‘এ দায়িত্ব আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ’
বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র ওসি ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় কর্মরত হোসনে আরা বেগম। আট মাস আগে যখন তিনি দায়িত্ব নেন তখন অনেকেই শংকিত ছিলেন মহিলা পুলিশ ইন্সপেক্টর কি করে ওসির দায়িত্ব পালন করবেন ? কিন্তু সে আশংকা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন তিনি। ডিএমপির অন্যান্য থানার ওসিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেমেছেন সন্ত্রাসী গ্রেফতার করতে। তার কঠোরতার কারণে তিনি সন্ত্রাসীদের কাছে মূর্তিমান ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। আর এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন ভালবাসা , পেয়েছেন অকুণ্ঠ সমর্থন। এ সময়ে তিনি গ্রেফতার করেছেন শতাধিক সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীকে। উদ্ধার করেছেন অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য।
সাফল্যের উৎস সম্পর্কে হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘কাজই আমার সাফল্যের প্রধান উৎস। ওসির দায়িত্ব গ্রহণ ছিল আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার। কতটা সফল হয়েছি, কতটা পারিনি তা এলাকার জনগণই বিচার করবেন। যা কিছু করার চেষ্টা করছি তা নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই করছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন।’
ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হোসনে আরা বেগম ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ায় পর সবাই ধরে নিয়েছিল হয়ত মাসখানেকের মধ্যে তাকে বিদায় নিতে হবে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও বখাটেরা ভেবেছিল মহিলা ওসি তাদের কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু মাস না যেতেই সবাই বুঝে গেছে তার পেশাগত দক্ষতার কথা। তার ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়েছে। মোড়ে মোড়ে বখাটেদের আনাগোনা কমেছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ইন্সপেক্টর হোসনে আরা বেগম প্রথম মহিলা ওসি হিসেবে ১৮ মে যোগদান করেন ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায়। এর আগে পুলিশ বাহিনীতে কোন মহিলা ইন্সপেক্টর ওসি হিসেবে দায়িত্ব পাননি।
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার পূবাইল গ্রামের মেয়ে হোসনে আরা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আশা পোষণ করছিলেন যে কোন চ্যালেঞ্জিং পেশাকে বেছে নেবেন। গাজীপুর ভাওয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সাইন্সে ভর্তি হন। পড়াকালীনই সুযোগ আসে। পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে পুলিশ বাহিনীতে মহিলা সাব-ইন্সপেক্টরশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। সবার অজান্তেই দরখাস্ত করেন হোসনে আরা। লিখিত পরীক্ষা দেয়ার সময়ই স্বজনরা জানতে পারেন হোসনে আরা পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে পরীক্ষা দিচ্ছে।
১৯৮১ সালে পুলিশ বাহিনীতে সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে যোগদান করেন হোসনে আরা বেগম। মৌলভীবাজারে থাকাকালীন তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হন। পদোন্নতি পাওয়ার পর দায়িত্ব পান স্পেশাল ব্রাঞ্চে। অত্যন্ত সাহসী হোসনে আরা বেগম জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়ে সফলতা প্রমাণ করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্যদের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। সদস্যসংখ্যা ছিল ১৪ জন। এদের মধ্যে ছিলেন ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও ৭ জন কনস্টেবল। পদমর্যাদা ছিল সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল। ৩৫ বছর পথ চলায় এখন সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৯৩৭ জন। এদের মধ্যে একজন ডিআইজি, ৪ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, অতিরিক্ত এসপি ১৯ জন, সিনিয়র এএসপি ১০ জন, এএসপি ৭৭ জন, ইন্সপেক্টর ৫৩ জন, এসআই ১৮৯ জন, এএসআই ও হেড কনস্টেবল ২৫৩ জন ও কনস্টেবল ১ হাজার ৩৩১ জন।
পিনাকি দাসগুপ্ত
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৯, ২০০৯
Leave a Reply