একটা সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই রাখতে হয় সমান ভূমিকা। যদিও পুরুষশাসিত সমাজে প্রায়শই দায়িত্বের বাড়তি দায় চাপে ঘরকন্যার দায়িত্ব সামলানো স্ত্রী’র উপরই। তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে দৃষ্টিভঙ্গিতেও। আর পরিবর্তিতে এই জীবনযাত্রাকে মসৃণ করে তুলতে প্রথাগত ধারণার বাইরে বেরিয়ে সঠিক দায়িত্ব পালনের দায় রয়েছে স্বামীদেরও। সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে এই কথাটি যেমন সত্যি তেমনি স্বামীরও দায়িত্ব আছে সংসারকে সুখী করে গড়তে। সংসারকে গুছিয়ে তুলতে স্বামীর ভূমিকা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন হাসান মাহমুদ
ঘরে কিংবা বাইরে যেকোনো কাজে স্বামী-স্ত্রী’র সমান অংশগ্রহণের প্রথম শর্তই হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া। আর এজন্য পরিমাপের নিক্তিতে অন্যের ভূমিকাকে সবসময় পরখ না করে রাখতে হবে ছাড় দেয়ার মানসিকতাও। সেই সাথে কে কোন কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কিংবা কোন কাজে কার কখন সাহায্য দরকার সে বিষয়গুলোতেও রাখতে হবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। মনে রাখবেন, একই ছাদের নিচে বাস করার মানে কখনোই এই না যে আপনার যতোটুকু করার দায়িত্ব ছিল এর বাইরে আপনি কিছু করবেন না। কিংবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার কড়া সমালোচনার মাধ্যমেও কিন্তু সম্পর্ক সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বরং এর পরিবর্তে ছোট-বড় যেকোনো কাজে অন্যকে সহায়তার মানসিকতা আর প্রশংসা করতে পারার গুণটিই সংসারে সুখের উৎস হতে পারে।
পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় এমনিতেই ঘরকন্যার কাজের দায়িত্বটা চাপে বাড়ির কর্ত্রীর উপর। তবে আধুনিক এই সময়ে এসে যখন ঘরের পাশাপাশি ঘরের বাইরের কাজ আর কর্মক্ষেত্রেও নারীরা সমানভাবে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন তখন তাদের কাঁধে একতরফাভাবে ঘর ও বাইরের সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়াটা কখনোই সুখী দাম্পত্য জীবনের নিয়ামক হতে পারে না। বরং সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি ঘরে-বাইরের প্রতিটি কাজ সমঝোতার ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিতে পারাটাই হলো যথার্থ স্বামী বা স্ত্রী’র দায়িত্ব।
স্বামী আর স্ত্রী দু’জনই যদি কর্মজীবী হন তাহলে সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে সকালে সময়মতো অফিসে পৌঁছুনোর তাড়া থাকে দু’জনেরই। কাজেই এসব ক্ষেত্রে স্বামী আরাম করে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকবেন আর স্ত্রী ভোরবেলা উঠে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করবেন এমনটা না হওয়াই ভাল। এসব ক্ষেত্রে স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য স্বামীও দু’একটা কাজে হাত লাগাতে পারেন। কিংবা কমসে কম কাজের সময়টায় তার পাশে থাকলেও অনেক সময় মানসিক ভাবে স্বস্তিবোধ করেন স্ত্রী। অন্যদিক যেসব বাসায় কাজের লোক এর উপরই সংসারের ঘর-গেরস্থালি’র দায়িত্ব থাকে সেসব বাড়িতেও সকালে একে অন্যকে ছোটখাটো বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতে পারেন। আবার যদি সন্তানের স্কুলে যাওয়ার বিষয় থাকে তাহলে সন্তানকে স্কুলে যাবার জন্য প্রস্তুত করা বা তাকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার কাজটিও স্বামী ভাগাভাগি করে নিতে পারেন স্ত্রী’র সাথে।
অনেক স্বামীই হয়তো ভাবেন যে সংসার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একমাত্র অর্থ উপার্জনই তার কাজ। তবে এই কাজটির পাশাপাশি স্ত্রী’কে বিভিন্ন কাজে শারীরিক ও মানসিকভাবে সহায়তা করাও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য জরুরি। উদাহরণস্বরূপ অফিসে কাজের ফাঁকে বাসার খোঁজখবর নেয়া বা বাড়িতে কারো কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা জানতে হবে স্বামীকে। একই ভাবে বাড়িতে কার, কখন, কোন জিনিসটি প্রয়োজন সেটি স্ত্রী’র বলার অপেক্ষায় না থেকে নিজেকেই সচেতনভাবে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে যেন কোনোমতেই একঘেঁয়েমির বিষয়টি চলে না আসে সেটি দেখার দায়িত্বও অনেকাংশে স্বামীর উপরই বর্তায়। বিশেষ করে পরিবারের সদস্য কিংবা সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিনগুলো মনে রাখা বা প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে চমৎকার কোনো অবসরের পরিকল্পনা করে দাম্পত্য সম্পর্কে গতি আনতে পারেন স্বামী। এছাড়া ছুটির দিনটিতে স্রেফ নিজের মতো করে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে না বেরিয়ে স্ত্রীকে সময় দেয়া এবং বাড়ির জমে থাকা বিভিন্ন কাজে হাত দেয়াটাও একজন দায়িত্ববান স্বামীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি নিজের বাড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়ি উভয় দিকের আত্মীয়রাই যেন সমান মনোযোগ পান সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই। অহেতুক একে-অন্যের ভুল না ধরে আলোচনার ভিত্তিতে সব সমস্যার সমাধান খোঁজার দিকেও মনোযোগী হতে হবে।
কড়চা’র এই সেশনে মডেল হয়েছেন তারকা দম্পতি ইমন ও বিজরী বরকতউল্লাহ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ১৯, ২০১০
Leave a Reply