দুপুর বেলা ৪৫ মিনিটের একটু ঘুম।
এই ঘুম অনেক উপকারী। স্মৃতি হয় চন্মনে। মনে থাকে অনেক কথা। অবশ্য খুব ভালো করে যদি শেখা যায় তাহলে সেগুলো মনে থাকে স্পষ্ট। দুপুরে একটু ঘুমের এমনই সুফল। নতুন এক গবেষণায় তো তাই জানা গেলো।
এ ধরনের স্মৃতিতকে বলে ‘Declarative memory। বইপত্র পড়ে জ্ঞান যা হয়, সেগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখা হলো এই ‘ডিক্লেরাটিভ মেমোরি’।
আরেক ধরনের স্মৃতি হলো ‘Declarative memory
কোনও কৌশল শিখে মনে ধরে রাখা হলো ‘প্রসিডুরাল মেমোরি’। দিনদুপুরে অল্প সময়ের নিটোল ঘুম ডিক্লেরাটিভ মেমোরিকে উস্কে দেয়। মানুষ তখন স্মরণ করতে পারে বইপত্রের লেখাপড়া, অনেক সহজে।
হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের সেন্টার ফর িম এণ্ড কগ্নিশনে পোস্টডকটরাল ফেলো মুখ্য গবেষক ম্যাথিউএ টাকার বলেন, যা খুব ভালো করে শেখা যায়, সেগুলো মনে রাখার ব্যাপারটা জোরালো করে এই দিবানিদ্রা। তবে জোর করে শেখা যে লেখাপড়া একে মনে ধরে রাখতে তেমন সাহায্য করে না। এই গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হলো ৩৩ জন ব্যক্তিকে, বইপত্র, জ্ঞানঅর্জনের কিছু কাজও দেয়া হলো তাদের (ডিক্লে রাটিভ মেমোরি)। প্রশিক্ষণের শেষে, ১৬জন নিলেন নন-রেম দিবা নিদ্রা, আর ১৭জন থাকলেন জেগে এবং একটি চলচ্চিত্র দর্শন করলেন। সেই দিনেরই শেষে, সব অংশগ্রহণকারীকে টেস্ট করা হলো। টেস্টগুলো হলোঃ কিছু শব্দ স্মরণ হয় কিনা তা টেস্ট করা, গোলকধাঁধা ছবি মনে থাকে কিনা, জটিল একটি রেখাংকন স্মরণ হয় কিনা তাও টেস্ট করা হলো।
টাকারের দল লক্ষ্য করলেন, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন এই মেমোরি টাস্ক মূল্যায়ন করে দেখা গেলো যারা জেগে ছিলেন তারদে তুলনায় যারা দিবানিদ্রা নিয়ে ছিলেন এদের পারফোরম্যান্স ভালো হল। তবে প্রথমতঃ যারা মনদিয়ে পড়া শিখেছিলেন এদের ক্ষেত্রেই দিবানিদ্রার সুফল প্রভাব পড়লোঁ।
সার্বিকভাবে জেগেথাকা দলের লোকদের চেয়ে দিবানিদ্রা নেয়া লোকদের পারফোরম্যান্স ভালো ছিলো। তবে এই তফাৎটি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো না।
টাকারের বক্তব্যঃ “তবে আমরা যখন ব্যক্তিবিশেষে পারফোরম্যান্স লক্ষ্য করেছি প্রশিক্ষণের সময় যারা দিবানিদ্রা নিয়েছিলেন এরা ভালো করেছিলেন।”
এছাড়া দেখা গেলো লোকজন কোন একটি টাস্ক ভালো করনে, সবগুলো নয়।
ফলাফল গুলো ‘ওফণণয’ নামে একটি জর্নালের ১লা ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
টাকারের ধারণা কোন একজন যখন বিশেষ কোনও জিনিস শেখার জন্য প্রণোদিত হন তাহলে দিবানিদ্রা এর স্মৃতিকে করে উজ্জ্বল। স্মৃতি উন্নত করতে দিবানিদ্রার ভূমিকা নিয়ে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল আসছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, সানডিয়াগোর লেবরেটরী অব স্স্নিপ এণ্ড বিহেভিয়াবেল নিউরোসায়েন্সের সহ অধ্যাপক সারা মেড্নিক বলেন, নতুন এই গবেষণাটি স্মৃতি ও শিক্ষা গ্রহণের উপর নিদ্রার প্রতাব সম্বন্ধে আরো একটি প্রমোনিক তথ্য যোগ করলো। তিনি বলেন, ‘‘স্মৃতিকে সংহত করতে নিদ্রা, বিশেষ করে দিবানিদ্রা একটি কৌশল কিভাবে হতে পারে, এ ব্যাপারে তথ্য রয়েছে। তবে সব অংশগ্রহণকারী কিন্তু ঘুমকে একই ভাবে ব্যবহার করেন না।”
তাই দুপুরে একটু ঘুম, মন দিয়ে লেখাপড়া, মনে থাকবে ভালো, পরীক্ষায় ভালো হবে ফল, কেমন হীরের টুকরো ছেলে ও লক্ষ্মী মেয়েরা?
——————-
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুন ২০০৮
Leave a Reply