‘বর্ষা ঋতু গাছ লাগানোর আদর্শ সময়। এ সময় বৃষ্টি হওয়ায় বাতাসে শুষ্কতার পরিমাণ কমে যায়। আর এতে গাছপালার শেকড় ও ডালপালা মেলতে পারে খুব সহজেই।’ বললেন প্রকৃতিবিদ মোকাররম হোসেন। কিন্তু ইটপাথরের এই শহরে সবুজের দেখা প্রায় মেলে না বললেই চলে। আর চারদিকে আকাশছোঁয়া ঘরবাড়ির ভিড়ে একটু খোলা জায়গাও খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর। যদি সবুজের স্পর্শ পেতে চায় আপনার মন, তাহলে একমুঠো সবুজের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে নিতে পারেন আপনার অন্দর।
পাতা মোটা ও ছোট, এমন গাছগুলো ঘরের ভেতর খুব ভালো থাকে বলে জানালেন স্থপতি সাঈদা ফজিলাতুন নাজ। তিনি আরও বলেন, গাছ যে ঘরে শুধু সবুজের স্নিগ্ধতা এনে দেয় তা-ই নয়, পাশাপাশি গাছ ঘরের ভেতর অক্সিজেন সরবরাহ করে, ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
‘গাছ শুধু ঘরের ভেতর এনে রাখলেই হবে না, এর সঙ্গে অন্দরের সজ্জাটাও হতে হবে মানানসই।’ বললেন রূপবিশেষজ্ঞ ও রন্ধনশিল্পী রাহিমা সুলতানা। এখন একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের আবাসিক ইমারতে ঘরের গাছ বা ইনডোর প্লান্টসের ওপর কাজ করছেন তিনি। এখন সব আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টের গ্রাউন্ড ফ্লোর বা নিচতলায় গাড়ির গ্যারেজ করা হয়। গ্যারেজেই ইনডোর প্ল্যান্টস দিয়ে করা যেতে পারে সুন্দর বাগান। গ্যারেজের চারদিকের দেয়ালের সামনে দুই থেকে তিন ফুট জায়গায় সিমেন্ট বা ইট দিয়ে নকশা করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে তার ভেতর মাটি ফেলে লাগাতে পারেন গাছ। বিভিন্ন আকৃতির মাটির টব, গাছের ডাল ও পাতায় মোড়ানো টব, দড়ির টবসহ নান্দনিক টবে লাগাতে পারেন গাছ। এতে পাথর, কলস ও কৃত্রিম ফুলও ব্যবহার করতে পারেন। একইভাবে সিঁড়িঘরের কোনায় লাগাতে পারেন ইনডোর প্লান্টস।
শুধু গ্যারেজ ও সিঁড়িঘরই নয়, ইনডোর প্লান্টস দিয়ে নিজের ঘরটিকেও সাজিয়েছেন রাহিমা সুলতানা। তাঁর বাসার প্রবেশপথের দেয়ালজোড়া জুতার তাকটির ওপর শোভা পাচ্ছে নান্দনিক কিছু গাছ। এর মধ্যে কাচের লম্বা আকৃতির ফুলদানিতে রাখা আছে লতাজাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাশে রাখা হয়েছে নারকেলের মালার টবে গাছ। গাছের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রবেশপথটিতে দেয়ালজুড়ে বসানো হয়েছে শীতলপাটি। একইভাবে ঘরের ভেতরের ফয়ারটিতেও রাখা হয়েছে গাছ। এই বাসার মতো করে সিমেন্টের তৈরি বাক্সে মাটি ভরে তাতে গাছের ডাল বসিয়ে দিন। পাতাবাহার ও কৃত্রিম রং-বেরঙের ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলুন পুরো বাক্সটি।
বসার ঘরে গাছ রাখলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আসবাব থাকা চাই। এনজ্য বেতের সাদামাটা আসবাব ব্যবহার করলেও ভালো দেখাবে। টবের আকারে বৈচিত্র্য আনতে পারেন।
আর এর ওপর স্পটলাইট ফেলে করতে পারেন আলো-ছায়ার খেলা।
এই বাসার ডাইনিং কেবিনেটে রাখা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে বোতল-বাগান। খাওয়ার টেবিলে গাছ রাখা প্রসঙ্গে রাহিমা সুলতানা বলেন, মাটির টবে গাছ কখনোই খাওয়ার টেবিলে রাখা ঠিক নয়। এর পরিবর্তে গ্লাস আকৃতির কাচের ফুলদানিতে পানি দিয়ে ুলতানো মানিপ্লান্ট রাখতে পারেন। ফুলদানির ভেতর রাখতে পারেন বর্ণিল পাথর, বোতল। তিনি বলেন, মাছের জন্য গোলাকৃতির যে ছোট অ্যাকুরিয়াম পাওয়া যায়, এর ভেতর নিচের দিকে মাটি ভরে বিভিন্ন প্রজাতির ফার্ন দিয়ে এই বোতল-বাগান তৈরি করেছেন তিনি। আর এ ধরনের ইনডোর প্লান্টসের সুবিধা হলো, এগুলো রোদে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। একইভাবে শোয়ার ঘরে দেয়ালের সামনে রাখা হয়েছে লিলি ও বেলি ফুলের গাছ। আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টের বসার ঘরের কোনাকৃতি বারান্দার রেলিংয়ে বাঁশের টবে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লতানো গাছ। এ ছাড়া শোয়ার ঘরের বারান্দায় সিলিং থেকে ঝোলানো টবে লাগানো হয়েছে গাছ। একইভাবে পুরোনো পাতা দিয়ে তৈরি টবে (সেখানে মাটি লাগে না) লাগাতে পারেন লতাজাতীয় গাছ। এ ছাড়া রান্নাঘর ও বাথরুমে রাখতে পারেন ইনডোর প্লান্টস।
ইনডোর প্লান্টস দিয়ে অন্দরসজ্জা করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে বলে জানালেন রাহিমা সুলতানা। যেসব ঘরে ইনডোর প্লান্টস রাখা আছে, সেখানে হালকা নকশার আসবাব ব্যবহার করতে হবে। কাঠের আসবাবের ওপর রং না করে ন্যাচারাল লুক রাখলে তা মানিয়ে যাবে গাছের সঙ্গে। দেয়ালে হালকা সবুজ ও হলুদ, সাদা এবং চাপা সাদা রং ভালো মানিয়ে যায় ইনডোর প্লান্টসের সঙ্গে। খুব বেশি আলোর ব্যবহার নয়, স্ট্যান্ডিং ল্যাম্প শেড, স্পটলাইট, হিডেন লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে ইনডোর প্লান্টস রাখা ঘরে। আর দেয়াল-টবে কোনো ইনডোর প্লান্টস না রাখাই ভালো। এতে দেয়ালের ক্ষতি হয় বলে জানালেন তিনি।
ইনডোর প্লান্টসের যত্ন
কীভাবে ইনডোর প্লান্টসের যত্ন নেবেন, এ বিষয়ে জানালেন ইনডোর প্লান্টসের অন্দরসজ্জার প্রতিষ্ঠান অ্যাসেসিয়ার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রকিবুল আমিন।
ইনডোর প্লান্টস কেনার আগে ভালো করে জেনে নিন গাছটি ঘরের ভেতর রাখার উপযুক্ত কি না। গাছের মধ্যে মানিপ্লান্ট, ফিলোডেনড্রন, পাম, ড্রেসিনা, পাতাবাহার—এই গাছগুলো ইনডোরে রাখার উপযুক্ত।
সপ্তাহে অন্তত এক দিন রোদে দিন।
কখনোই গাছের গোড়ায় একসঙ্গে বেশি পানি দেবেন না। কড়া রোদেও গাছে পানি দেবেন না।
সাধারণত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে পানির গাছ (ড্রেসিনা, মানিপ্লান্ট), পাম ছাড়া অন্য কোনো গাছ ভালো থাকে না।
পোকামাকড়ের উপদ্রব দূর করার জন্য ইনডোর প্লান্টসে মাসে একবার কীটনাশক স্প্রে করুন। যেহেতু এ সময় ডেঙ্গুর সময়, তাই গাছে কখনোই পানি জমতে দেবেন না। গাছে ধুলা জমলে তুলি বা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
ইনডোর প্লান্টসের মাটি শুকিয়ে এলে তবেই গাছে পানি দিন।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০১০
Leave a Reply