কিছুতেই দুপুরে ঘুমায় না’, ‘সকালে বাচ্চা ঘুম থেকে উঠতেই চায় না’ কিংবা ‘রাত গভীর হয়ে যায়, বাচ্চার চোখে ঘুমের দেখা নেই।’ এমন সব অভিযোগ প্রায়ই অভিভাবকেরা করে থাকেন। কী করলে শিশুটির ভালো হবে, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে বুঝতেই পারেন না। আসলে শিশুরা কী চাইছে, তা জানেন না। বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে সন্তানের থেকে অভিভাবকের ভূমিকাই আসল। সন্তান বুঝতে শেখার পর থেকেই সময়ের সঙ্গে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা, পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে অভ্যাসের ওপর। সে জন্য প্রথমেই রুটিন তৈরি করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সে নিয়মের সঙ্গে চলতে শিখবে। সব শিশু এক রকম নয়। শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা একেকজনের একেক রকম। এমনকি মেধা-মননও। অভিভাবককে এ বিষয়টি বুঝতে হবে। দুপুরে শিশুকে ঘুমাতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। এ নিয়ে জোর করা উচিত নয়। স্কুল থেকে ফিরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিতে বলতে পারেন, যাতে পরবর্তী কাজ করার শক্তি পায়। শিশুটি যদি দুপুরেই দুই ঘণ্টা ঘুমায়, তাহলে রাতে তো তার তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না। তবে এমনটি সব শিশুর ক্ষেত্রে ঘটে না। অনেকে দুপুরে ঘুমিয়েও রাতে সময়মতো ঘুমিয়ে যায়। সন্ধ্যার মধ্যে শিশুকে পড়তে বসান। রাত ১১টার মধ্যে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন। তা না হলে তার পর্যাপ্ত ঘুম হবে না। বেশির ভাগ শিশুর স্কুল শুরু হয় সকালে। তাকে আরও সকালে উঠে পড়তে হয়। এতে তার খাওয়ার রুচি কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয় । অনেকে বমিও করে। নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। রাতে আট-নয় ঘণ্টা ঘুম হলে পরের দিন সকালে সে সময়মতো উঠতে পারবে। মনটাও ফুরফুরে থাকবে। খেয়াল রাখতে হবে, রাতের ঘুমে যেন কোনো ব্যাঘাত না হয়। সুতির আরামদায়ক কাপড় পরে ঘুমানো উচিত। ঘরের আলো নিভিয়ে নিঃশব্দ ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। প্রয়োজনে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে শোনান। এমন স্নেহের পরশ তার চোখে ঘুম নিয়ে আসবে।
শিশুকে সময় দিতে হবে। মা-বাবা ব্যস্ত থাকলে পরিবারের অন্যান্য সদস্য পালা করে তাকে সময় দিন। সে কী বলতে চাইছে, তাও শুনতে হবে। এমনটাই বলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদা বেগম। অযথা রাগারাগি করলে শিশুর জেদ বেড়ে যায়। দুপুরে না ঘুমিয়ে শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখতে বা পছন্দের কোনো বই পড়তে দিন। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। বিশ্রাম তার স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন, সেটি বুঝিয়ে বলুন। এ অভ্যাসের জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়মমাফিক চলতে হবে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তার পছন্দের মানুষটি যদি সময়মতো কাজ না করে, তবে সেও তা-ই শিখবে। বিশেষ করে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এসব দায়িত্ব পালন করা উচিত। নেতিবাচক কোনো কিছুই তার সামনে করবেন না। অনেক সময় সন্তানকে ভয় দেখিয়ে অনেকে ঘুম পাড়িয়ে থাকেন। এটি একদমই করা ঠিক নয়। এতে তার মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। ভয় তার মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটে। তাই তার সুষ্ঠুভাবে গড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। আপনার আন্তরিকতা, ধৈর্য তার ভবিষ্যৎকে সুন্দর করতে সাহায্য করবে।
মডেল: বুলবুলি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১০
Leave a Reply