আমার বড় বোনের বিয়ে হয় ১৯৯৭ সালে। দুলাভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের সংসারে বাবা, তিন বোন, দুই ভাই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে দুলাভাই ছোট। বড় ভাইয়ের সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। দুলাভাইয়ের দুই ছেলে। গত বছর হূদরোগে মারা যান দুলাভাই।
আমার প্রশ্ন, হিন্দু আইন অনুযায়ী, ভাগ্নেরা তাদের ঠাকুরদাদার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে কি না?
তন্ময় কান্তি বাড়ৈ
রাজৈর, মাদারীপুর।
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয় হিন্দু আইনের দায়ভাগা মতে। সেই অনুযায়ী, যেহেতু আপনার ভাগ্নেরা তাদের ঠাকুরদাদার বা পিতামহের সাপিন্ড শ্রেণীভুক্ত, সেহেতু তাদের বাবা জীবিত থাকাকালীন যে পরিমাণ সম্পত্তি লাভ করতেন, সেই পরিমাণ সম্পত্তির অংশ তাদের ঠাকুরদাদার মৃত্যুর পর তারা অধিকারী হবে। তাদের মাতা অর্থাত্ আপনার বোন একপুত্রের সমান অংশ লাভ করবেন।
ছয় বছর আগে কলেজে পড়ার সময় এক হিন্দুধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। কিছুদিন পর কাজি অফিসে আমরা বিবাহ করি; কাগজে ছেলের ধর্ম ইসলাম, ছেলের ডাকনাম এবং বাবার অন্য একটি নাম লেখা হয়। কিছুদিন পর ছেলেটা বলে, এ বিয়ের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এরপর থেকে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এখন আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে কি কোনো সমস্যা হবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কোনো মুসলমান পুরুষ বা নারী কিতাবি ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে বিবাহ করতে পারে না। আপনার চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, হিন্দুধর্মের ছেলে মুসলিম নাম দিয়ে অর্থাত্ ইসলামধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আপনাকে বিবাহ করেছেন। সুতরাং ওই বিবাহ বৈধ হয়েছে এবং আপনাদের ক্ষেত্রে মুসলিম বৈবাহিক আইন বলবত্ হবে। এ পরিস্থিতিতে আপনি ওই বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না করে পুনরায় বিবাহ করতে পারেন না। বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার বিভিন্ন পন্থা আইনে উল্লেখ আছে। তালাক অথবা বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
২০০১ সালে আমি সরকারি চাকরিজীবী তালাকপ্রাপ্ত একজন মহিলাকে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করি। আমাদের বিবাহিত জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। স্ত্রীর আগের স্বামীর ঘরে এক মেয়ে আছে এবং ওই মেয়ের বাবা অর্থাত্ আমার স্ত্রীর আগের স্বামী জীবিত। তার মেয়েটি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জননী। গত বছর আমার স্ত্রী অসুস্থজনিত কারণে মারা যান। মারা যাওয়ার তিন/চার মাস আগেই আমার অজান্তে তার গ্রাচুইটি, পেনশন, ডিপিএস ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নমিনি হিসেবে তার মেয়েকে নির্ধারণ করে যান। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় এই নমিনি আইনগতভাবে কতটুকু কার্যকর?
নূরুল ইসলাম
ময়মনসিংহ।
আপনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, আপনার স্ত্রীর উপার্জিত গ্রাচুইটি, পেনশন, ডিপিএস ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কন্যাকে নমিনি করেছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তিতে আপনি মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, আপনার প্রাপ্য অংশের অধিকারী। এখানে উল্লেখ্য, অস্থাবর সম্পত্তিতে নমিনি কার্যকর হবে না।
মাসখানেক পর আমার দ্বিতীয় বিয়ে হবে। প্রথম ঘরের আমার দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ের বয়স নয় বছর। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে এবং দ্বিতীয় মেয়ের বয়স দেড় বছর। আমার আগের স্বামী সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই ছিল। আমি শ্বশুরবাড়ির মানুষের কাছে লাঞ্ছিত ও হেয়প্রতিপন্ন হতাম। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমাকে মানসিক নির্যাতন করত। ছোট মেয়ের বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে আমার আগের স্বামী যোগাযোগ রাখেনি। মেয়েদের জন্য মানুষের মাধ্যমে খাবার পাঠাত। আমি আর ওই পরিবারে ফিরে যেতে চাই না এবং দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইছি। আমার দ্বিতীয় বিয়ে যার সঙ্গে হবে, সে দুই মেয়ের ভরণপোষণ দিতে চায়। আমার প্রথম স্বামীর পরিবারে আমার দুই মেয়েকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। মেয়েদের বাবা মেয়েদের খুবই ভালোবাসে। কিন্তু ভরণপোষণ দিতে পারবে না, দেখাশোনাও করতে পারবে না। আমার দুই মেয়েকে আমার কাছে রাখতে চায়। কীভাবে আমার দুই মেয়েকে আমার কাছে রাখতে পারব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রামপুরা, ঢাকা।
মুসলিম আইনে একজন বাবা হচ্ছেন সন্তানের আইনানুগ অভিভাবক এবং মা হচ্ছেন সন্তানের হেফাজতকারী। সাধারণত একজন মা তাঁর কন্যাসন্তানকে তার বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত লালন-পালন করতে পারেন। বয়ঃসন্ধির পর অভিভাবকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে সন্তানের স্বার্থ ও কল্যাণ। আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, আপনার কন্যাদের বাবা সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট স্নেহশীল। আপনার কন্যাসন্তানের প্রতি আপনার দ্বিতীয় স্বামীর আচরণ ভালো না-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আবেগের বশবর্তী না হয়ে আপনাকে বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সুতরাং মেয়েদের কাছে রাখার চেয়ে তাদের ভবিষ্যত্ জীবনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন।
আমার বয়স ৩৩ বছর। আমাদের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর আগে। আমার মেয়ের বয়স নয় ও ছেলের বয়স ছয় বছর। আমার স্বামীর চাকরির শেষ দিকে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে। সে অবসর নিয়েছে প্রায় এক বছর হলো। বর্তমানে সে রেশন পাচ্ছে। আমি শুনতে পাই, তিন মাস বা দুই বছর আগে আমার স্বামী ওই মেয়েকে বিয়ে করেছে আমার অনুমতি ছাড়া। সে আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে। বিয়ের কোনো প্রমাণপত্র বা কাবিননামা আমার হাতে আসেনি। এই বিয়ে অবৈধ বা বাতিল করে আমি স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১-এর ৬ ধারা অনুযায়ী দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের আরবিট্রেশন কাউন্সিলের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিনা অনুমতিতে বিয়ের বিরুদ্ধে মামলা করলে আপনার স্বামীর এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয় দণ্ডই হতে পারে। তবে এই বিয়ে অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করার কোনো সুযোগ নেই।
জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন :
পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০১০
বাদল
আমার বিয়ের বয়স ৫বছর আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমার সাথে ঝগড়া করে। এদের কথা হোল আমি আমার স্ত্রী কে নিয়া একা থাকি। কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্বভ নয়। আমার মা আমার স্ত্রীকে কোন ধরনের নির্যাতন করিনি।আমার পারাপ্রতিবেশি সাক্ষী আছে আমি ও তার উপর কোন ধরনের নির্যাতন করিনি। আমার শ্বশুর শাশুড়িকে টাকা পয়সা চুরি করে তাদের বাড়ি দিলে তারা খুশি।আমার স্ত্রী আমার শ্বশুর বাড়িতে থাকে আমার সাথে আমার স্ত্রী যোগাযোগ করছেনা। এখন তারা মহরানা টাকা দাবী করেছে এবং আমাকে তালাক দিতে চায়।আমি আমার স্ত্রী কে তালাক দিতে চাইনা। এখন আমি কি আমার স্ত্রী শ্বশুর শাশুড়ি নামে কোন মামলা করা যাবে । না আমার স্ত্রী আমাকে তালাক দিলেও আমি তাকে মোহর টাকা পরিষদ করতে হবে।আমাদের ছেলেদের জন্য আইনগত কি আছে বিস্তারিত জানতে চাই। আমি প্রবাসে থাকি।তারা এখনি টাকার জন্য চাপ দিচছে।আর না হলে আমার জন্য মামলা করবে।