দেড় বছরের দুরন্ত আইমান। হাতের কাছে যা পায়, তা-ই গালে পুরে ফেলে। বাসায় অনেক মেহমান এসেছে তার জন্মদিনে। সবার আকর্ষণ যখন তাকে ঘিরে, ঠিক তখনই একটা তেলাপোকা ধরে এনে মুখে পুরে দিল। মা-বাবা ছেলের এমন কাণ্ড দেখে হতবাক। বাবা তো মেরেই বসল।
আর এক সমস্যা অহনাকে নিয়ে। সারাক্ষণ সে হাতের আঙুল চুষতে থাকে। ‘শিশুর এ ধরনের অনেক সমস্যা থাকে, যা নিয়ে মা-বাবা পড়ে যান মহা দুশ্চিন্তায়। শিশুর এই কাজগুলো অনেক সময় তাঁদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। আমরা এটাকে বলি শিশুর আচরণগত সমস্যা।’ বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদা বেগম।
শিশুর এ ধরনের আচরণগত সমস্যার মধ্যে আছে দাঁত দিয়ে নখ কাটা, আঙুল চোষা, ময়লা কিছু মুখে পুরে দেওয়া, কলম বা পেনসিল কামড়ানো, মাথার চুল ছিঁড়ে মুখে দেওয়া, ভাঁজ করা কাপড় ছড়িয়ে দেওয়া, পেছন থেকে এসে কাউকে ধাক্কা মারা, বিছানা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নষ্ট করা, খাবার ছুড়ে মারা, গোসলের সময় হাঁ করে পানি খাওয়া, টুথপেস্ট খেয়ে ফেলা, জানালার গ্রিল, পর্দা, গায়ের কাপড় কামড়ে ধরা ইত্যাদি।
‘এ কাজগুলো শিশু পুনরাবৃত্তি করে মজা পায়। ফলে একটা সময়ে এর মধ্যে অনেক কিছু তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, যা সে বড় হলেও তার মধ্যে লক্ষ করা যায়। এটা নিয়ে তখন সে অনেক বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়ে। নিজের অজান্তেই তখন এ অভ্যাস তার সঙ্গী হয়ে যায়।’ শিশুর আচরণগত সমস্যা নিয়ে এভাবেই বলেন মা ও শিশু হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ জামিল সরোয়ার। তিনি আরও বলেন, এই প্রবণতা সাধারণত শুরু হয় শিশু যখন ছয় মাস বয়সে দুধ ছাড়াও নতুন খাবার খায় অথবা নতুন দাঁত উঠলে এবং হাঁটা শিখলে শিশুর মধ্যে এই আচরণগত সমস্যা দেখা যায়।
মোরশেদা বেগমের মতে, অনেক সময় শিশু হিংসাপরায়ণ হয়ে, মা-বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে, পারিবারিক কলহে বা একাকিত্বের কারণে তার মধ্য এ রকম সমস্যা হয়ে থাকে।
তাই শিশুর এসব আচরণগত সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হলে তাকে শুরু থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি। তাকে ধমক না দিয়ে আদর করে বোঝাতে হবে। শিশুকে নিয়ে ছুটিতে ঘুরতে যেতে হবে, পারিবারিকভাবে তাকে মূল্যায়ন করতে হবে। বাসায় নতুন শিশু এলে আগে থেকে তাকে বোঝাতে হবে। অধ্যাপক মোরশেদা বেগমের দেওয়া পরামর্শের সঙ্গে চিকিৎসক জামিল সরোয়ার যুক্ত করেন, এ ক্ষেত্রে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাসায় বিশুদ্ধ বা ফোটানো পানি ব্যবহার করা, শিশুর নখ পরিষ্কার রাখা, প্রয়োজনে তার আঙুলে তেতো কিছু মাখিয়ে রাখা যেতে পারে, যাতে সে আর আঙুল না চোষে। এর পরও যদি শিশুর মধ্য ওই প্রবণতা লক্ষ করেন, সে ক্ষেত্রে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
আর এভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেন আপনার শিশুর আচরণগত ত্রুটি।
হাসান ইমাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০১০
Leave a Reply