জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন। খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
আমার বাবা পারিবারিক বিবাদের কারণে আমার ও মায়ের খোঁজখবর নিতেন না। তিনি আরও একটি বিয়ে করেছেন। আমি মামার সংসারে বড় হই। মামা মারা গেলে আর্থিক অনটনে পড়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে না পেরে আমি ১৪ বছর বয়সে একা একাই বাবার কাছে যাই। বাবা ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রথম দিকে আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেও পরে তাঁরা আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। আমার লেখাপড়ায় বাধা দেন। ওই সংসারে টিকে থাকতে না পেরে আমি আবার মায়ের কাছে ফিরে আসি। মা অনেক কষ্টে আমার লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন। এখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ছি। বাবার কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছি না। বরং তিনি বলেন, আমার মাকে তালাক দেবেন এবং আমাকে নাকি ত্যাজ্য করে দেবেন। তা ছাড়া তিনি সব সম্পত্তি তাঁর বর্তমান স্ত্রী ও ছেলের নামে লিখে দেবেন বলে হুমকি দেন। এখন আমি জানতে চাই, তিনি ইচ্ছে করলেই কি আমাকে ত্যাজ্য করতে পারবেন? বাবা যদি কোনো সম্পত্তি আমাকে না লিখে দেন, তাহলে আমি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব?
রবিউল আলম
লালখানবাজার, চট্টগ্রাম।
মুসলিম আইনে ত্যাজ্য করার কোনো বিধান নেই। এ ছাড়া প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিবাহ মুসলিম আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদানের শাস্তির বিধান বিদ্যমান। আপনার মা ও আপনি আপনার বাবার কাছে ভরণপোষণের অধিকারী। তা ছাড়া আপনার মায়ের দেনমোহরের অর্থ চাহিবামাত্র প্রদানযোগ্য। সুতরাং আপনার মা ভরণপোষণ ও দেনমোহরের জন্য মামলা করতে পারেন।
আমার বাড়িতে যেতে হয় রাস্তার পাশের গলি দিয়ে। আমার এক প্রতিবেশী তাঁর ঘরের দেয়াল এমনভাবে দিয়েছেন যে গলিটি একদম সরু হয়ে গেছে। আমার দাদির মৃতদেহ অনেক কষ্টে ওই সরু গলি দিয়ে নিতে হয়েছিল। আমি আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়াবিবাদ করতে চাই না। করে লাভও নেই। ভবিষ্যতে আবারও এ ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এখন মোটরসাইকেল, চালের বস্তা, আসবাবপত্রসহ নানা জিনিসপত্র বাসায় নিতে আমার চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এখন আমি আইনগতভাবে কী ব্যবস্থা নিতে পারি।
মো. মাইন উদ্দিন
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
আপনি দেওয়ানি আদালতে ‘ইসমেন্ট অধিকার’-এর দাবিতে মামলা করে আদালতের রায় বা ডিক্রিবলে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার অপসারণ করতে পারেন। তবে এ ধরনের মামলা বেশ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। দ্রুত প্রতিকার পেতে হলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারা মোতাবেক গণ-উৎপাত অথবা পাবলিক নুইসেন্স অপসারণের লক্ষ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগপত্র দায়ের করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের অসুবিধা দূর করা সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণের লক্ষ্যে আমাদের সচেতন হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনার দুর্ভোগের আশু সমাধান কামনা করছি।
আমার বাবা মারা যান ১৯৮৮ সালে। তিনি জানতেন না যে, আমাদের গ্রামের বাড়িতে তাঁর নামে ১৪ শতাংশ জায়গা আছে। কিছুদিন আগে আমার বড় চাচা স্বীকার করেন, আমার বাবার মৃত্যুর চার-পাঁচ বছর পর তিনি ওই জায়গা অন্য এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। তবে আজ অবধি তাঁর কোনো বৈধ কাগজপত্র ক্রেতাকে দিতে পারেননি। পুরো জায়গা এখন ওই ক্রেতার দখলে আছে। আমরা জায়গার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না বলে এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমার বাবার এই জায়গাটি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। আমরা এখন কীভাবে আইনের সাহায্য পেতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শংকর, ঢাকা।
আপনি দেওয়ানি আদালতে বিক্রি বাতিল ও দখল হস্তান্তরের মামলা করতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের মামলা কিছুটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। তবে যাবতীয় প্রমাণসহ মামলা পরিচালনা করলে আপনি আপনার বাবার সম্পত্তি ফেরত পাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে একজন অভিজ্ঞ দেওয়ানি উকিলের শরণাপন্ন হতে হবে।
আমি দেশের বাইরে থাকার সময় একবার একটি মাসিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন আমার নজরে আসে। সেখানে কয়েকটি বিজ্ঞাপন ছিল এ রকম—প্রেমে সাফল্য, লটারি জয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনটি দেখে আমি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এক লোক জানান, এতে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমি তাঁকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিই। এভাবে কয়েক দফায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিই।
কিছুদিন পর আবার ৫০ হাজার টাকা চাইলে আমি বুঝতে পারলাম প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি আর টাকা দিইনি। লোকটির বাসার ঠিকানা ও ফোন নম্বর আমার কাছে আছে। টাকা দেওয়ার কাগজপত্রও আছে। তাঁর সম্বন্ধে কিছু তথ্য আমি দেশে এসে জোগাড় করেছি। আমি চাই আমার মতো আর কেউ যেন এমন প্রতারণার শিকার না হয়। আমি কীভাবে আইনের সহায়তা নিতে পারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনি কী কারণে উক্ত ব্যক্তিকে অর্থ দিয়েছেন তা আপনার চিঠিতে উল্লেখ নেই।
ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি যদি তাঁকে অর্থ দিয়ে থাকেন তা ফেরত পাওয়ার আইনগত কোনো উপায় নেই। তবে যিনি অর্থ নিয়েছেন তিনি যদি বিশেষ কারণে অর্থ নিয়ে থাকেন এবং অর্থ নেওয়ার সময় তাঁর ওই কার্য সম্পাদন করার কোনো অভিপ্রায় না থাকে সে ক্ষেত্রে অর্থ নেওয়াটা প্রতারণার আওতায় আসবে এবং দণ্ডবিধি অনুযায়ী আপনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আপনার কষ্টসাধ্য আয় লেনদেনের ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
আমি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছি। আমার বয়স ২৮ বছর। কিছুদিন আগে একজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। তাঁর বয়স ২৪। আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু সমস্যা হলো, ওই ছেলে বাড়িতে আমার ব্যাপারে কথা বললে জানতে পারে তার বাবা-মা তাকে তিন বছর বয়সে দুই বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন।
কিন্তু এ কথা ছেলেমেয়ে কেউ জানে না। পড়ালেখার ক্ষতি হবে বলে তাকে জানানো হয়নি। ছেলেটি বিয়ের কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই মেয়েকে তালাকনামা পাঠায়। কিন্তু তার মা-বাবা আমাকে মেনে নিচ্ছেন না। এখন ছেলেটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, সঙ্গে আমিও। ওই মেয়েটি কি আইনগতভাবে তার স্ত্রী হওয়ার অধিকার পেতে পারে?
উল্লেখ্য, তাদের বিয়ের আইনসম্মত কোনো দলিল নেই। আর এ পর্যায়ে আমি কী করতে পারি?
আমি ছেলেটিকে বিয়ে করতে চাই, সেটি কীভাবে সম্ভব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন ১৯২৯ অনুযায়ী ছোটবেলায় ছেলেটির মা-বাবা যে বিয়েটি সম্পাদন করেছিলেন তা বৈধ বিয়ে নয়। সুতরাং ছেলেটি আপনাকে বিয়ে করতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে আপনার বা ছেলেটির আইনগত কোনো সমস্যা হবে না। আপনি মুসলিম আইন অনুযায়ী ছেলেটিকে বিয়ে করতে পারেন। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের আওতায় এ ধরনের বাল্যবিবাহ পরিচালনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১০
Leave a Reply