শৌখিন আসবাব ঘরে নিয়ে আসে শৈল্পিকতার ছোঁয়া। তাই দৈনন্দিন গৃহসজ্জায় এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবের পাশাপাশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে শৌখিন আসবাবের বিষয়টিকেও। এখন গৃহসজ্জায় আয়নার ব্যবহার অনেক বেশি। ছিমছাম বসার ঘর থেকে ছোট স্নানঘর—সব ক্ষেত্রেই অন্দরসজ্জায় করা হচ্ছে আয়নার ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের লোকজ সংস্কৃতির আদল, পশু, পাখির নকশায় কাঠ, মাটি, সিরামিকসহ নানা ধরনের উপাদানে তৈরি করা হচ্ছে আয়না। গতানুগতিক নকশা থেকে বেরিয়ে এসে নানা ধরনের পরীক্ষণের ছোঁয়ায় এই আসবাবটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও আসবাবের প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ ধরনের শৌখিন আসবাব দেশীয় মোটিফে আরও নান্দনিক করে তা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউস আড়ং। বৈচিত্র্যময় আয়নার সমাহার রয়েছে তাদের প্রতিটি শোরুম। ‘একটা সময় ছিল যখন আয়না বলতে কাঠের বা প্লাস্টিকের চারকোনা ফ্রেমের ভেতর কাচের আয়নাকে বোঝানো হতো। সেই ধারণা ভেঙে মানুষের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে নিত্যনতুন নকশার আয়না তৈরি করছি আমরা।’ বললেন আড়ংয়ের শোরুম সুপারভাইজার রওশন জাহান। হ্যান্ড পেইন্ট, আর্ট পেইন্ট, টেরাকোটা দরজা আয়না, মাটির টেরাকোটা আয়নাসহ প্রতিটি নকশার আয়নার চাহিদা আছে বলে জানালেন তিনি।
আসবাবের নন্দনতত্ত্ব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষয়ভিত্তিক আয়না তৈরি করছে আসবাব প্রতিষ্ঠান পিঁড়ি কথন। পিঁড়ি কথনের অন্দর ও আসবাব ডিজাইনার দম্পতি জেনিস মাহমুন ও নাসরীন মাহমুন বলেন, ‘একসময় বিদেশি সংস্কৃতির অনুকরণে হারিয়ে যেতে চলেছিল আমাদের দেশীয় আসবাবের নকশা। তাই দেশি এই ধারাটিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ও কর্মোপযোগী প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করছি বিভিন্ন নকশার আয়না।’ এখানে পাবেন বর্ণমালা, সাম্পান, হাতপাখাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যতিক্রমী নকশার আয়না।
এ তো গেল নিত্যনতুন নকশার আয়নার কথা। আয়না দিয়ে কীভাবে সাজাবেন আপনার গৃহকোণটিকে এ বিষয়ে নাসরীন মাহমুন বললেন, শৌখিন এই আসবাবটির ব্যবহার হতে পারে বাড়ির প্রবেশমুখ থেকেই। প্রবেশমুখের ফাঁকা স্থানটিতে দরজার বিপরীত দেয়ালে মাটির টেরাকোটার ফ্রেমের আয়না ঝুলিয়ে রাখা যায়। ঘরে প্রবেশমাত্রই উষ্ণ অভ্যর্থনার অনুভূতি পাওয়া যাবে তাতে। এ ছাড়া বসার ঘরে আয়নার ব্যবহার নিয়ে আসে আভিজাত্যের ছোঁয়া। বসার ঘরের সবচেয়ে বড় দেয়ালটির মাঝামাঝি স্থানে রাখতে পারেন কাঠের ফ্রেমে খোদাই করা লোকজ সংস্কৃতি বা রূপকথার আদলে তৈরি আয়তাকার বড় আয়না। অনেকেই আজকাল বসার ঘরের সিলিংয়ে আয়নার ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি অ্যান্টিকের নকশায় কারুকার্যময় আয়না তৈরি করে তা স্থায়ীভাবে বসিয়ে দিন সিলিংয়ের মধ্যবর্তী স্থানে।
আয়নার ব্যবহারে খাওয়ার ঘর, শোবার ঘর, সাজঘরেও আনা যায় অভিনব সজ্জা। বেসিনের পেছনের দেয়ালটি রং না করে ইটের দেয়ালই রাখুন। এখানে ব্যবহার করতে পারেন মাটির টেরাকোটার আদলে তৈরি সিরামিকসের বেসিন। বেসিনের ওপর দেয়ালের ইটের সঙ্গে মিল রেখে রাখতে পারেন নাটাইসহ মাটির ঘুড়ি-ফ্রেমাকৃতির আয়না। বাড়ির স্নানঘরটি যদি ছোট হয় তাহলে বেসিন ক্যাবিনেটের ওপরে দেয়ালজুড়ে করতে পারেন আয়নার ব্যবহার। এ ধরনের আয়নার ব্যবহারে ছোট স্নানঘরটি পাবে বিশালাকার আমেজ। এ ছাড়া ঘরের প্যাসেজে, পিলার বা জানালার দুই পাশে ধাপে ধাপে সাজিয়ে রাখতে পারেন ছবির ফ্রেম আকৃতির আয়না। আয়না দিয়ে ঘরের দরজাটিকেও সজ্জিত করতে চাইলে আইহোলের দুই পাশে আয়না ঝুলিয়ে তৈরি করতে পারেন ডোর রিং বেল।
আয়নার ডিজাইনে নান্দনিকতা
পিঁড়ি কথনে পাওয়া যাবে বৈচিত্র্যময় আকার ও নকশার আয়না। কোনোটা সাম্পান, কোনোটা হাতপাখা আবার কোনোটা বাংলা বর্ণের আদলে তৈরি।
আড়ং ও যাত্রায় আছে ছোট-বড় নানা আকৃতির আয়না।
মোহাম্মদপুরের আইডিয়া ক্রাফটে বেশ বড় আকারের আয়না পাওয়া যাবে। সেখানে নকশিকাঁথার মাঠ, সূর্য, হাতি, বনজঙ্গল প্রভৃতি অলংকরণে বিশালাকৃতির ফ্রেমের আয়না পাবেন ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। আড়ংয়ে নকশার ওপর নির্ভর করবে আয়নার দাম। সাদামাটা কাঠের ফ্রেমের আয়না ৬৩০-৪০০০ টাকা, কাঠের কারুকাজ করা আয়না ১৫০০০-২০০০০, হ্যান্ড পেইন্টিং লুকিং গ্লাস পাওয়া যাবে ৩৭০-৯০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিষয়ভিত্তিক আয়না তৈরি করতে চাইলে চলে যেতে পারেন পিঁড়ি কথনে। বর্ণমালা আয়না ১৫০০-২০০০ টাকা, সাম্পান ও সাজের আয়না ৩২০০০-৩৫০০০ এবং হাতপাখার আয়না ২০০০ টাকা। এ ছাড়া আজিজ সুপার মার্কেট, যাত্রা ও শিশু একাডেমীতে পাবেন এসব সুদৃশ্য নকশার অলংকরণে আয়না।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১১, ২০০৯
Leave a Reply