পরিবারের যে মানুষগুলো সারা জীবন আমাদের দিয়ে যান স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার ছায়া, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই মানুষগুলো শুধু চান একটু প্রশান্তিময় আশ্রয়। বৃদ্ধ বয়সে যখন কমে আসে মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতা, তখন নিজ ঘরটিই যেন হয়ে ওঠে একমাত্র শান্তির স্থান। সাধারণত পরিবারের বয়োবৃদ্ধ (৬০ বা তদূর্ধ্ব) মানুষগুলো ঘরেই দিনের অনেকটা সময় কাটান। তাই তাঁদের ঘরটি যাতে আরামদায়ক হয়, সেই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে করতে হবে অন্দরসজ্জা; জানালেন ‘অন্দরসজ্জা’র ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রুমানা আফজাল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের ঘরে বেশি আসবাব না রাখাই ভালো। এতে ঘরে তাঁদের চলাফেরার সুবিধা হয়। ঘরে আসবাব স্থাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আরামদায়ক এবং স্বচ্ছন্দে ব্যবহারের উপযোগী হয়।’ সে ক্ষেত্রে ঘরের এক দিকের দেয়ালজুড়ে বানাতে পারেন কেবিনেট আলমারি। ঘরে বড় কেবিনেট আলমারি থাকলে সেখানেই তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখতে পারবেন। জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা আসবাবের প্রয়োজন হবে না।
একইভাবে খাটটি জানালার সামনে রাখতে পারেন। কারণ বৃদ্ধ বয়সে মানুষ বেশির ভাগ সময়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই বিছানার কাছে খোলা জানালা থাকলে তা কিছুটা হলেও শান্তি দেবে তাঁদের।
এ বয়সে অবসর কাটানোর জন্য অনেকেই প্রিয় সঙ্গী করে নেন বইকে। এ জন্য ঘরে রাখতে পারেন বইয়ের তাক-কাম টেবিল। এ ধরনের অন্দরসজ্জায় আসবাবের নকশাটা হয় সাদামাটা এবং দেয়ালের রং, সিলিং, পর্দা, বিছানার চাদরে তাঁদের বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয় সাদা বা চাপা-সাদা রঙের ব্যবহার। এ দুটি রং শুধু চোখের নয়, মনেরও প্রশান্তি আনে। শুধু প্রয়োজনীয় আসবাবই নয়; শৌখিন কিছু জিনিসও রাখতে পারেন ঘরে। এ প্রসঙ্গে রুমানা আফজাল খান বলেন, ‘এ বয়সী মানুষেরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই তাঁদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে উজ্জ্বল রঙের মাটির পটারি, কুশন, আয়না, গাছ ও বিভিন্ন ধরনের শোপিস সাজিয়ে রাখতে পারেন দেয়ালের সামনে। বিছানার কোনায় রাখতে পারেন স্ট্যান্ডিং ল্যাম্পশেড।’
আরাম কেদারা (রকিং চেয়ার) যেন হয়ে ওঠে এ বয়সী মানুষদের ঘরের শৌখিন এবং প্রয়োজনীয় আসবাব। রকিং চেয়ারে বসে বই পড়তে পড়তে বা চা খেতে খেতে কেটে যাবে তাঁদের অবসরের মুহূর্তগুলো। তা ছাড়া রকিং চেয়ারের পাশে রাখুন ছোট সাইড টেবিল বা টি-টেবিল। ঘরের দেয়ালজুড়ে ঝুলিয়ে দিন বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
Leave a Reply